শাহজালাল (রাসেল)ঃ ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং, শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক জাতীয় সমন্বয় কমিটি আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাকে সরকারীকরা, রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো রেজিস্টার্ড ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেন- এর মতো ভাড়া বাড়িতে বেসরকারী বা প্রাইভেট ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু করার অনুমতি প্রদানের দাবীতে জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস। শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব শিক্ষক দিবস-টি পালন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। ২০২৪ সালে শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “কাংখিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭৮ সালে আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থীর যে সংকট তা দূর করতে এবং আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চালু করা হয়েছিল “স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা”। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ১৭.০৮০ টি মাদরাসা নিয়ে যাত্রা শুরু করা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে আর্থিক, একাডেমিক, অবকাঠামো ও পরিবেশগতভাবে পঙ্গু করে রেখেছিল। ১৯৭৮ সালে একই অর্ডিনান্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারি করা হলেও রেজিস্টার্ড ইবতেদায়ীকে সরকারি করা হয় নাই। আজকের এই দিনেও ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন যথাক্রমে ৩,৫০০ ও ৩,৩০০ টাকা মাত্র।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ও ফিডিং ব্যবস্থা থাকলেও ইবতেদায়ী মাদরাসায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছ। আওয়ামী লীগ সরকার ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদেরই শুধু বঞ্চিত ও উপেক্ষিত করেনি মাদরাসা শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
১৮ হাজার ইবতেদায়ী মাদরাসা বিলীন হোতে হোতে আজ ১,৫০০ এর কোটায় এনে দাড় করিয়েছে। ১৬,৫০০ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক চাকুরী হারিয়েছে, শত শত একর জমি মাদরাসার নামে পড়ে আছে, মাদরাসার জন্য তৈরি কোটি কোটি টাকার ঘর দরজা নষ্ট হয়ে গেছে।
জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন আজ আপনাদের নিকট দাবী- যেহেতু সাধারণ শিক্ষার “প্রাথমিক বিদ্যালয়” এবং মাদরাসা শিক্ষার “ইবতেদায়ী মাদরাসা” একই ধারায় সরকার কর্তৃক স্বীকৃত, ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা জাতীয় শিক্ষানীতির অন্তর্ভুক্ত, ইবতেদায়ী মাদরাসার সিলেবাস-কারিকুলাম পাঠ্যপুস্তক এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত, ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা বা চালু করার উদ্দেশ্য ছিল আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধির রিক্রটিং সেন্টার হিসেবে খোলা এবং পর্যায়ক্রমে সরকারি করা, ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘ দিনের, ইবতেদায়ী মাদরাসা সরকারি না করে এ শিক্ষাকে অবহেলা করা হয়, ইবতেদায়ী মাদরাসা সরকারীকরণ বা জাতীয়করণের সকল শর্ত পূরণ করেছে।
দাবি:-
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাকে সরকারীকরণের ঘোষণা দিতে হবে, রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো রেজিস্টার্ড ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিতে হবে এবং বেতন-ভাতাদি দিতে হবে, প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে বাড়ি ভাড়া ও রুম ব্যবস্থপনার শর্তে ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু করার অনুমতি দিতে হবে, প্রতিটি গ্রামে এবং শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সরকারি ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, স্বীকৃত সকল ইবতেদায়ী মাদরাসাকে উপবৃত্তি ও ফিডারের আওতায় আনতে হবে, ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল মাদরাসা তদারকির জন্য পৃথক ডিও এবং এটিও নিয়োগ দিতে হবে, ইবতেদায়ী মাদরাসাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমান সুযোগ-সুবিধ প্রদানে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ডক্টর আবদুছ ছবুর মাতুব্বর, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাদুর রহমান তালুকদার, মাও, নজরুল ইসলাম মাহবুব, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন, প্রিন্সিপাল আব্বাছ উদ্দিন, মোঃ সাইদুর রহমান, মুহাম্মাদ আলতাফ হোসাইন, মুহাম্মাদ আনিসুল হক, মুহাম্মাদ শাহজাহান, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকির হোসাইন, মাও: নজরুল ইসলাম হিরন, মাও: আহমাদ আলী, মোঃ আঃ হামিদ প্রমুখ।