রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা লোকমান : আয়াত ৩১-৩২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ الۡفُلۡكَ تَجۡرِیۡ فِی الۡبَحۡرِ بِنِعۡمَتِ اللّٰهِ لِیُرِیَكُمۡ مِّنۡ اٰیٰتِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوۡرٍ ﴿۳۱﴾
وَ اِذَا غَشِیَهُمۡ مَّوۡجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۚ فَلَمَّا نَجّٰهُمۡ اِلَی الۡبَرِّ فَمِنۡهُمۡ مُّقۡتَصِدٌ ؕ وَ مَا یَجۡحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا كُلُّ خَتَّارٍ كَفُوۡرٍ ﴿۳۲﴾
সরল অনুবাদ
(৩১) তুমি কি লক্ষ্য কর না যে আল্লাহর অনুগ্রহে জলযানগুলো সমুদ্রে বিচরণ করে তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য? অবশ্যই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।
(৩২) মেঘমালা সম তরঙ্গমালা যখন ওদের ঢেকে নিতে চায়, তখন ওরা আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ-চিত্ত হয়ে তাঁকে ডাকে। কিন্তু তিনি যখন ওদের কূলে ভিড়িয়ে উদ্ধার করেন, তখন ওদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে। কেবল বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
৩১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে সাগরে ভাসমান বিরাটকায় জলজাহাজ চলাচলও মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ এবং তাঁর অধীনস্থ করার ক্ষমতার একটি নমুনা। তিনি পানি ও হাওয়া উভয়কে এমন অনুকূল অবস্থায় রাখেন, যাতে সমুদ্রের বুকে জাহাজ চলাচল করতে পারে। তা ছাড়া তিনি যদি চান, তাহলে হাওয়ার প্রবলতা ও ঢেউয়ের উত্তালে জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে যাবে।
আয়াতে এর পরই বলা হচ্ছে যে সাগরে আল্লাহর এই অনুগ্রহ নিশ্চয়ই কষ্টে ধৈর্যধারণকারী এবং সুখ ও খুশির সময় আল্লাহর শুকরকারী ব্যক্তির জন্য বড় এক নিদর্শন, যা থেকে সে মহান রবের মহত্ত্বের শিক্ষা গ্রহণ করে।
৩২ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে যখন তাদের জলজাহাজকে মেঘ ও পাহাড়ের মতো ঢেউ এসে ঘিরে নেয় এবং মৃত্যু তাদের গ্রাস করে ফেলছে মনে হয়, তখন পৃথিবীর সব উপাস্য তাদের মন থেকে মুছে যায় এবং একমাত্র আসমানী উপাস্যকে তারা ডাকতে শুরু করে, যিনি প্রকৃত ও বাস্তব উপাস্য।
কেউ কেউ আয়াতে উল্লিখিত (مقتصدٌ)-এর অর্থ ‘অঙ্গীকার পালনকারী’ বলেছেন। অর্থাৎ অনেকে ঈমান, তাওহিদ ও আনুগত্যের যে অঙ্গীকার সামুদ্রিক তুফানি ঢেউয়ের সময় করেছিল, তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাদের কাছে ওই বাক্যে কিছু শব্দ উহ্য আছে, আর তা হলো— (فمنهم مقتصدٌ ومنهم كافرٌ) অর্থাৎ তখন ওদের মধ্যে কেউ বিশ্বাসী হয় এবং কেউ অবিশ্বাসী হয়।
(ফাতহুল ক্বাদীর) অন্য মুফাসসিরদের কাছে এর অর্থ হলো— ‘মধ্যম পন্থা অবলম্বনকারী’ আর তা আপত্তিস্বরূপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন সংকটময় অবস্থা ও আল্লাহর এমন বৃহৎ নিদর্শন চাক্ষুষ দর্শন করে এবং পরিত্রাণ স্বরূপ আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার পরেও মানুষ এখনো আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত ও আনুগত্য করে না; বরং মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে? অথচ যে পরিস্থিতির সম্মুখীন সে হয়েছিল, তাতে পরিপূর্ণ ইবাদতে রত হওয়ার কথা ছিল; মধ্যবর্তী ইবাদতে রত হওয়ার কথা নয়। (ইবনে কাসীর) তবে প্রথমোক্ত অর্থটিই পূর্বাপর বাগধারার সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যশীল।
আয়াতে উল্লিখিত ختاَّر-এর অর্থ হলো বিশ্বাসঘাতক, চুক্তি ভঙ্গকারী, كَفُوْر অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি।
উৎস : তাফসিরে আহসানুল বয়ান থেকে ইষৎ সম্পাদিত।
রুপসীবাংলা৭১/এআর