নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ সকাল ১০:৩০ টায় রাজধানীর ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাটে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার যৌথ উদ্যোগে “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনী ইসতেহারে উল্লেখিত পরিবেশ দুষণ প্রতিরোধের অঙ্গীকার সমূহের বাস্তবায়ন চাই”শীর্ষক একটি প্রচারাভিযান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। কার্যক্রমে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সহযোগী আয়োজক বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনের প্রতিনিধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল নাগরিক সমাবেশ, মুকাভিনয়, রালী, লিফলেট, গেন্জী, ছাতা বিতরণ ইত্যাদী। নাগরিক সমাবেশে সহ আয়োজক সংস্থা নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থা এবং শিশুদের মুক্তবায়ু সেবন সংস্থা এর প্রধান নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইসতেহারে পরিবেশ দুষণ প্রতিরোধের বিষয়কে অন্তর্ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইসতেহারে পরিবেশ দুষণ প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ এর অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এসকল অঙ্গিকারগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতীক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আজকের এই কর্মসূচীটি আয়োজন করা হয়েছে।
ওয়াটরকিপার্স বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী সৈয়দ তাপস সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি নাগরিক সমাবেশের শুরুতে কর্মসূচীর উদ্দ্যেশ্য তুলে ধরেন। নাগরিক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, যারা এই নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন তাদের কাছে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। নতুন যিনি পরিবেশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁর নির্বাচনী ইসতিহারের সাথে আমাদের দাবির সামঞ্জস্যতা ছিলো। তাই নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের যে পরিকল্পনা রয়েছে তাতে পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক অঙ্গীকারকৃত বিষয়গুলোকে চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে, জনগণ নির্বাচনী ইসতেহার এর বাস্তবায়ন দেখতে পায়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাকিলা পারভিন বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচনি ইসতেহারে বিভিন্ন অঙ্গিকার অন্তর্ভূক্ত করতে কাজ করেছি। নির্বাচনের আগে আমরা লক্ষ্য করেছি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইসতেহারে পরিবেশ, নদী ও জলবায়ু রক্ষায় বিভিন্ন অঙ্গিকার প্রদান করেছে। তবে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জটা হবে তা বাস্তবায়নে। তাই আমরা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের পরিবেশ রক্ষায় কৃত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানাই।
রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, নির্বাচনের পর নতুন সরকার ইতোমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের পূর্বে সরকার নির্বাচনি ইসতেহারে যেসকল কর্মসূচীর উল্লেখ করেছিলো বিশেষত জলবায়ু, নদী ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ঠ তা বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে। নদী দখলদার এবং যে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ধ্বংশের সাথে জড়িত থাকবে সরকার তাদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠন এর নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর আদেল বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই এই নদীকে বাাঁচাতে হলে এই নদীর চারপাশে সুয়ারেজ লাইনগুলোকে বন্ধ করতে হবে এবং সুয়ারেজ লাইনের পানিগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে পর্যাপ্ত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করতে হবে। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানি নদীতে ফেলা বন্ধ করতে না পারলে নদী রক্ষায় আদতে কোন পদক্ষেপই কাজে আসবে না। তাই আমরা আমাদের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা বুড়িগঙ্গা নদী সহ অন্যান্য নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
আজকের কর্মসূচীর সঞ্চালক সৈয়দ তাপস বলেন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে পরিবেশ, নদী ও জলবায়ু রক্ষায় রাজনৈতীক নেতৃবৃন্দের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইসতেহারে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিয়ে আসতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব ও জনসমাজের প্রচেষ্টার ফলে তাদের ইসতেহারে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন অঙ্গিকার প্রদান করে। তাই, নির্বাচনের পরবর্তিতে এই সময়ে আমরা ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক সকল নেতৃবৃন্দদেরকে পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানাই।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ইশরাত জাহান লতা, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা, শিশুদের মুক্তবায়ু সেবন সংস্থার সদস্য মোঃ সেলিম সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা এর সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধীবৃন্দ, নৌকার মাঝি ও স্থানীয় জনসাধারণ।
কর্মসূচীতে সমাবেশের পাশাপশি একটি মূকাভিনয় প্রদর্শনি অনুষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে নৌ র্যালির মাধ্যমে এই কর্মসূচীটির সমাপ্তি হয়।