রুপসীবাংলা৭১ সংখ্যালঘু ডেস্ক : কক্সবাজারের রামু সদরের চৌমুহনী স্টেশন থেকে চেরাংঘাটের পথে ২৫০ মিটার এগোলেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন দুইটি বৌদ্ধ বিহার লালচিং ও সাদাচিং। বৃক্ষ আচ্ছাদিত প্রাচীন স্থাপনাগুলো আজও শৈল্পিক কারুকাজে অনন্য। ভেতরে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রত্ননিদর্শন।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রামুর এই দুইটিসহ ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলায় আরো সাতটি বিহারে হামলা হয়। এতে শতবর্ষী কাঠের বিহার ও প্রত্ননিদর্শন ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে মোট ১৯টি মামলা হয়। একটি মামলা পরে বাদী প্রত্যাহার করে নেন।
১৮টি মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ জন আসামি ছিলেন। এর মধ্যে পুলিশ ৯৯৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। উখিয়ার একটি মামলা পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত। গত ১৭ আগস্ট পিবিআই কক্সবাজার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। যেখানে সাক্ষীর অভাবে মামলার ইতি টানা হয়। বাকি ১৭টি মামলার অভিযোগ গঠন হলেও সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, সাক্ষীদের নোটিশ দিয়েও হাজির করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকটি মামলা নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী সুনীল বড়ুয়া বলেন, “১৩ বছরে সম্প্রীতি ফিরেছে, তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। পুলিশ খেয়াল-খুশি মতো আসামি করেছিল, প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পুনঃতদন্ত জরুরি।”
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলপ্রিয় মহাথের বলেন, “নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে সাক্ষীরা আদালতে যাচ্ছেন না। হামলার ভিডিও ফুটেজ দিয়েই অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে হামলা ঠেকাতে বিহারগুলোতে সরকারের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।”
এদিকে, দিনটিকে স্মরণে রেখে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ, বুডিস্ট সোশ্যাল মুভমেন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন বুদ্ধপূজা, পতাকা উত্তোলন, চিত্র প্রদর্শনী, মহাসংঘদান, ধর্মালোচনা, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

