রুপসীবাংলা ৭১ অন্যান্য ডেস্ক : বাগদাদ একসময় শুধু ইসলামি খেলাফতের রাজধানী ছিল না, ছিল বিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র। বিশেষ করে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাইতুল হিকমাহ’ বা ‘হাউজ অব উইজডম’ হয়ে ওঠে জ্ঞানচর্চার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান, যেখানে এক ছাদের নিচে একত্রিত হয়েছিলেন বিশ্বের নানা প্রান্তের পণ্ডিত ও চিন্তাবিদেরা।
প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ
খলিফা আল-মনসুরের সময়ে বাগদাদে লাইব্রেরি গঠনের ভাবনা শুরু হলেও প্রকৃত অর্থে ‘বাইতুল হিকমাহ’ গড়ে তোলেন খলিফা হারুন আল-রশিদ। পরে তার পুত্র খলিফা আল-মামুন এই জ্ঞানভাণ্ডারকে রূপ দেন একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিতে।এখানে গ্রীক, পারসিক, সংস্কৃত ও ল্যাটিন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ অনুবাদ করা হতো আরবিতে।
বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা
৮২০ সালের দিকে এই লাইব্রেরির প্রধান ছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ মুহাম্মদ ইবন মুসা আল-খাওয়ারিজমি, যিনি আজকের বীজগণিতের জনক হিসেবে পরিচিত। তাঁর পাশাপাশি বাইতুল হিকমাহতে কাজ করতেন বনু মুসা ভাইয়েরা, যাঁরা প্রকৌশল ও যন্ত্রবিদ্যায় অনন্য উদ্ভাবন করেছিলেন। অনুবাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন হুনায়ন ইবন ইসহাক, যিনি ছিলেন একজন খ্রিষ্টান চিকিৎসক।
এক কিংবদন্তি অনুসারে, অনুবাদকদের অনুদিত গ্রন্থের ওজন অনুযায়ী স্বর্ণ প্রদান করা হতো, যা অনুবাদ কার্যক্রমে গতি এনে দেয়।
জ্ঞানচর্চার উন্মুক্ত পরিবেশ
বাইতুল হিকমাহ ছিল ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গনির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে আরবি, ফারসি, হিব্রু, গ্রীক, ল্যাটিন ভাষায় জ্ঞানচর্চা হতো। বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা, গণিত, ভূগোল, প্রাণীবিদ্যা—প্রায় সব শাখায় গবেষণা ও অনুবাদ চলত সমানতালে।
ধ্বংস ও প্রভাব
১২৫৮ সালে মোঙ্গলদের হাতে বাগদাদ ধ্বংস হলে বাইতুল হিকমাহও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। টাইগ্রিস নদীতে নেমে যায় জ্ঞানসম্ভারের হাজারো পাণ্ডুলিপি। তবু এই জ্ঞানের বাতিঘর দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী বিশ্বে এবং পরবর্তীতে ইউরোপীয় নবজাগরণে প্রভাব ফেলেছে। বাইতুল হিকমাহর আদলে পরবর্তীকালে কায়রো, আন্দালুসিয়া, কর্ডোবা ও টলেডোতেও গড়ে ওঠে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এই লাইব্রেরি শুধু ইসলামী সভ্যতার নয়, বরং মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম এক মাইলফলক।
সূত্র : রোর বাংলা
রুপসীবাংলা ৭১/এআর