রুপসীবাংলা৭১ ক্রীড়া ডেস্ক : লুইস এনরিকের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন—এ যেন এক ফুটবল দানবের নাম! এই স্প্যানিশ কোচের হাত ধরে এক বছরেই পাল্টে গেছে এই ক্লাবের পরিচিতি। এক সময়ের ‘তারকা নির্ভর অহঙ্কারী দল’ এখন ইউরোপের ভয়ংকরতম ফুটবল যন্ত্র। সর্বশেষ রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে ফরাসি জায়ান্টরা।মাত্র ৫ সপ্তাহ আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পিএসজি।
সেই গতি, সেই তীব্রতা, সেই নিখুঁত প্রেসিং—সবকিছু অব্যাহত রয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপেও। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ এবং রিয়ালের মতো পরাশক্তিদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তারা, তাও এমন দাপট নিয়ে যে সমালোচকরাও এখন স্তব্ধ।
রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই পিএসজির আক্রমণের ঝড়। ২৪ মিনিটের মধ্যেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা—দুইটি গোল ফাবিয়ান রুইজের, আর একটি ওসমান দেম্বেলের।
শেষদিকে গঞ্জালো রামোসের গোলে ৪-০ ব্যবধান নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে সাবেক ইংলিশ তারকা আন্দ্রোস টাউনসেন্ড বলেন, ‘লুইস এনরিক একটা দানব তৈরি করেছেন।’ সাবেক রিয়াল তারকা গ্যারেথ বেল তো সরাসরি মন্তব্য করলেন, ‘ওরা একটা যুগ গড়তে যাচ্ছে। ভয়ংকর দ্রুত, অক্লান্ত এবং প্রতিপক্ষকে লজ্জা দিতেই যেন মাঠে নামে।’
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে, যে পিএসজিকে বহু ফুটবলপ্রেমী ঘৃণা করত তাদের ‘ইগো’ এবং ব্যক্তিনির্ভরতার কারণে, সেই দল এখন সবচেয়ে উপভোগ্য ফুটবল খেলা দল। কী দুর্ভাগ্য মেসি-এমবাপ্পের জন্য! একজনের ইন্টার মায়ামিকে পিএসজি ৪-০ গোলে হারিয়েছে শেষ ষোলোয়, আর আরেকজনের রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দিয়েছে সেমিতে।
এনরিকে এখন গড়ে তুলেছেন এক তরুণ, ক্ষুধার্ত দল—যারা কেবলই খেলছে না, শাসন করছে। দেম্বেলে, দেজিরে দুয়ে, খভিচা কভারাস্কেলিয়া—তিনজনেই বেগবান, বিদ্যুৎ গতির। মাঝমাঠে ভিতিনিয়া, জোয়াও নেভেস আর ফাবিয়ান রুইজের সমন্বয় যেন নিখুঁত এক অর্কেস্ট্রা।
পিএসজির মাঝমাঠ নিয়ে সাবেক চেলসি মিডফিল্ডার জন ওবি মিকেল বলেন, ‘এই তিনজন যখন ছন্দে থাকে, কেউ থামাতে পারে না।’
এই মৌসুমে দেম্বেলে যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছেন। ৫২ ম্যাচে ৩৫ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট—যা তার আগের যেকোনো মৌসুমকে ছাপিয়ে গেছে। আগের সেরা মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে করেছিলেন মাত্র ১৪ গোল।
এই দারুণ ফর্ম দেখে লুইস এনরিক নিজেই বলেন, ‘এটাই প্রথম ম্যাচ যেখানে আমরা ওসমানকে শুরুর একাদশে নামাতে পারলাম। এবং সে ছিল আমাদের মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়।’
এখন ফুটবল দুনিয়া প্রায় নিশ্চিত ব্যালন ডি’অর যাচ্ছে দেম্বেলের ঘরেই।
ফরাসি কাপ, লিগ ওয়ান এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর পিএসজির সামনে ক্লাব বিশ্বকাপ জিতলে হবে মৌসুমের চতুর্থ মেজর ট্রফি। তার ওপর রয়েছে ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়নসও। অর্থাৎ, এক মৌসুমে সম্ভাব্য পাঁচ ট্রফি জয়ের পথে এখন মাত্র একটি বাধা—চেলসি।
তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই প্রচণ্ড গতি আর চাপের মধ্যে খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়বে না তো? মৌসুমে এটা পিএসজির ৬৫তম ম্যাচ। ফাইনালের ঠিক এক মাস পরেই টটেনহামের বিরুদ্ধে উয়েফা সুপার কাপে মাঠে নামতে হবে তাদের।
তবে এখনই এটা স্পষ্ট—লুইস এনরিক কেবল ট্রফি নয়, একটা মানদণ্ড তৈরি করেছেন। ফুটবল দুনিয়া এখন পিএসজির পথ অনুসরণ করছে। আর বাকিরা শুধু ভাবছে—কে রুখবে এই দানবকে?
রুপসীবাংলা৭১/এআর