নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাঙামাটির কাউখালীতে নারী সমাবেশে অংশ নেওয়া অলিউর সান, মারজিয়া প্রভা ও নূজিয়া হাসিন রাশার ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি
রাঙামাটির কাউখালিতে গত ১২ জুন কল্পনা অপহরণের ২৯তম বাষিকীতে আয়োজিত নারী সমাবেশে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার পথে আটকিয়ে ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর সান, এক্টিভিস্ট-অধিকার কর্মী মারজিয়া প্রভা ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা’কে শারীরিকভাবে হেনস্তার প্রতিবাদ এবং চিহ্নিত হামলাকারী ইমরান হোসেন, নাঈম হোসেন হিমেল গংকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ।
আজ সোমবার (১৭ জুন ২০২৫) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ২য় তলাস্থ জহুর হোসেন চৌধুরী হল রুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অলিউর সান, মারজিয়া প্রভা, নূজিয়া হাসিন রাশার ওপর চিহ্নিত হামলাকারী কাউখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নাইম হোসেন হিমেল ও ফাহিমকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার, বাস চালকদের ক্ষতি পূরণ, কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার কার্যকরসহ ৮দফা দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনে সভাপতি নীতি চাকমা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি উষাতন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক অলিউর সান, এক্টিভিস্ট মারজিয়া প্রভা, ছাত্র সংগঠনের নেত্রী নূজিয়া হাসিন রাশা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নীতি চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না করে গত বছর ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল রাঙামাটির কোর্টে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজ করে অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা ‘কল্পনা চাকমাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি’ মর্মে একই ভাষায় রিপোর্ট প্রদানের ভিত্তিতে হাইকোর্ট থেকে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। যা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের কিংবা আর্ন্তজাতিকভাবে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার চাওয়া প্রত্যেক রাজনৈতিক ও মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে প্রতারণা ও তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
শ্রমিক-ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নাগরিকের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশে মব জাস্টিসের নামে মানুষ হত্যা, চিহ্নিত অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের জেলমুক্তি, বম জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নিয়ে কারাগারে হত্যাসহ সংঘটিত অপরাধের বিচারহীন রাষ্ট্রকাঠামো জনজীবনকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভূমি দখল, সেনাশাসন কোনটাই বন্ধ হয়নি। বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনুস ’৯৬ সালে কল্পনা চাকমার অপহরণের ঘটনাকে ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার’ আখ্যা দিয়ে অপহরণকারীদের দায়মুক্তির চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান চিহ্নিত অপহরণকারী অপরাধী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার ও বিচারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না, বলা চলে তার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা প্রকারান্তরে অপরাধীদের আস্কারা দেওয়ার সামিল। এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি বজায় থাকলে দুর্বৃত্তরা আগামীতে এর চাইতেও বড় অপরাধ সংঘটিত করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে ড. ইউনুস এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।
কাউখালীতে হামলার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন নয় মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ২৭ জুন কল্পনা অপহরণের প্রতিবাদে বাঘাইছড়িতে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে পিসিপি’র তিন কর্মী সমর-সুকেশ ও মনোতোষ সেটলার কর্তৃক গুমের শিকার হন। এবারও রাঙামাটির কাউখালিতে অনুষ্ঠিত কল্পনা অপহরণ দিবসে সমাবেশ শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার পথে বেতছড়িতে আমাদের আমন্ত্রিত তিন অতিথি দুর্বৃত্ত কর্তৃক হামলার শিকার হলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে। এটাও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। রাষ্ট্রীয় নীলনক্সা অনুযায়ী এ সব পরিচালিত হচ্ছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও আক্রমণ জারি রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল সেনা শাসনের সম্প্রসারিত রূপই হচ্ছে দেশব্যাপী দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসন।
