নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিসিএস এর উদ্যোগে ৮ দিনব্যাপী মাদারবোর্ড সারানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সমাপ্ত/ তাইওয়ান পারলে আমরা কেন নয়? – আইসিটি সচিব৩০ মে, বৃহষ্পতিবার, ঢাকা: বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর যৌথ উদ্যোগে আট দিনব্যাপী ‘প্র্যাকটিক্যাল অ্যান্ড ল্যাব বেইজড ওয়ার্কশপ ফোকাস অন নিউ এন্ট্রাপ্রেনিউর/ জব ক্রিয়েশন ইন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সার্ভিসিং’ – তৃতীয় পর্বের সমাপণী অনুষ্ঠান রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।
৩০ মে বৃহষ্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব মো. সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের মধ্যে ‘স্মার্ট পিপল’ অন্যতম। আর স্মার্ট পিপল হবেন আমার সামনে উপবিষ্ট প্রশিক্ষণার্থীরা যারা হাতে কলমে কম্পিউটারের মাদারবোর্ড সারানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। দক্ষতাই হচ্ছে স্মার্টনেস এর পরিচায়ক।
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই ব্যক্তি বা সমাজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারলে আপনি সমৃদ্ধ হবেন। আপনার সাথে সাথে সমাজ এবং দেশ সমৃদ্ধ হবে। সারা পৃথিবীতেই হাতে-কলমে যেসব বিদ্যা শিখানো হয় সেসব বিদ্যার আলাদা কদর থাকে। মাদারবোর্ড সারানোর ক্ষেত্রে যে পরিমাণ দক্ষ জনশক্তির চাহিদা উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে আমাদের দেশেও রয়েছে সে পরিমাণ অভিজ্ঞ লোকবলকে আমরা এখনো প্রস্তুত করতে পারিনি। তাই আপনারা হবেন এই সেক্টরের পথ প্রদর্শক।
আইসিটি সচিব বলেন, তাইওয়ান শুধু তথ্যপ্রযুক্তিকে পুঁজি করে বিশ্বে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মাঝে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। সেমি কন্ডাক্টরের উপর জোর দিয়ে তারা এখন সেমি কন্ডাক্টর উৎপাদনের অন্যতম দেশ। তাইওয়ান পারলে আমরা কেন নয়? তারা তো অন্য গ্রহের বাসিন্দা নন। আমার আর আপনার মতোই মানুষ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের পারতেই হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা এমনসব মাদারবোর্ড এখন সারাতে পারেন যেসব মাদারবোর্ড অন্যদেশের প্রকৌশলী সারাতে ব্যর্থ হন। ই-বর্জ্য হবে এমন অনেক মাদারবোর্ডকে শুধুমাত্র দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণরা ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি পণ্যে পরিণত করেছে। আইটিএস খাতে দক্ষতা বাড়াতে বিসিএস এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করেছে যার ফলাফল হিসেবে এখনি অনেক তরুণ হার্ডওয়্যার রিপেয়ারিংকে নিজেদের উপার্জনের মাধ্যমে পরিণত করতে পেরেছে। মধ্যম সারির এই দক্ষ লোকদের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণও সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিসিএস সহসভাপতি মো. রাশেদ আলী ভূইয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে পড়া অনেক দেশ শুধু সার্ভিস খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের যুব সমাজের কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরাও বিশ্বাস করি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে হার্ডওয়্যার নির্ভর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র পরিচালনা, সংযোজন, প্রতিস্থাপন অথবা মেরামতের ক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজ নিজেদের সম্পৃক্ত করে স্মার্ট বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ প্রমোশন কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল খান বলেন, বিপিসি এবং বিসিএস এর আয়োজনে এই কর্মসূচীর মূল লক্ষ ছিল হাতে কলমে কাজ শেখা। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে এই কর্মসূচীর সাথে অন্তর্ভূক্ত করেছি যেখানে প্রতি পাঁচ জনের জন্য একজন করে প্রশিক্ষক ছিলেন। ইতোমধ্যে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করেছি যেখানে মেশিনের ভাষা বুঝতে পারাটাই অন্যতম যোগ্যতা। মাদারবোর্ড সারানোর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুধু কম্পিউটার মাদারবোর্ড নয়, প্রযুক্তিপণ্যের প্রায় প্রতিটি পণ্যের কার্যপ্রণালী বুঝতে এবং পণ্যগুলোর সমস্যা শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণার্থীরা নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে।
স্বাগত বক্তব্যে নবনির্বাচিত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং বিসিএস মহাসচিব কামরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিসিএস তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে বিসিএস এর কার্যক্রম চলমান। দক্ষ জনশক্তি বিনির্মাণে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে আমার উপজেলাতেও আমি বিসিএস এর মাধ্যমে এমন কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে আশাবাদী।
সমাপণী অনুষ্ঠানে বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব এস.এম ওয়াহিদুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, পরিচালক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হাসান এবং এইচ.এম শাহ্ নেওয়াজসহ প্রশিক্ষকবৃন্দ ও অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, প্রতিপর্বে ২৫ থেকে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে মোট ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে হাতে কলমে কম্পিউটার মাদারবোর্ডের সমস্যা নির্ধারণ ও সমাধান প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র এবং সম্মানী প্রদান করা হয়।