নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অবকাঠামো গড়ে ওঠায় গাছ-পালার পরিমাণ কমে নগর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতি বছর। নগরকৃষি এ ক্ষেত্রে একটি সময়োপযোগী সমাধান। বিদ্যালয়গুলোর মাঠে খেলাধূলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নগর কৃষির সূচনা করা হলে কার্যকরী ফলাফল অর্জন সম্ভব। এ লক্ষ্যে রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নগর কৃষি বিষয়ক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সুষ্ঠু নগরায়ন, জলবায়ু বিপর্যয়রোধ ও বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
আজ ৭ জুলাই ২০২৪, সকাল ৮.৩০ টায় হেলথব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “জলবায়ু বিপর্যয়রোধ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নগর কৃষি: শিক্ষার্থীদের ভূমিকা” শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহা’র সঞ্চালনায় এবং রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা’র সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট এন্ড একাডেমিক আহমাদ-আল-মুহাইমিন। আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ তাহাজ্জোত হোসেন, এবং কৃষক মোঃ আমির হামজা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আহমাদ-আল-মুহাইমিন বলেন, মাটির বাস্তুতন্ত্র এবং জলচক্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির যে ক্ষতি সাধিত হয়, তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন করার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক কম্পোস্টিং এবং পারমাকালচারের মত ভালো উদাহরণগুলো আমরা অনুসরণ করবো। পাখি এবং পোকামাকড়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো। আজকের শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের এ কার্যক্রমের আওতায় রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নগর কৃষি বিষয়ক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ কৃষি, কৃষির সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। একজন প্রকৃত কৃষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আমাদের বিশ্বাস এ কার্যক্রমটি শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
তাহাজ্জোত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ এ শিক্ষার্থীদের এমনভাবে শিক্ষিত করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে যেন তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। নগর কৃষি বিষয়ে একজন প্রকৃত কৃষকের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষিত করা হলে তারা সরাসরি কৃষি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থেকে কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। এতে তাদের বাস্তব জীবনের জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। আমি আশা করি, এ কার্যক্রম তাদের জলবায়ু বিপর্যয়, নিরাপদ কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে আরো সচেতন করে তুলবে এবং আজকের কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
মোঃ আমির হামজা বলেন, আমি চাষাবাদের ক্ষেত্রে নিরাপদ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করি। এ বিষয়ে আমার যে জ্ঞান আছে তা আমি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দেয়ার চেষ্টা করবো, যাতে তারা তাদের বিদ্যালয়ের কৃষি কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও টেকসই করে তুলতে পারে। আজকে আমাদের কার্যক্রমের সূচনা হলো। এর পরবর্তীতে আমরা হাতে-কলমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্কুল বাগান গড়ে তুলবো, যেখানে দেশীয় নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদন করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মেহেরুন্নেচ্ছা বলেন, সময়োপযোগী এ আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয় অনেক আনন্দিত। শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের হাতে নিরাপদ কৃষি চর্চা করবে, একদিকে পরিবেশ রক্ষায় সে সচেতন হয়ে উঠবে অন্যদিকে নিজের হাতে সবজি উৎপাদন করবে বলে তার মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, এ কার্যক্রম পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। শিক্ষার্থীরা এ কার্যক্রম থেকে যে জ্ঞান অর্জন করবে তা নিজেদের-পরিবারের তথা সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে।
কর্মশালা শেষে একটি গ্রুপ ওয়ার্কে শিক্ষার্থীরা স্কুলে নগর কৃষি অনুশীলন, উদ্যোগটি টেকসইকরণে পরিকল্পনা, এবং বিদ্যালয়ে নগরকৃষি অনুশীলনের উপকারিতা বিষয়ে তাদের অভিমত তুলে ধরে।