রুপসীবাংলা ৭১ অন্যান্য ডেস্ক : কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা লোকমান : আয়াত ১৮-১৯
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
وَ لَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ﴿ۚ۱۸﴾
وَ اقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِكَ وَ اغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِكَ ؕ اِنَّ اَنۡكَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ ﴿۱۹﴾
সরল অনুবাদ
(১৮) মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।
(১৯) তুমি তোমার চলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু কর; স্বরের মধ্যে গাধার সুরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
আয়াতে লোকমান হাকিম তাঁর পুত্রকে উপদেশ দেয়ার ধারাবাহিকতায় বলছেন যে, অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না। এমন অহংকার করো না; যাতে তুমি মানুষকে তুচ্ছ ভাবো ও তাকে ঘৃণা কর ।
কোনো মানুষ তোমার সাথে কথা বললে তার থেকে বৈমুখ হয়োনা অথবা কথোপকথনের সময় নিজ মুখমন্ডলকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রেখোনা। আয়াতে উল্লেখিত صعر শব্দের অর্থ হচ্ছে এমন এক প্রকার ব্যাধি; যা উটের মাথা অথবা ঘাড়ে হয় এবং যার ফলে সেই উটের ঘাড় বাঁকা হয়ে যায়। এখানে অহংকার হেতু মুখ ফিরিয়ে নেওয়া (বা মুখ বাঁকানো)র অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। (ইবনে কাসীর)
আয়াতে “উদ্ধতভাবে বিচরণ” বলতে বুঝানো হয়েছে এমন বিচরণ ও চালচলন; যাতে ধন-সম্পদ, পদ বা বংশ মর্যাদা অথবা শক্তিমত্তা, ক্ষমতার বড়াই ও অহংকার ফুটে ওঠে।
এসব আল্লাহ পছন্দ করেন না। কারণ মানুষ একজন অক্ষম ও নগণ্য বান্দা মাত্র। তাই আল্লাহ তায়ালা এটাই পছন্দ করেন যে, সে নিজের মান ও অবস্থা অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে এবং তা অতিক্রম করে অহংকার প্রদর্শন করবে না। কারণ গর্ব ও অহংকার শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই শোভনীয়; যিনি সকল এখতিয়ারের মালিক এবং সকল গুণের অধিকারী।
এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘ মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬২০) অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে- ‘‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার আছে।’’ (আহমাদ: ১/৪১২)
পরের আয়াতে “চলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন” বলতে বুঝানো হয়েছে যে, চলন যেন এমন ধীর গতির না হয়, যাতে দেখে অসুস্থ মনে হয় এবং এমন দ্রুত গতিরও না হয়, যা সম্ভ্রম ও গাম্ভীর্যের পরিপন্থী হয়। এ কথাকে অন্য জায়গায় এভাবে বলা হয়েছে, (يَمْشُوْنَ عَلَى الاَرْضِ هَوْنًا) ‘‘(আল্লাহর বান্দাগণ) পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’’ (সূরা ফুরকান ৬৩ আয়াত)
এর পরই উচু আওয়াতে কথা বলতে নিষেধ করে বলা হয়েছে যে, উচ্চ স্বরে (চিৎকার করে) কথা বলবে না। কারণ বেশি চিৎকার করে কথা বলা যদি পছন্দনীয় হত ‘ তাহলে গাধার আওয়াজ সব থেকে উত্তম গণ্য হতো। কিন্তু তা হয় না; বরং গাধার আওয়াজ সর্বনিকৃষ্ট ও সকলের কাছে অপছন্দনীয়। এই জন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘গাধার চিৎকার শুনলে শয়তান থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করো।’’ (বুখারি, বাদউল খালক অধ্যায়)
উৎস : তাফসিরে আহসানুল বায়ান থেকে ইষৎ সম্পাদিত।
রুপসীবাংলা ৭১/এআর