নিজস্ব প্রতিনিধিঃ “শব্দ করে না পড়ার কারণে শিশুরা একটা কথা বললে আরেকটা কথা খুঁজে পায় না: রূপক সিংহ” বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবস-২০২৪। ‘শব্দ করে পড়ি, নিজেকে আবিষ্কার করি’স্লোগানে জাতীয় প্রেসক্লাবে পালিত হয়েছে এই বিশেষ দিনটি। রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের উদ্যোগে ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দিবসটি উপলক্ষ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শব্দ করে পড়া, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, র্যালি ও সেমিনার ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
দিনের শুরুতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব শব্দ করে পড়া দিবসের কার্যক্রম। পরে প্রেসক্লাব থেকে র্যালি বের হয়ে কদম ফোয়ারা ঘুরে আবার প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়। এরপর একেএকে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, শব্দ করে পড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। সেমিনারে শব্দ করে পড়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বক্তারা। কোমলমতী শিশুদের শব্দ করে পড়তে উৎসাহ দানে নিজ উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ-এর রূপকার জনাব রূপক সিংহ। যার মধ্যে দিয়ে এ মহতী কর্মপ্রচেষ্টা নবীন প্রজন্মের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও অনুষ্ঠানের সভাপতি রূপক সিংহ বলেন, “কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি। শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী। আমার যেটুকু সাধ্য তা করিব আমি।” রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটির মাটির প্রদীপের মতো করে “শব্দ করে পড়ি, নিজেকে আবিস্কার করি” স্লোগানটি আপনাদের কাছে পৌঁছাতে চাই। জাতীয় থেকে গ্রাম পর্যায়ে। সমগ্রদেশ, সকল অবিভাবকের কাছে আমাদের একটাই বার্তা আপনার সন্তানকে শব্দ করে পড়ান। আমরা এখন ডিজিটালের দিকে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছি তাতে আমি আমাদের সন্তানদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্তি তাদের মস্তিষ্ককে শেষ করে দিচ্ছে। আমি আমাদের সন্তানদের অনুরোধ করবো তারা যেনো এই ডিজিটাল উন্নতির থেকে খুঁজে খুঁজে ভালো জিনিষগুলো বেছে নেয়।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের সন্তানরা পড়ার টেবিলে যখন বসে তখন শব্দ করে পড়ে না। সে সঠিক পড়ছে নাকি ভুল পড়ছে সেটা বাবা-মা’রা বুজতে পারে না। তারা যখন কোথাও নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য কোথাও দাঁড়ায় তখন ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না। তার মধ্যে জড়[তা কাজ করে। একটি শব্দ বলার পর আরেকটি শব্দ খুঁজে পায় না। আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো তারা যেনো দিনে-রাতে যেকোনো একটা সময় অন্তত ৩০ মিনিট বা তার অধিক সময় শব্দ করে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, অভিভাবকদের কাছে আমার প্রশ্ন? আমরা কী সচেতনভাবে বাংলা শেখার চেষ্টা করি বা বাংলা উচ্চারণ শিখি, যতটা সচেতনভাবে ইংরেজি ভাষা শেখার চেষ্টা করি? আর যেকোনো ভাষার উচ্চারণ শিখতে হলে শব্দ করে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে আমরা যারা বাঙালি, তাদেরকেই শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ শিখতে শব্দ করে পড়তে হবে। তা নাহলে তো বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ হারিয়ে যাবে। এজন্য আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি বিশেষভাবে বাংলা ভাষা শেখার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এই শব্দ করে পড়ার বিষয়টিকে সেমিনার এবং র্যালি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। সাংবাদিক ভাইদের আমি অনুরোধ করবো আমাদের এই বিষয়টি যেনো শুধু ঢাকায় নয় গ্রামেগঞ্জেও যেনো পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এম আর খান শিশু হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ড. নবকৃষ্ষ ঘোষ সুমন বলেন, শব্দ করে পড়ার বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। আমাদের ব্রেনে যে সেল আছে তা হলো মেমরি সেল। যখন আমরা শব্দ করে পড়ি তখন আমাদের শুধু যে মুখে উচ্চারণ হয় তা নয়! তন্ত্রের ইন্দ্রিয়ও ব্যবহার হয়। ফরে মেমরির লংটাম মনে রাখার যে কৌশল সেটিও রপ্ত হয়। সেজন্য আমি বলবো শব্দ করে পড়ার অনেকগুলো গুন আছে। আমাদের শিশুদের শব্দ করে পড়তে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলা একাডেমির সরকারি পরিচালক আজি গাজী, রহিম আফরোজের আইটি প্রধান সুশান্ত কুমার পাল, নেহাস ক্রিয়েশন এবং ওমেন্স পাওয়ারের চেয়ারম্যান কাজল নেছা, রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের সংগঠক মিরন মন্ডলসহ অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও সেমিনারে অনেক সচেতন অভিভাবককে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।