রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : স্বৈরাচারের লক্ষণ দেখামাত্রই তা বিনাশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন জুলাইয়ে এ দেশের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল, তা যেন অটুট থাকে। এর থেকে ১৬ বছর যেন অপেক্ষা করতে না হয়। স্বৈরাচারের লক্ষণ দেখামাত্রই যেন তাকে বিনাশ করতে পারি, এই হোক জুলাইয়ের শিক্ষা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি এবং অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, এক জনতার জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল, ‘ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করার অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি। এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম, যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল তাৎক্ষণিক যেটা টার্গেট ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন—নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়কালটা উদযাপন করব যাতে পরবর্তী সময় ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয় আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য। আমরা প্রতি বছর এটা করব, যাতে কোনো স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিনাশ করতে পারি, সেটার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।
জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছে। জুলাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অমোঘ ডাক, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদের বিলুপ্ত করে জনগণের হাতে রাষ্ট্র ফিরিয়ে দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফল হোক। এ অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক, আমাদের ঐক্য আবার সর্বমুখী হোক, অটুট হোক।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন’ অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা করেছে সরকার। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন করা হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ কর্মসূচির প্রথম দিনে, দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এ দিনেই জুলাই মাসের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হবে এবং খুনিদের বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হবে, যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। পাশাপাশি, জুলাই শহীদদের স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই ক্যালেন্ডারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে কয়েক দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ১ জুলাইয়ের পর অনুষ্ঠানের পরবর্তী দিনগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে ৫, ৭ এবং ১৪ জুলাই।
অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন ৫ আগস্ট (যা ‘৩৬ জুলাই’ নামে চিহ্নিত), এদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে—‘৩৬ জুলাই’ উপলক্ষে ভিডিও শেয়ারিং, ৩৬ জেলার কেন্দ্রে জুলাই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান, ‘৩৬ ডেইস অব জুলাই’ ও অন্যান্য ডকুমেন্টারির প্রদর্শনী এবং ড্রোন শোর আয়োজন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলা হয়।
রুপসীবাংলা৭১/এআর