ইকবাল হোসেনঃ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নাটকে সম্পূর্নভাবে তামাকের দৃশ্য দেখানো নিষেধ হওয়া স্বত্বেও নাটকে ধূমপনের দৃশ্যের প্রচার চলছেই। এবং একই সাথে ওটিটি চ্যানেল তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম অথচ এখানে সকল প্রোগ্রামে তামাক ও মাদকের ব্যবহার দেখানো হচ্ছে। যা আমাদের তরুন প্রজন্মের জন্য এল্যামিং এবং তামাক মুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার ভূমিকা পালন করছে বিনোদন মাধ্যম। অতএব অচিরেই ওটিটি কে আইনের বাধ্যবাধ্যকতার আওতায় আনতে হবে। বিনোদন মাধ্যমগুলো প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রচারে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে নাটক সিনেমা প্রচারের বিষয়ে বাধ্যবাধ্যকতা নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী বলে এই মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার ৩০ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে মৌলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট , তামাক বিরোধী নারী জোট এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে আলোচনা সভায় জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিনি এ কথা বলেন।
ডাঃ লেনিন চৌধুরী বলেন,দেশে তামাক ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি বড় অংশ তরুণ। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭ এর প্রখ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে তদুর্ধদের মাঝে আমাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩% যা মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ৭৮ লাখ। ২০১৪ সালে পরিচালিক গ্লোবাল স্কুল-বেজড হেলথ সার্ভে (জিএসএইচএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯.২ শতাংশ। বর্তমানে অনুকরণ, ফ্যাশন, স্মার্টনেস, কৌতুহল, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে তরুণরা ধূমপান ও মাদকে আসক্ত হচ্ছে। যা তামাক ও মাদক ব্যবহারকারীদের আচরণ পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ করে। নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েবসিরিজে জনপ্রিয় তারকাদের মাধ্যমে দ্বারা সিগারেট, মাদক সেবনের দৃশ্য দেখানো হয়।
তিনি আরো বলেন ,বর্তমানে প্রচলিত ক্যাবল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, ওয়েব সিরিজ ও নাটক তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। Global data research farm এর তথ্যনুযায়ী বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দর্শক সংখ্যা ৭০ লাখ। কিন্তু এসব প্ল্যাটফর্মের সিরিজ ও নাটকে সিগারেট ও এলকোহলের দৃশ্য অনেক বেশি দেখানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান ও মদ্যপানের দৃশ্য দেখানোর সময় আইনানুগ সচিত্র সতর্ক বার্তা প্রচার করা হয় না। ধূমপান ও তামাকের ভয়াবহতা রোধে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাশ ও কার্যকর করে। ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ (২০১৩ সালে সংশোধিত) ধারা-৫ (৬) অনুসারে, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রামান্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না: মর্মে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রায়শই নাটক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে এই আইন লংঘন হচ্ছে।
, তিনি বলেন,,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২০২০ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭৫ লক্ষ মাদকাসক্তদের মাঝে ৮০% তরুণ। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাদকের মতো এ্যালকোহলের ব্যবহারকারী তরুণদের সংখ্যাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মাঝে ৮৬% এ্যালকোহল ব্যবহারকারী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২০২০ এর বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্ট অনুসারে দেশে ১৫ বছর বয়সীদের ৪.৫৭% এ্যালকোহল ব্যবহারকারী এবং ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মাঝে ১৭.২৬% এ্যালকোহল ব্যবহারকারী। প্রায়শই জনপ্রিয় তারকা ব্যক্তিদের অনুকরণ করতে গিয়ে সিগারেট ও এ্যালকোহলের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তরুণরা।
তিনি আরো বলেন ,কাহিনীর প্রয়োজনে বললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর সময় আইন ও বিধি অনুযায়ী সচিত্র সতর্কবার্তা প্রচার করা হয় না। বরং বর্তমানে ট্রেন্ড হয়েছে টিভি চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নাটক/সিনেমা/ওয়েবসিরিজের প্রধান চরিত্রের নায়ক বা নায়িকা কে দিয়ে ধূমপানের দৃশ্য প্রচার করা। এটা মূলত, তামাক কোম্পানির তামাকজাত দ্রব্যের একধরনের কৌশলী বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা। এর ফলে কিশোর- তরুণরা তারকাদের অনুকরণ করতে গিয়ে সিগারেটসহ বিভিন্ন আসক্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা রীতি মতো উদ্বেগজনক। তামাক কোম্পানির এই ধরনের প্রচারনা ও প্ররোচনার জন্য নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্ট্রিমিং সার্ভিস ইত্যাদিতে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন এবং তরুণদের প্রভাবিত করতে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে মিডিয়া/সোশ্যাল মিডিয়া আইকন, সেলিব্রেটি/প্রভাবশালীদের।
উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. লেনিন চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা),প্রবন্ধ উপস্থাপন:- সৈয়দা অনন্যা রহমান, হেড অব প্রোগ্রাম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, সভা সঞ্চালনা:- এম এ ওয়াহেদ রাসেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বক্তব্য রাখেন ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) হাফিজুর রহমান ময়না, সহ-সভাপতি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, সম্পাদক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) হেলাল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট আমিনুল ইসলাম সুজন, কোষাধ্যক্ষ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), প্রমুখ।