রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা লোকমান : আয়াত ৩৩-৩৪
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّكُمۡ وَ اخۡشَوۡا یَوۡمًا لَّا یَجۡزِیۡ وَالِدٌ عَنۡ وَّلَدِهٖ ۫ وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ هُوَ جَازٍ عَنۡ وَّالِدِهٖ شَیۡئًا ؕ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَ لَا یَغُرَّنَّكُمۡ بِاللّٰهِ الۡغَرُوۡرُ ﴿۳۳﴾
اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدًا ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۳۴﴾
সরল অনুবাদ
(৩৩) হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং সেদিনকে ভয় কর, যেদিন পিতা সন্তানের কোনো উপকারে আসবে না, সন্তানও তার পিতার কোনো উপকারে আসবে না। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং শয়তান যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে।
(৩৪) নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই আছে কিয়ামতের জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে যা আছে।
কেউ জানে না আগামী কাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
৩৩ নং আয়াতে جازٍ শব্দটি ইসমে ফায়েল (কর্তৃকারক)। এর উৎপত্তি হল جزى يجزي থেকে।
এর অর্থ বদলা দেওয়া। উদ্দেশ্য এই যে, যদি পিতা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবর্তে নিজেকে অথবা ছেলে পিতার পরিবর্তে নিজেকে মুক্তিপণরূপে পেশ করতে চায়, কিংবা নিজের সাওয়াব দিতে চায়; তবুও সেখানে তা সম্ভব হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আপন কর্মের ফল ভোগ করতে হবে। যখন পিতা-পুত্র একে অপরের কোনো কাজে আসবে না, তখন অন্যান্য আত্মীয়দের আর কি ক্ষমতা? কিংবা পীর মুরিদ যাদেরকে অনেকেই পরকালের ভরসা মনে করে; তারা কিভাবে একে অপরকে উপকৃত করতে পারবে? নবী ইবরাহীম (আ.) নিজ পিতা এবং নূহ (আ.) নিজ ছেলের কোনোই উপকার করতে পারবেন না।
লূত (আ.) কি নিজ নিজ স্ত্রীর কোনো কাজে আসবেন না। তাহলে যাদের সাথে কোনো আত্মীয়তাই নেই তারা কিভাবে অন্যের উপকার সাধন করতে পারবে?
৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে. গায়েবের চাবিকাঠি হল পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ অবগত নন। এটি সহিহ হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে। (বুখারীঃ সূরা লুকমানের তফসীর, ইস্তিস্কা অধ্যায়)। সেই পাঁচটি বিষয় হচ্ছে-
(১) কিয়ামত কখন হবে? কিয়ামতের নিকটবর্তী কিছু নিদর্শন মহানবী (সা.) বলেছেন; কিন্তু কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঠিক সময় নিশ্চিতরূপে একমাত্র আল্লাহই জানেন, তা কোনো ফিরিশতা জানেন না এবং কোনো প্রেরিত নবীও না।
(২) বৃষ্টি কখন কোথায় হবে? মেঘের চিহ্ন ও অনুকূল হাওয়া দেখে আন্দাজ লাগানো হয় বা লাগানো যায় যে, অমুক এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এ কথা সবাই জানে যে, এই আন্দাজ কখনো সঠিক হয় আবার কখনো বেঠিক। এমনকি আবহাওয়া দপ্তরের প্রচারিত খবর অনেক সময় সঠিক হয় না। যাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, বৃষ্টি কোথায় কখন হবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
(৩) মাতৃগর্ভে কি আছে? বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে সম্ভবতঃ অসম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যেতে পারে যে, তা ছেলে না মেয়ে। কিন্তু মাতৃগর্ভের এই বাচ্চা সৎ না অসৎ, সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান, পূর্ণ না অপূর্ণ, বিকলাঙ্গ না অবিকলাঙ্গ, সুশ্রী না কুশ্রী হবে ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
(৪) মানুষ আগামী কাল কি করবে? তা দ্বীনী বিষয় হোক বা পার্থিব বিষয়, কেউ আগামী কালের বিষয়ে জ্ঞান রাখে না যে, আগামী কাল পর্যন্ত তার জীবন থাকবে কি না? আর যদি থাকে, তাহলে সে তাতে কি আমল করবে?
(৫) মৃত্যু কোথায় হবে? ঘরে না বাইরে, স্বদেশে না বিদেশে, যুবক অবস্থায় না বৃদ্ধাবস্থায়, নিজের আশা ও চাহিদা পূর্ণ হওয়ার পর নাকি তার পূর্বে? এ সব কেউ জানে না।
উৎস : তাফসিরে আহসানুল বয়ান থেকে ইষৎ সম্পাদিত।
রুপসীবাংলা৭১/এআর