রুপসীবাংলা ৭১ঃ রাজনৈতিক হত্যা ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
“পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, রাষ্ট্রীয় ও যৌন সন্ত্রাসীদের রুখতে এক হোন” এই স্লোগানে এবং ছাত্র-যুব নেতা বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার, বিচার ও রাষ্ট্রীয় নীলনক্সায় গঠিত ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমূখে বিক্ষোভ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক ৫ সংগঠন। সংগঠনগুলো হচ্ছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
আজ সোমবার (১৯ ফেব্রæয়ারি ২০২৪) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন হয়ে দোয়ের চত্তর ঘুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমূখে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সামনে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। ডিএমপির কোনো এক অনুষ্ঠানের অজুহাতে পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের গতিরোধ করে। এসময় “পাহাড়-সমতলে যৌন সন্ত্রাসীদের রুঁখতে এক হও”, “পার্বত্য চট্টগ্রামে নব্য পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তি সোচ্চার হও”, “বাঙালি জাতীয়তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা মানি না” ও “পাহাড়-প্রকৃতি বাঁচাও, সীমান্ত সড়ক, পাহাড় কাটা ও পাথর উত্তোলন বন্ধ কর”, “শিক্ষার্থীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বন্ধ কর” বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড-ব্যানার প্রদর্শন করে মুহুর্মুহু স্লোগান দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সামনে জিকো ত্রিপুরার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমূখে বিক্ষোভ মিছিল শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অংকন চাকমা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য রতন চাকমা। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরি।
অংকন চাকমা বলেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী রাখা হয়েছে। কিন্তু বিপুল চাকমাদের হত্যার ২ মাস পরেও খুনিদের গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো প্রশাসন খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, গুম করা হচ্ছে। পাহাড় ও সমতলে একদেশে চলছে দুই শাসন। এই ভাষার মাসে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশে বসবাসরত ৪৫টি অধিক জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যন্ত পড়ারও সুযোগ নেই। অপর জাতিসত্তাদের এভাবে দমিয়ে রেখে কোনো জাতি মুক্ত হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচারহীনতা সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে কনিকা দেওয়ান বলেন, ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমা অপহৃত হবার এত বছর পরেও তার চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌসকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। অপরাধীরা নিশ্চিন্তে অপরাধ করছে, কারণ তারা জানে এখানে সত্যিকারের বিচার ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। সেজন্য বিপুলদের হত্যার পর খুনিদের গ্রেফতার না করায় মহালছড়ি ও সাজেক চার ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীতে যারা যুক্ত রয়েছেন, তাদের সেনাবাহিনীর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
ছাত্র-যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে জিকো ত্রিপুরা বলেন, বিপুলসহ ৪ নেতা হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্র ও যুব সমাজের লাগাতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। শাসকগোষ্ঠী মনে করে খুন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া যাবে। পাহাড়িদের যারা বেশি ক্ষতি করতে পারে তাদের সরকারের মন্ত্রীত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্র-যুবকদের এসব দালালদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে এবং তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে ফাহিম আহমেদ চৌধুরি বলেন, বাংলাদেশের কোনো একটা অঞ্চলে সামরিক শাসন জারি রেখে আমরা স্বাধীন হতে পারি না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনী তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছে। সামরিক বাহিনীর মদদপুষ্টরা চাইলেই একজন ছাত্রনেতার জীবন কেড়ে নিতে পারে। বিপুল চাকমাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে নিতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে বিপুল চাকমাসহ চার নেতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার আহ্বান জানান।