নিজস্ব প্রতিনিধিঃ খাগড়াছড়িতে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। সাবেক ছাত্র নেতা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরার হত্যার বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলায় ১০ দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন হয়েছে।
১০ দিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার জনের অধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর প্রদান করেছেন।আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।নেতৃদ্বয় বিপুল চাকমাসহ ৪ নেতাকে হত্যার বিচারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মসূচি চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, গত ২০ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে পাঁচ গণসংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে ৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষিত কর্মসূচির ভিত্তিতে গত ২১-৩১ জানুয়ারি ১০ দিনব্যাপী খাগড়াছড়ি জেলায় শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর অভিযান কর্মসূচি পালন করা হয়।
এই স্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ১ হাজার জনের অধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করে উক্ত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয়, স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সাথে তাঁরা আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পানছড়ি উপজেলা ও ১১ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলায় ছাত্র ধর্মঘট এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিমূখে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সফল করার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তাঁরা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের দাবি মেনে না নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন করে দমন-পীড়নের পন্থা বেছে নেন। আশির দশকে জিয়া-এরশাদ বহিরাগত সেটলার বাঙালিদের বে-আইনিভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, পাহাড়িদের ওপর নির্মম অত্যাচারসহ গণহত্যা সংঘটিত করেন। বর্তমানেও পার্বত্য চট্টগ্রামে দমনমূলক পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। পাহাড়িদের মধ্যেকার কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিকে দিয়ে প্রতিনিয়ত হত্যা-গুম-অপহরণের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
পিসিপির দুই নেতা পাহাড়ি জাতির সংকট মোকাবেলা করতে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে ‘নব্য মুখোশ’ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আন্দোনরত রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে দমনের জন্য উদীয়মান তরুণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদেই পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড চলছে। এটি পাহাড়ি জাতির অস্তিত্ব ধ্বংসের রাষ্ট্রের সুগভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কাজেই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
নেতৃদ্বয় উক্ত চার নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার-বিচার ও শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি চলমান রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার অনিলপাড়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে।
উক্ত ঘটনার দেড় মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো খুনিদের গ্রেফতার করা হয়নি।