রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য ঘের, সরকারি খাল-জলাশয় দখল ও প্রকৃতিগত নানা কারণে কমে গেছে নৌকার ব্যববহার। তাই উপজেলার নৌকা বিক্রির হাটগুলোতে হচ্ছে না পূর্বের ন্যায় বেচা-বিক্রি।
সরেজমিনে উপজেলার শত বছরের নৌকার হাটে বিক্রেতাদের এক রকম অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। নেই আগের মতো বাহারি ধরনের নৌকা।
পূর্বে যেখানে শত শত নৌকা নিয়ে বিক্রেতাগণ বসে থাকত, সেখানে এখন গুটি কয়েকজন বিক্রেতা। হাটে নেই ক্রেতাদের তেমন কোনো হাঁকডাক।
পূর্বের চেয়ে বেচা-বিক্রি কম হলেও গত বছরের তুলনায় এ বছর নৌকার দাম বেশি বলে জানিয়েছে জাঠিয়া গ্রামের নরেশ বাড়ৈ।
তিনি বলেন, সুন্দরি ও লোহা কাঠের নৌকা পাওয়া যেত।
একটি নৌকা কিনলে ১৫/২০ বছর ব্যবহার করতে পারতাম। এখন বেশির ভাগ নৌকা রেইন্ট্রি ও মেহগুনি গাছ দিয়ে তৈরি হয়। এ সব নৌকা এক বছরের উপর ব্যবহার করা যায় না। তাই গতবারের নৌকাটি ভেঙে যাওয়ার কারণে এ বছর নতুন একটি নৌকা কিনতে এসেছিলাম।
এখন দেখছি এ বছর দাম অনেক বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকা বিক্রেতা গোপাল ঘরামী বলেন, কাঠ, লোহা ও বাড়ৈদের মুজুরি বৃদ্ধির কারণে আমাদেরকে বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া আগে যেখানে প্রতি হাটে ২০-৩০ টি নৌকা বিক্রি করতাম এখন সেখানে প্রতি হাটে ৩-৪টি নৌকা বিক্রি করি। তাই খরচ পুষিয়ে নিতে আমাদেরকে এবছর একটু বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
নৌকা কম বিক্রির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অপর বিক্রেতা শ্যামল মণ্ডল বলেন, খাল-বিল দখল, অপরিকল্পিত মাছের ঘেরসহ নানা কারণে এখন আর আগের মতো নৌকার ব্যবহার হচ্ছে না।
তাই নৌকা বিক্রি কমেগেছে। শুধু কিছু কিছু ঘের মালিকরা তাদের ঘেরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য নৌকা কিনছেন।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী সজল বালা বলেন, শত বছরের পুরনো ঘাঘর নৌকার হাট নিয়ে নদীকেন্দ্রিক একটি সংস্কৃতিক বলয় তৈরি হয়েছিল। সেটি আর এখন নেই। পূর্বে দেখতাম খাল-বিল দিয়ে গান গাইতে গাইতে নৌকা বেয়ে এই হাটে বিক্রেতারা আসতো। ক্রেতাগণ নৌকা কিনে তারাও একইভাবে আনন্দ করতে করতে বাড়ি যেত। কিন্ত সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। এখন ভ্যান গাড়িতে করে নৌকা নিয়ে হাটে আসে বিক্রি করতে। আবার ক্রেতাগণও নৌকা কিনে একইভাবে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও মাছের ঘের নির্মাণ এবং দখলদারিত্ব আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশকে হত্যা করেছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য কিছুটা হলেও নৌকার প্রচলন ধরে রাখা উচিত। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘নৌকা হচ্ছে এ জনপদের মানুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। একটা সময় এ এলাকায় মানুষদের মাঝে নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার ছিল। কালের পরিক্রমায় নানা কারণে এই নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার কমেগেছে। তাই এ এলাকায় নৌকা তৈরি বা ব্যবহার বাড়াতে উপজেলা প্রশাসের কাছে যদি কেউ কোনো প্রকার সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’
অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি ও খাল বিল দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন শীঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
রুপসীবাংলা৭১/এআর