রুপসীবাংলা ৭১ঃ ঢাকা শহরে খেলার মাঠ অত্যন্ত অপ্রতুল। নগর পরিকল্পনার মানদন্ড অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে ৭৯৫টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে। যে মাঠ-পার্ক আছে তার অধিকাংশই রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে উন্নয়নকৃত মাঠ-পার্কগুলোতে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় শিশু-কিশোররা খেলাধূলার সুযোগ ও স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জায়গা-সময়-অর্থ বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহৃত স্থানে বা কম ব্যস্ত সড়কে এলাকাবাসীর উদ্যোগে সহজেই খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব।
আজ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড” শীর্ষক দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সংস্থার সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুন এবং বক্তব্য রাখেন ছিন্নমূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আকতার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থার সদস্য সচিব মোঃ সেলিম, বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শামীমা সুলতানা, সওয়াব ফাউন্ডেশনের বর্ণমালা ইশকুলের শিক্ষক শান্তা আক্তার, ছায়াতল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী আসমা আক্তার, বিডি এডু টেক এর সিইও মোঃ আসাদুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার বরণী দালবত।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫) এ ৭৪টি উপ-অঞ্চলে, প্রতি ১২,৫০০ মানুষের জন্য ১ একর জায়গা পার্কের জন্য এবং ২ একর জায়গা খেলার মাঠের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪ টি বৃহৎ ইকোপার্ক, এবং ১৪ টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প প্রস্তাবিত আছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, এগুলো অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ কার্যক্রম। এ সময়ের মধ্যে যদি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোর খেলাধূলার সুযোগ ছাড়াই বেড়ে উঠবে, যা তাদের সুষ্ঠু বিকাশে অন্তরায়।
বক্তারা আরো বলেন, সকল উদ্যোগ সরকারের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। শিশু-কিশোরদের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিতে খেলাধূলার সুযোগ তৈরিতে এলাকাবাসীকে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের প্রতিটি এলাকাতেই কিছু না কিছু স্থান রয়েছে যেগুলো স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ স্থানগুলোকে খুব সহজেই সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের খেলার উপযোগী করে তোলা সম্ভব। এছাড়াও এলাকার কিছু কম ব্যস্ত সড়ক থাকে। সেখানে সপ্তাহে এক বা দুই দিন কিছু সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে শিশু-কিশোরদের খেলাধূলা ও এলাকাবাসীর সামাজিকীকরণের ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে।
বক্তারা বলেন, এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে ঢাকা শহরের ৭টি স্থানে সাপ্তাহিক এলাকাভিত্তিক খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা মোবাইল প্লেগ্রাউন্ড এবং গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রম নামে পরিচিত। এ আয়োজনগুলো এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কারণ ৫-৮ বছরের শিশুরা এবং কিশোরীরা, যারা খেলার মাঠে সেভাবে যাওয়ার সুযোগ পায় না, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০০ শিশু খেলাধূলার সুযোগ পাচ্ছে। এ ধরণের কার্যক্রমগুলো আরো ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ঢাকা শহরের এলাকাবাসীকে উপকৃত করা সম্ভব।
সভা থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ড, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ডের নূরজাহান রোড, ৭ নং ওয়ার্ডের রূপনগর এলাকার ১৫ নং ওয়ার্ড, ৩২ নং ওয়ার্ডের লালমাটিয়া এলাকায় এলাকাভিত্তিক খেলাধূলা ও এলাকাবাসীর সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরির পরামর্শ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর প্রতিনিধিবৃন্দ।