রপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : যেভাবে কিয়ামতের বিচারালয়ে মুখ উজ্জ্বল হতে পারে
কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা লোকমান: আয়াত ১৪-১৫
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡهِ ۚ حَمَلَتۡهُ اُمُّهٗ وَهۡنًا عَلٰی وَهۡنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡكُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡكَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ ﴿۱۴﴾
وَ اِنۡ جَاهَدٰكَ عَلٰۤی اَنۡ تُشۡرِكَ بِیۡ مَا لَیۡسَ لَكَ بِهٖ عِلۡمٌ ۙ فَلَا تُطِعۡهُمَا وَ صَاحِبۡهُمَا فِی الدُّنۡیَا مَعۡرُوۡفًا ۫ وَّ اتَّبِعۡ سَبِیۡلَ مَنۡ اَنَابَ اِلَیَّ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَاُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۵﴾
সরল অনুবাদ
(১৪) আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তার স্তন্যপান ছাড়াতে দু বছর অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমারই নিকট (সবার) প্রত্যাবর্তন।
(১৫) তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার অংশী করতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না, তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদভাবে বসবাস কর এবং যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর, অতঃপর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করব।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
এখানে উল্লেখিত প্রথম আয়াতটিতে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন এবং তাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এর হেকমত ও অন্তর্নিহিত রহস্য এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, মা সন্তানকে পৃথিবীর আলোবাতাসে আনতে ও অস্তিত্ব বজায় রাখতে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছেন। নয় মাস উদরে ধারণ করে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে ক্রমবর্ধমান কষ্ট করেছেন।
ভূমিষ্ট হওয়ার পরও দু’বছর পর্যন্ত স্তন্যদানের কঠিন ঝামেলা সহ্য করেছেন। যার ফলে সন্তান দুর্বলতা কাটিয়ে উত্তরোত্তর বেড়ে উঠেছে।
সন্তানের লালন-পালন করার ক্ষেত্রে মাকেই যেহেতু অধিক বুকি-ঝামেলা বহন করতে হয়, সেজন্য শরিয়তে মায়ের স্থান ও অধিকার পিতার অগ্রে রাখা হয়েছে। যদি পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা না হয় তাতে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় না।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ হয় না সে আল্লাহর কাছেও কৃতজ্ঞ হতে পারে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)
আয়াতে এটাও বুঝা যায় যে, শিশুকে দুধ পান করানোর সময় হলো দুই বছর তার অধিক নয়। আর আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, তোমরা তো সর্বশেষ আবার আমারই কাছে ফিরে আসবে।
এখানে উল্লেখিত দ্বিতীয় আয়াতটিতে যেই পিতা-মাতার এতো গুরুত্ব তারাও যদি শিরকের আদেশ করেন; তাহলেও শিরকের পথ অনুসরণ না করে (বিশ্বাসী) মুমিনের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আর বলা হয়েছে; বিশ্বাসীর পথ অনুসরণ এই জন্য করবে যে, অবশেষে তোমাদের সবাইকেই আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে এবং আমারই পক্ষ থেকে সবাইকেই তার ভালো-মন্দ কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে।
যদি তোমরা আমার পথ অনুসরণ করো এবং আমাকে স্মরণ রেখে নিজেদের জীবন পরিচালিত করো, তাহলে কিয়ামতের দিন আমার বিচারালয়ে তোমাদের মুখ উজ্জ্বল হওয়ার আশা করা যায়। পক্ষান্তরে এর বিপরীত কর্মে আমার আযাবে গ্রেপ্তার হবে।
উৎস: তাফসিরে আহসানুল বায়ান থেকে ইষৎ সম্পাদিত।
রপসীবাংলা৭১/এআর