রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : আনোয়ারায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণের ঘরে উপকারভোগীরা থাকছেন না। এতে মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নে রাজনীতিক প্রভাব ও যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করায় যাদের নিজস্ব বাড়ি ও জমিজমা রয়েছে, এ ধরনের বেশির ভাগ ব্যক্তি ঘরগুলো বরাদ্দ পান। বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যক্তি ঘরগুলোতে থাকেন না।
এ সুযোগে ফাঁকা ঘরগুলোতে মাদকসেবীসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া ও কিনে নিয়েছেন ঘর।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের আশ্রয়ণের ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার ৪ দফায় ৪১৫ জনকে ২ শতাংশ জমি এবং টিনশেড ঘর হস্তান্তর করে। যার মধ্যে প্রথম দফায় ৬৫টি, দ্বিতীয় দফায় ১৩০টি, তৃতীয় দফায় ১০০টি এবং সর্বশেষ চতুর্থ দফায় ১২০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার বারখাইন আশ্রয়ণের এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় যে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগ এখনো তালাবদ্ধ। মাঝে মাঝে এসে ঘরগুলো দেখে গেলেও স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেনি বেশির ভাগ উপকারভোগী। তবে যারা বসবাস শুরু করেছে, তাদের অভিযোগের শেষ নেই। পর্যাপ্ত পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা ও সাইড ওয়াল না থাকায় মাটিধসসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।
তবে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা হলো পানিতে আয়রন থাকা। ব্যবহারের পানিতে অতিরিক্ত আয়রন থাকায় বাইরে থেকে কিনে পানি খেতে হচ্ছে বলে জানান গুচ্ছগ্রামের উপকারভোগীরা।দেখা যায়, বন্ধ ঘরগুলো একেকটা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে, ঘরের ভেতরে রয়েছে মাদকের নানা উপকরণ। রাতের বেলায় মাদকাসক্তদের কারণে অতিষ্ঠ বসবাসকারীরা। তাই তালাবদ্ধ ঘরগুলো প্রকৃত গৃহহীনদের বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানান তারা।
বদ্ধ ঘরগুলোর সামনেই লেখা রয়েছে মালিকদের নাম্বার। এমনি একটি নম্বরে কল দিলে জানা যায়, ঘরটির মালিক মিনু আক্তার নামের এক মহিলা। ঘরে না থাকার বিষয়ে তিনি জানান, ওরশের কারণে কয়েক দিন ধরে আশ্রয়ণ এলাকা থেকে নিজ বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। যদিও বা প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘরটিতে কেউ বসবাস করেন না।
শুধু মিনু আক্তার নয়, এভাবে প্রত্যেক বন্ধ ঘরের সামনেই রয়েছে যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার। প্রশাসন কিংবা কোনো সাংবাদিক গিয়ে নাম্বারগুলোতে যোগাযোগ করলে তারা নানান অজুহাত দিয়ে থাকেন।
এখানে ঘটছে ঘর বিক্রি করার ঘটনাও। জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক তরুণী বলেন, তার বসবাসরত ঘরটি মূল মালিক থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে আরো টাকা দেওয়ার জন্য তার ওপর চাপ দিচ্ছেন ঘরের মালিক।
আব্দুর রহিম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, রাত হলেই এসব বন্ধ ঘরে বখাটেরা এসে মাদক সেবন করে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, হই-হুল্লোড় চলে। এসব ঘরে ঘটে নারীসংক্রান্ত ঘটনাও। তবে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস হচ্ছে না কারো।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো .মনির হোসেন বলেন, ‘মাদক বন্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। খোঁজখবর নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রুপসীবাংলা৭১/এআর