নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দক্ষিণ বাংলার বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের বিখ্যাত লোকগাঁথা নিয়ে নির্মিত ঢাকা পদাতিকের প্রযোজনা ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’ মঞ্চস্থ হয় আজ ১৬ জুন ২০২৫ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে ফিরেছে বাংলার আদি নাট্যকলার নানা আঙ্গিক আর নানান রূপ নিয়ে নির্মিত শেকড়ের নাটক ঢাকা পদাতিকের “পাইচো চোরের কিচ্ছা”। সংগৃহীত গল্পে নাটকটি নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী চপল। “পাইচো চোরের কিচ্ছা” আবারো দর্শকদের সামনে তুলে ধরে বাংলার মাটির গন্ধমাখা কাহিনি, লোকজ রীতি এবং ঐতিহ্যবাহী অভিনয়শৈলী। বাংলার লোকগাথা আর আদি নাট্যরীতির এক অনন্য সম্মিলন ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’।

নাটকের কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র পাইচো চোরকে নিয়ে, যে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সকল প্রতিরোধ জয় করে চুরি করে মহেশ্বরী রাজকন্যাকে। তবে গল্পটা শুধু চুরির নয়, বরং চুরির আড়ালে সমাজ, রাজনীতি ও ক্ষমতার গল্প। নাটকে গল্পের ছলে একজন কথকের সমগ্র কাহিনী বর্ণনা আর পাইচোর নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের গল্প বলে যাওয়ার ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলে নাটকের কাহিনী যেখানে প্রত্যেকটি চরিত্র সমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেছেন কাজী শিলা, শ্যামল হাসান, সালাউদ্দিন রাহাত, কিরণ জাকারিয়া, কাজী সম্রাট, শাহনাজ জয়া, আল আমিন স্বপন, সুমন ঘোষ, সিরাজুম মনিরা ইকরা, মীর ফারজানা আক্তার নীপা, বর্ণালী আহমেদ সেতু, সজল রহমান, তন্দ্রিমা মল্লিক তন্দ্রা, কবির বাউল, শংকর কুমার মণ্ডল, খন্দকার আতিক প্রমুখ।
নির্দেশকের কথা:
সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক উপাদান। বাংলার লোকাঙ্গনে লালিত এসব সাংস্কৃতিক উপাদানই আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের শেকড়। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার এই দেশে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের শিল্পবোধ বড়ই চমৎকার, মধুর আর বিচিত্র সম্ভারে পরিপূর্ণ। লোক মনে ফল্গুধারার মত উৎসারিত এই বৈচিত্রপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ শিল্প উপাদানগুলোই আমাদের অতিপ্রিয় লোকসংস্কৃতি। খুলনা এলাকায় অসংখ্য লোক উপাদান রয়েছে, লোক নাটক করব এই ভাবনাতেই লোককাহিনী পাইচো চোরের কিচ্ছা খুঁজে বের করা। বিজয় সরকার, মোসলেম বয়াতীসহ খুলনা এলাকার অসংখ্য লোককবি ভাটিয়ালী সুরে যে ভাব, রস আমাদের মনে গ্রথিত করেছেন তা এই নাটকের মূল সুর হিসেবে কাজ করেছে।
খুলনার লোককাহিনীকে উপজীব্য করে গবেষণাধর্মী লোকনাটক “পাইচো চোরের কিচ্ছা” মঞ্চস্থ করছে ঢাকা পদাতিক। একটি সহজ গল্পকে লোকাঙ্গীকের আশ্রয় নিয়ে সরলভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি মাত্র, সকলের ভাল লাগলে ধন্য হব।
কাহিনী সংক্ষেপ:
কোন একদেশে ছিল এক রাজা, তার মেয়ের নাম ছিল মহেশ্বরী, উজিরের পরামর্শে মহেশ্বরী কইন্যের দেখভাল এর জন্য রাজা পাশের গ্রামের এক বুড়ির ছেলেকে নিযুক্ত করল, তার নাম কোটে। একদিন কোটে এক সন্ন্যাসীর মাধ্যমে জানতে পারে যে তার সাথেই মহেশ্বরী কইন্যের হবে বিয়ে। এই কথা শুনে বেজায় রেগে মহেশ্বরী কইন্যে কোটেরে দিল তাড়া। আর তাড়া খেয়ে কোটে গিয়ে উপস্থিত হল অন্য এক দেশে। ভাগ্যক্রমে সেই দেশের রাজার মৃত্যুর কারনে কোটে হয় সেই দেশের রাজা। আর তখনই সে মহেশ্বরী কইন্যেকে চুরি করে আনার জন্য পাইচো নামক এক চোরকে নিযুক্ত করে। পাইচোও নানা রকম ফন্দি ফিকির অআঁটতে থাকে এবং বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে একে একে মহেশ্বরী রাজার হাট-বাজার চুরি করা শুরু করে। রাজ্যবাসী, উজির, নাজির, পাত্তর, মিত্তর সবাইকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে অবশেষে পাইচো চুরি করতে সফল হয় মহেশ্বরী কইন্যেকে এবং মহেশ্বরী কইন্যের পিতারূপে বিয়ের মাধ্যমে কইন্যেকে তুলে দেয় কোটের হাতে। এরপর মহেশ্বরী রাজা দখল করে কোটের রাজ্য এবং কোটেকে হত্যার জন্য উদ্যত হয় আর তখনই সে জানতে পারে মহেশ্বরী কইন্যের সাথে কোটের বিয়ে হয়ে গেছে। অবশেষে সে মেনে নেয় তাদের বিয়ে।

আমাদের অনেক মূল্যবান ধনসম্পদ যাতে চুরি না যায় সে ব্যাপারে সদা সচেষ্ট থাকি, আপ্রাণ চেষ্টা করি এই সম্পদগুলো ধরে রাখতে, কিন্তু মানবাত্মা যখন উড়ে যাবে, কখন তাকে আমরা কিভাবে ধরে রাখব। তার জন্য তো কিছু কাজ অবশ্যই করা দরকার। সমগ্র নাটকটি বর্ণনা করেন একজন কথক, আর পাত্র পাত্রীরা এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে।
খুলনা থেকে মটরলঞ্চে
ঢাকা আসার টিকিট কেটে
বেলা দশটায় দশ মিনিটে
নেমে পড়লাম সদরঘাট
মানবকূলে জনম লইয়া
বাস করলি ক্যান পশুরহাট।। সদরঘাটে ঘুরে ফিরে
দিন গেল মোর খেলা করে হাসতে খেলতে দিন গেল মোর সামনে দেখি নয়ারহাট।।
নয়ারহাটে গাড়ী ভিড়িয়ে
জীবন টিকিট নেও কাটিয়ে
ওরে তোর চুল দাড়ি মোছ
গেছে পেকে শেষে দেখি শূন্য হাত।।