রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট আমরা মোবাইলে কাটাই, প্রায় ৫৮ বার মোবাইল চেক করি। নিজেদের বলি, এটি সামাজিক যোগাযোগ, কাজ কিংবা খবর পড়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা আসক্ত, এবং তা আমরা জানি।
সোমবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
কতটা বড় সমস্যা?
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ স্বীকার করেছেন, তারা মোবাইল আসক্তিতে ভুগছেন। যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী জাহির হোসেন বলেন, ‘মোবাইলের সমস্যাজনক ব্যবহার অনেকের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলোর, যেমন হতাশা ও উদ্বেগের সম্পর্ক রয়েছে।’
মোবাইল আসক্তি দূর করতে চাইলে অনেকে ধূমপান ছাড়ার মতো কঠিন মানসিক যুদ্ধে পড়েন। সামাজিক অ্যাপ, একঘেয়েমি, দৈনন্দিন অভ্যাস আমাদের অজান্তেই বারবার মোবাইলের দিকে হাত বাড়াতে বাধ্য করে।
শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কী কী?
মোবাইল আসক্তির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত, চোখের চাপ, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়। মানসিকভাবে এটি হতাশা, উদ্বেগ, একাকীত্ব তৈরি করে এবং মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করে, বিশেষত কিশোরদের মধ্যে। আসক্তির কারণও হতে পারে মানসিক চাপ ও একাকীত্ব। তাই আসক্তি দূর করলে মানসিক সমস্যাগুলোও হ্রাস পেতে পারে।
কেন আসক্ত হচ্ছি?
মোবাইল আসক্তি এক ধরনের আচরণগত আসক্তি, যেখানে কোনো নেশার পদার্থ না থাকলেও (যেমন মাদক), মস্তিষ্কে নেশার মতো প্রভাব তৈরি করে। অনেকে পারিবারিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে, হতাশা বা উদ্বেগ ভুলতে মোবাইলে ডুবে যান।
তবে আসক্তি দূর করতে হলে আগে জানতে হবে কেন এই আসক্তি তৈরি হয়েছে।
কীভাবে কমাবেন মোবাইলের ব্যবহার?
মোবাইল আসক্তি দূর করার তাত্ক্ষণিক কোনো সমাধান নেই। বিভিন্ন মানুষের জন্য পদ্ধতিও ভিন্ন। বিজ্ঞানীরা কিছু প্রমাণিত উপায় বলেছেন, যেমন:
১. রাতের সময় মোবাইল বাইরে রেখে ঘুমানো বা হাতের নাগালের বাইরে রাখা
২. পড়াশোনা বা কাজের সময় অন্য ঘরে রাখা
৩. নোটিফিকেশন কমানো, ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ ব্যবহার করা
৪. স্ক্রিনকে সাদাকালো করে রাখা, হোম স্ক্রিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সরিয়ে রাখা
৫. লম্বা পাসকোড ব্যবহার করে মোবাইল ব্যবহারকে জটিল করা
‘স্পেস’, ‘ফরেস্ট’, ‘ফ্লিপড’, ‘স্ক্রিনটাইম’–এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে দৈনিক ব্যবহারের সময় সীমিত করা, মনোযোগ নষ্টকারী অ্যাপ লক করে রাখা এবং অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞান কী বলছে?
একসাথে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে মোবাইল আসক্তি দূর করার সুযোগ বাড়ে। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আসক্তি মনোবিজ্ঞানী জে ওলসন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, দশ ধাপের ‘নাজ-ভিত্তিক’ হস্তক্ষেপ পদ্ধতি মোবাইলের ব্যবহারকে কমিয়ে আনে। এতে ফোনের ব্যবহার অস্বস্তিকর করে তোলা, ব্যবহারে ঘর্ষণ তৈরি করা এবং নোটিফিকেশন কমানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত ফল পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে শারীরিক কাজকর্ম, যেমন হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা, ব্যায়াম মোবাইল ব্যবহারের বিকল্প হতে পারে এবং একাকীত্ব ও উদ্বেগ কমায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়াও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কখন সহায়তা নেবেন?
মোবাইলের ব্যবহার যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক বা দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তবে পেশাদার সহায়তা নেয়ার সময় হয়েছে। মনন ও আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) আপনাকে ধাপে ধাপে মোবাইলের প্রতি নির্ভরশীলতা কমাতে এবং এর মূল কারণ খুঁজে সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করবে।
রুপসীবাংলা৭১/এআর