নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আজ ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ শনিবার সকাল ১১:০০ ঘটিকায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৪” উদযাপন উপলক্ষ্যে “বাংলাদেশের নদ-নদী রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা: প্রেক্ষিত সোনাই” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনের করেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘ধরা’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সহ-আহ্বায়ক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ‘ধরা’র উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার দেশের নদীর দূষণ, দখল ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসনে করনীয় সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সোনাই নদী সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘ধরা’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ‘ধরা’র উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, এমডি, এফএএসএন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্ঠা ও ‘ধরা’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সহ- আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মনির হোসেন চৌধুরী, রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, ৭৫ নং ওয়ার্ড কমিশনার আকবর হোসেন, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা ও চুনতি রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক সানজিদা রহমান সহ অন্যান্য পরিবেশকর্মীবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে শারমিন মুরশিদ বলেন, পৃথিবীর কিছু দেশের মধ্যে প্রথমদিকেই বাংলাদেশ নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে এই দেশেই নদীর এত বেহাল দশা। দখল-দূষনের মাধ্যমে এদেশের অধীকাংশ নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীর সাথে আমাদের জীবন-জীবিকার সম্পৃক্ততা থাকলেও আমদের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নদী গুলোই সবচেয়ে দূষিত বেশি। এমতাবস্থায় নদী রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে এসে পদক্ষেপ গ্রহণ না করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে নদী বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব আমরা আর পাবো না।
‘ধরা’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল সোনাই নদী প্রসঙ্গে উপস্থাপনা করতে গিয়ে বলেন, “ইতিপূর্বে আমরা বহুবার সোনাই নদীর অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত খনন ও শিল্প দূষণের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের এই প্রতিবাদ কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। আমরা নদীর পক্ষে নির্মোহ অবস্থান থেকে কথা বলি। ‘ধরা’ নিশ্চয়ই এই মুল্যবোধ সমুন্নত রাখতে বদ্ধ পরিকর” ।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ‘ধরা’র উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সুপেয় পানি আমাদের জন্মগত অধিকার। এই দুইটি অধিকারকে নিশ্চিত করতে হলে আমাদের দেশের নদী রক্ষাপূর্বক তার প্রাকৃতিক অধিকার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের দেশের নদীগুলো সবচেয়ে বেশি দখল-দূষণের শিকার হচ্ছে। তাই আমরা বলতে চাই নদী রক্ষায় আমরা আমাদের আন্দোলনের পাশাপাশি প্রয়োজনে এদেশের সর্বোচ্চ সকল জায়গা পর্যন্ত লড়ে যাব। তিনি তাঁর বক্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল ও আইনের কপি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ‘ধরা’র উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, এমডি, এফএএসএন বলেন, সোনাই নদীর বর্তমান অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক। দুর্গন্ধের কারণে আশেপাশের এলাকার লোকজন সেখানে বসবাস করতে পারছে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের বাংলাদেশীরা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। পরিবেশ ও নদী রক্ষায় দেশের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও সহযোগীতা থাকলে তা আরো ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্ঠা ও ‘ধরা’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সহ- আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সকল জনপদই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আমরা যদি খোদা ঢাকা শহরের দিকে তাকাই দেখবো যে ঢাকা বড় চারটি নদী দ্বারা বেষ্টিত যার প্রায় সবগুলোই বিভিন্ন ভাবে হুমকির মুখে রয়েছে। ঢাকার এই সকল নদীগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়টি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে সংবাদ কর্মীদের নিয়মিত প্রতিবেদন ও আমাদের সরাসরি প্রর্যবেক্ষণে সোনাই নদীর যে চিত্র দেখতে পাই তা দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কার্যকরীর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী ভূমি ও নদী সম্পর্কিত বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যা ও অন্যান্য দিক সম্পর্কে আলোচনা রাখেন। বাংলাদেশের নদ নদী রক্ষায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর মাধ্যমে আরো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলে নদীর দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশিষ্ট জন ও সাংবাদিকদের প্রাণবন্ত আলোচনা শেষে দুপুর ১:৩০ মিনিটে কর্মসূচিটি শেষ হয়।