রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। আর এই মাসের দশম দিন, যাকে আমরা আশুরা নামে জানি, তা ইসলামী ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব তাৎপর্য বহন করে। এই দিনে সংঘটিত হয়েছে মুক্তির বিস্ময়, ঈমানের বিজয়, আর তাওহীদের পথে আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। আশুরা কোনো শোক দিবস নয়; বরং এটি ন্যায় ও সত্যের পথে দৃঢ়চিত্তে অটল থাকার দিন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর দেখলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। কারণ, এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে ধ্বংস করে হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বললেন:
«نَحْنُ أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ»
“তোমাদের চেয়ে আমরা মূসার অধিক হকদার।”
(সহিহ বুখারি: ২০০৪)
এরপর তিনি নিজেও রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:
«صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ»
“আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে, আশুরার রোজা আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবে।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
তবে শুধু মহররম মাসের দশ তারিখে রোজা রাখলে তা ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় বলে মহানবী (সা.) বলেন:
«لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لَأَصُومَنَّ التَّاسِعَ»
‘আমি যদি আগামী বছর জীবিত থাকি, তবে অবশ্যই ৯ তারিখেও রোজা রাখব।’
(সহিহ মুসলিম: ১১৩৪)
আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে অনেক কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ এ দিনকে অতি আনন্দের রূপ দেয়, আবার কেউ শোকের মাতমে নিপতিত হয়।
অথচ ইসলামে এই দিনে গায়ে আঘাত, কান্নাকাটি বা শোক উদযাপনের কোনো বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ»
‘সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি গালে চড় মারে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়াতের আহ্বান জানায়।’
(সহিহ বুখারি: ১২৯৪)
তবে একটি করণীয় রয়েছে, যার হাদিসটি দীর্ঘদিন ধরে আলেমদের মাঝে সুপরিচিত:
«مَن وَسَّعَ عَلَى أَهْلِهِ يَومَ عَاشُورَاءَ، وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيهِ سَائِرَ سَنَتِهِ»
‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবার-পরিজনের ওপর খরচে প্রশস্ততা করবে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিক সারা বছর প্রশস্ত করবেন।’
(আল-বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৫১৮)
আশুরার দিন কারবালার শোকময় ঘটনাও মুসলমানদের হৃদয় স্পর্শ করে। প্রিয় নবীর দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-এর শাহাদত স্মরণে মুসলিম মাত্রই কষ্ট অনুভব করতে পারেন, কিন্তু তা শরীয়তের সীমা অতিক্রম করে নয়।
তিনি জুলুমের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে থেকে সত্য ও ন্যায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। সেটিই মূল শিক্ষা।
আসুন, আমরা আশুরার দিন রোজা রেখে, ইবাদতে মনোনিবেশ করে, গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়িয়ে এই দিনের শিক্ষা ধারণ করি। জুলুম, অন্যায়, কুসংস্কার ও বিদআতের বিরুদ্ধে ঈমানের প্রাচীর হয়ে দাঁড়াই।
রুপসীবাংলা৭১/এআর