আমরা মনে করি, দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন, ভূমি বেদখল বন্ধ ও দেশে বসবাসরত ৪৫টির অধিক জাতিসত্তাদের জাতিগত স্বীকৃতির পাশাপাশি কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায় চিহ্নিত লে. ফেরদৌস গংদের বিচার কার্যকর করতে হবে। এছাড়া দেশে বহুজাতি ও বহুভাষার ঐক্যের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নীতি চাকমা আরো বলেন, দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর পূর্তিতে চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস গং-এর সাজার দাবিতে গত ১২ জুন কাউখালীতে আমরা এক নারী সমাবেশ করি। সমাবেশে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে লড়াই সংগ্রামে আমাদের তিন বন্ধু বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা, এক্টিভিস্ট ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা এবং ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক অলিউর সান অতিথি বক্তা হিসেবে যোগ দেন। তাদের পাশে পেয়ে প্রতিকূলতার মধ্যেও সমাবেশ চালিয়ে যেতে আমাদের সহযোদ্ধারা সাহস ও শক্তি পেয়েছে। সমবেত লোকজনও আশ্বস্তবোধ করেছে। ‘পাহাড় কী সমতলে, লড়াই হবে সমান তালে!’ এ শ্লোগান নিছক শ্লোগান নয়। আমরা বাস্তব কর্মসূচীর মাধ্যমে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
লিখিত বক্তব্যে তিন অতিথি বক্তার ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘটনার দিন সমাবেশ বানচালের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর তৎপরতাও বেড়ে যায়। সেনাবাহিনী হুমকিমূলক টহল বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন জনকে নানাভাবে হুমকি দেয়। যানবাহন আটকিয়ে সমাবেশে আগত লোকদের বিভিন্ন জায়গায় হয়রানি করে। এমনকী জিপ ও সিএনজি চালক ১০ জনের গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে সেনা ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে ভয়-ভীতি দেখায়। পরেরদিন অর্থাৎ ১৩ জুন আবার ক্যাম্পে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেয়। আমরা এ ধরনের অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাই, ভুক্তভোগীদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করি। ঘটনার শিকার ১০ জন চালক হলেন- সবুর মিঞা, ইউসুফ, সাবু, আকতার, স্বপন দাস, আলি, সফি, সালাউদ্দিন, নাজিল মং মারমা ও ওসমান।
শুধু তাই নয়, একদিকে সেনাবাহিনীর প্রবল বাধা, অন্যদিকে প্রখর রৌদ্র– এ ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতেও সমাবেশে দুই হাজারের অধিক লোকের সমাগম ঘটে, যার অধিকাংশই ছিলেন নারী। চিহ্নিত অপহরণকারীদের সাজার দাবি এত বছর পরও একটি প্রবল গণদাবি হয়ে রয়েছে, তা এতে স্পষ্ট হয়।
সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে পথিমধ্যে বেতছড়ি নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের আমন্ত্রিত অতিথিদের ওপর হামলে পড়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
হামলার মাধ্যমে কাউখালী এলাকাবাসীকে অপমান করা হয়েছে মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে নীতি চাকমা বলেন, সেদিন কেবল তিন জনকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও অপদস্থই করা হয়নি, আয়োজক হিসেবে আমাদের সংগঠন তথা কাউখালী এলাকাবাসীকেও যারপরনাই অসম্মান, অপদস্থ ও হেয় করা হয়েছে বলে আমরা ধরে নিয়েছি! ‘আমন্ত্রিত অতিথিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা-যত্ন ও তাদের নিরাপত্তা বিধান করা’ পাহাড়িদের সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। এতে ব্যত্যয় ঘটায় আমরা অপমান ও গ্লানিবোধ করছি। আমাদের সহযোদ্ধাদের মধ্যে ক্রোধ জাগ্রত হয়েছে। এলাকায় ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। ১৬ জুন হাটবারের দিন আমরা কাউখালী বাজার বয়কটের ডাকও দিয়েছি। ঘটনার বিচার না হলে আগামীতে আরও প্রোগ্রাম দিতে হতে পারে।
এতে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলে এভাবে নাগরিক অধিকার হরণ, মনুষ্যত্বের অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। এভাবে জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
হামলকারীদের পরিচয়ও সনাক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা হামলা করেছে তারা হলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউখালী ডিগ্রী কলেজ শাখার সভাপতি মো. ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম হোসেন হিমেল এর গং। তাদের আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে, তারা আশির দশকে ফৌজী শাসক জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত ‘সেটলার’। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মদদ ছাড়া এমন ন্যাক্কারজনক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজে দুঃসাহস দেখানো সম্ভব নয়! সমাবেশ চলাকালে অঘটনের আভাস মিলে। গোয়েন্দা সংস্থার লোক আমাদের ওপর নজরদারি করে এবং সমাবেশ শেষে আমাদের আমন্ত্রিত বন্ধুদের অনুসরণ করে।
সেটলারদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জনিয়ে লিখিত বক্তব্য তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনমিতি পরিবর্তনের লক্ষে আশির দশকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমতল অঞ্চল হতে সেটলার নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কারণে বংশপরম্পরার বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত হয়ে পাহাড়িরা ভূমিহারা হয়েছে, অবাধে পাহাড় কাটা-বন উজাড়-রাস্তা ঘাট নির্মাণের ফলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, ভূমিধসের ঘটনা হচ্ছে। আগের মতো পাহাড়ে বন্য পশু-পাখির দেখা মেলে না, এমনকী পাহাড়িদের সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়েছে, নিজেদের এলাকায় পাহাড়িরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। দমন-পীড়নের ঢাল হিসেবে শাসকগোষ্ঠী সেটলাদের ব্যবহার করছে। তাই সঙ্গত কারণেই পাহাড়িদের পক্ষে সেটলারদের মেনে নেয়া সম্ভব নয়। পাহাড়ে পাহাড়ি ও সেটলার বাঙালির মধ্যে কৃত্রিম সংকট রাষ্ট্রই সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ে জাতিগত বিদ্বেষ সন্দেহ ও অবিশ^াস এবং এলাকায় স্থিতিশীলতা আনতে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার হচ্ছে অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি।
লিখিত বক্তব্যে জোর দিয়ে বলা হয়, ‘পুরাতনবস্তী বাঙালিদের সাথে আমাদের কোন বিদ্বেষ বা বিরোধ ছিল না, এখনও নেই। আমাদের পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবিতে তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, তাদেরও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও আমরা আন্দোলন করছে বলে মতপ্রকাশ করেন।’
লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, আমরা কেবল মাত্র সেনা-সেটলারদের বিরুদ্ধে কথা বলছি, তা নয়। আমাদের পাহাড়িদের মধ্যেও একশ্রেণীর বখাটে, উচ্ছৃঙ্খল, দুর্বৃত্ত ও সুযোগ-সন্ধানী রয়েছে যারা শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও সমানভাবে সোচ্চার। গত বছর ১৮ জুন ২০২৪ বাঘাইহাট বাজারে সেনা মদদপুষ্ট ‘মুখোশবাহিনী’ বলে পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে গুরুতর জখম শান্তি পরিবহন বাসের এক হেল্পার মো. নাঈমকে উদ্ধার করে হাসপাতলে পাঠানো হয়। পরে তিনি দীঘিনালা হাসপাতলে মারা যান। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ পাহাড়ের সংগঠনসমূহ কয়েকটি স্থানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল করে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু (১৯) ২০১৬ সালের ২০ মার্চে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষণ ও খুনের শিকার হলে, তার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুল কলেজে ক্লাশ বর্জন করা হয়। কুমিল্লার বিশ^রোডে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশেও হিল উইমেন্স ফেডারেশন অংশগ্রহণ করে। তার আগের বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে ২০১৫ সালে ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে মিছিল করতে গিয়ে আমাদের সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি নিরূপা চাকমা ও কেন্দ্রীয় সদস্য দ্বিতীয়া চাকমা পুলিশের দ্বারা লাঞ্ছিত হন এবং ১৮ দিন কারাভোগ করেন। উক্ত ঘটনায় ১৪ জন কর্মী সমর্থক সেনা-পুলিশের হামলায় গুরুতর জখম হন।
সংবাদ সম্মেলনে গত ১২ জুন কাউখালীতে হামলার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী অলিউর সান ও মারজিয়া প্রভা।
অলিউর সান বলেন, হামলার সময় আমরা হামলাকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাদেরকে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখার হুমকি দেয়। ঘটনার পরে কাউখালি থানার ওসি সাইফুর ইসলামকে ফোন করা হলে, ঘটনাস্থলটি কাউখালি না রাঙ্গুনিয়া থানার আওতাধীন তা বুঝতে না পারার ভাণ করেন। ঈদের ছুটিতে পর্যাপ্ত ফোর্স নাই উল্লেখ করে তিনি পুলিশ পাঠানোর প্রয়োজনবোধ করেননি। নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার একদিন পরে আমরা কাউখালী থানায় অনলাইনে একটি জিডি করেছিলাম। তখনও থানা থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে, ঘটনাস্থল কোন থানায় পড়েছে তারা স্পষ্ট নয়, যার কারণে তারা জিডি গ্রহণ করতে পারছে না।
মার্জিয়া প্রভা বলেন, আমাদেরকে হামলা ও হেনস্তার পর সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই যে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার হুমকি এতেই প্রমাণ হয় যে, সেনাবাহিনী ও হামলাকারীদের মধ্যে একটা যোগসূত্র রয়েছে। তিনি চিহ্নিত হামলাকারী ছাত্রদলের কাউখালী কলেজ শাখার সভাপতি ইমরান হোসেন, নাঈম হোসেন হিমেল গং এর বিচার দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো:
১। চিহ্নিত হামলাকারী কাউখালি সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নাইম হোসেন হিমেল ও ফাহিমকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।
২। বাস চালকদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে এবং তাদের জীবিকা অর্জনের পথ রুদ্ধ করা যাবে না।
৩। টালবাহানা, দায় এড়ানো ও হামলাকারী ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতার জন্য প্রশাসনকে জনসম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে।
৪। কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গঙদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার কার্যকর করতে হবে।
৫। যত্রতত্র সেনা তল্লাশি, হুমকিমূলক টহল ও সাধারণ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৬। সাম্প্রদায়িক উস্কানি বন্ধ করতে হবে।
৭। মৌলিক অধিকার হরণ চলবে না, সভা-সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না।
৮। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার ও সেটলারদের জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনকভাবে সরিয়ে নিতে হবে।