ইকবাল হোসেনঃ সোমবার ১৯ আগষ্ট বাংলাদেশ সচিবালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিসিএস মৎস্য ক্যাডারের বিদ্যমান বৈষম্য দুরীকরণে ১২ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এই দাবি জানান।
মোঃ জাকির হোসেন বলেন, মাছে-ভাতে বাঙালি-এই পরিচয় জাতি হিসেবে আমাদের স্বকিয়তার প্রতীক। দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্য অধিদপ্তরের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্যা স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ২য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ এবং সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাসিয়া আহরণে ৮ম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক রিজার্ভ মৎস্য খাত থেকে অর্জিত হচ্ছে। দেশের মোট জিডিপি’র ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপি’র ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ মৎস্য উপ-খাতের অবদান। পাশাপাশি ১৪ লাখ নারীসহ ১৯৫ লাখ জনগোষ্ঠীর (দেশের জনসংখ্যার ১২%) কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। নিরাপদ আমিষ উৎপাদনের এই কর্মযজ্ঞে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অথচ পদোন্নতি ও সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকায় এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা ও উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে। মেধাবী কর্মকর্তারা দক্ষতা অর্জনের পরেও যথাযথ মুল্যায়ন না পাওয়ায় মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ক্রমহ্রাসমান জলাভূমির কারণে বাংলাদেশের জনগনের চাহিদা মাফিক মৎস্য উৎপাদনের যেই প্রয়োজনীয়তা, তা সংকটে পড়ে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উন্নয়নার্থে এবং বিসিএস মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে চলমান বৈষম্য দূরীকরণে নিম্নোক্ত দাবীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য মহোদয়ের সমীপে আকুল আবেদন জানান।
মো: ফারুক উজ্জামান বলেন,সরকারী চাকুরিতে কোটা বৈষম্য নিরসন এবং সরকারের বিভিন্ন স্তরের বৈষম্যগুলোর বিরুদ্ধে যে ছাত্র জনতার আন্দোলন দেশকে দিয়েছে এক নতুন জন্ম সেই আন্দোলনের হাজার শহীদদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি এবং আহতদের উচ্চতর চিকিৎসাসেবা সহ পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দাবি জানাই। তারুণ্যের জয় সুনিশ্চিত, এই তরুনেরাই দেশের অবিসম্ভাবী পরিবর্তনের প্রতিনিধি, তরুনের এই জাগরণকে শক্তিতে রূপান্তর করে বৈষম্যবিহীন সমাজ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।
এমতাবস্থায় বৈষম্যবিহীন দেশ গঠনে মৎস্য অধিদপ্তরকে একটি আধুনিক, প্রতিনিধিত্বমূলক ও ফলপ্রসু প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপর্যুক্ত দাবিসমুহ বাস্তবায়নের জন্য মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।
বিসিএস মৎস্য ক্যাডারের বিদ্যমান বৈষম্য দুরীকরণে ১২ দফা দাবিসমূহ-
১. সকল গ্রেডে পদোন্নতি-বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা এবং ব্যাচ ভিত্তিক যথাসময়ে পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
২. ২০১৫ সালে অর্গানোগ্রামে সৃজনকৃত ৩৯৫টি মৎস্য সম্প্রসারণ ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পদ বিসিএস (ফিসারিজ) কম্পোজিশন এন্ড ক্যাডার রুলস এ অর্ন্তভুক্ত করা এবং দ্রুত নিয়োগ প্রদান করা।
৩. মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি অবিলম্বে চুড়ান্ত করা।
8.সম্প্রসারণ কার্যক্রম ও মৎস্য আইন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত TO&E-তেঅন্তর্ভুক্ত করে গাড়ীর ব্যবস্থা করা।
৫. প্রশাসনিক জরিমানা করার ক্ষমতা প্রদানপূর্বক মৎস্য আইনসমূহ সংশোধন করে প্রণয়ন করা।
৬. ফিশারিজ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে ফিশারিজ ক্যাডার অফিসার কর্তৃক মৎস্য চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন লেখার ক্ষমতা প্রদান করা।
৭. উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পদকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে রুপান্তর, সিটি কর্পোরেশনে মেট্রোপলিটন মৎস্য কর্মকর্তা পদ অন্তর্ভুক্ত, মৎস্য ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট ডিগ্রীধারীদের মধ্য হতে প্রতি ইউনিয়নে দুইজন করে উপসহকারী মৎস্য অফিসার পদ অর্ন্তভুক্ত এবং ফরেস্ট গার্ডের আদলে ফিশারিজ গার্ড পদ অন্তর্ভুক্ত করে নতুন অর্গানোগ্রামের প্রস্তাব প্রেরণ করা।
৮. অতি দ্রুত চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
৯. ইলিশ সংরক্ষণ এলাকায় সুষ্ঠুভাবে অভিযান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নৌযান ও ঝুঁকি-ভাতা প্রদান করা।
১০. উপজেলা পর্যায়ে ল্যাবসহ প্রশিক্ষন সেন্টার-কাম-মৎস্য ভবন নির্মাণ করা।
১১. তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নিরাপদ আমিষ সরবরাহের নিমিত্তে যুগোপযোগী প্রকল্প গ্রহন করা।
১২. সকল প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং মৎস্য অধিদপ্তরের পূর্ণাঙ্গ জনবল নিশ্চিত করা।
উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন উক্ত সংগঠনের সভাপতি -মোঃ জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক উজ্জামান, উবায়েদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।