রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে প্রায়ই দেখা যায়, প্রযুক্তি মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। খারাপ রোবট, মারাত্মক রশ্মি কিংবা ল্যাবে তৈরি অদ্ভুত দানব যেন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ হারানোর গল্পই বলে। এগুলো নিছক গল্প হলেও মানুষের মধ্যে প্রযুক্তিভীতির সূক্ষ্ম প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এসব কাহিনিতে। অথচ বাস্তব জীবনে প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ঠিক উলটো-মানুষের জীবনকে সহজ, আরামদায়ক ও কার্যকর করে তোলা।
আকাশে উড়োজাহাজ যেমন দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে, তেমনি ইন্টারনেট তথ্য ও যোগাযোগের গতিপথ বদলে দিয়েছে। আর জিপিএস আমাদের কাঁধ থেকে ভারী মানচিত্রের ঝামেলা সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তবুও কখনো কখনো এ প্রযুক্তিরাই হয়ে ওঠে বিপদের কারণ-তা হয় তাদের ত্রুটির জন্য, ব্যবহারকারীর অসতর্কতায় কিংবা মানুষেরই অন্যায় উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ফলে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যায় এক রীতিমতো ভয়াবহ ঘটনা। মহামারির সময় ঘরে বসে এক শিশু ও তার মা অ্যামাজনের ডিজিটাল সহকারী ‘অ্যালেক্সা’কে একটি খেলার মতো চ্যালেঞ্জ দিতে বলেন। কিন্তু অ্যালেক্সা যা পরামর্শ দেয়, তাতে অবাক মা! সে বলে, একটি চার্জার আউটলেটে অর্ধেক ঢুকিয়ে তাতে পয়সা ছোঁয়াতে। শিশুর সচেতনতা ও মায়ের দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় বিপদ এড়ানো যায় বটে, কিন্তু এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয়-সবচেয়ে স্মার্ট যন্ত্রটিও কখনো কখনো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরও ভয়ংকর ছিল ১৯৭৯ সালের একটি ঘটনা, যেখানে রোবট হয়ে ওঠে মৃত্যুদূত। ফোর্ড মোটর কোম্পানির এক কর্মী রবার্ট উইলিয়ামস একটি রোবটের সঙ্গে কাজ করতেন। যন্ত্রাংশ নিতে গিয়ে রোবটের বাহুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এটি ইতিহাসে রোবটজনিত প্রথম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
এদিকে, পথনির্দেশক জিপিএসও যে সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৬ সালে কানাডার এক ঘটনায়। ঘন কুয়াশা আর ঝড়ের রাতে এক নারী গাড়ি চালাতে গিয়ে পুরোপুরি জিপিএসের ওপর নির্ভর করেন। ফলাফল-গাড়ি গিয়ে পড়ে হ্রদের পানিতে। ভাগ্য ভালো, জানালা দিয়ে বের হয়ে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
সবচেয়ে আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৯ সালেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। হঠাৎই সতর্কতা দেখা দিল-সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসছে হাজারও ক্ষেপণাস্ত্র! প্রেসিডেন্টকে পালটা আক্রমণের প্রস্তুতির পরামর্শ দেওয়ার ঠিক আগে ধরা পড়ে, এটি ছিল একটি প্রশিক্ষণ ভিডিও, যা ভুল করে মূল সিস্টেমে চালু হয়েছিল।
এসব ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা হলেও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, এর পেছনে দায়ী মানুষ। আর মানুষের ভুল, অবহেলা বা অতি নির্ভরতাই প্রযুক্তিকে বিপজ্জনক করে তুলতে পারে।
স্মার্ট যুগে প্রযুক্তির সহচরতা যেমন অপরিহার্য, তেমনি সচেতন ব্যবহারের বিকল্পও নেই। প্রযুক্তি যদি হয় তলোয়ার, তবে দায়িত্বশীল ব্যবহারই তার মুঠো। আর তা না হলে-একটি ভুল ক্লিকেই শুরু হতে পারে সর্বনাশের গল্প।
রুপসীবাংলা৭১/এআর