নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত সিগারেট কারখানা পরিবেশ ও জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। অত্র এলাকা থেকে এই কারখানা দ্রুত অপসারণ করার দাবি জানিয়ে আজ ১৮ মে, ২০২৫ তামাক বিরোধী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও ভার্চুয়াল টক শো’র আয়োজন করে। এসকল কর্মসূচির মাধ্যমে মাননীয় উপদেষ্টা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের কাছে সংগঠনগুলো তাদের দাবি উপস্থাপন করে। কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, এউড ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, ডাস, নাটাব, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, মানস, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, প্রত্যাশা, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), আইনজীবি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
আজ ১৮ মে ২০২৫ সকাল ১০.০০টায় শাহবাগে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস মতো একটি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ক্ষতিকর তামাক কারখানার অবস্থান সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বর্তমানে এটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, জনবহুল ও অভিজাত এলাকা। এখানে রয়েছে বহু মানুষের আবাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অফিস-কারখানা এবং বাস টার্মিনাল। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এধরণের একটি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানার অবস্থান কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বক্তারা আরো বলেন, মহাখালী ডিওএইচএস এলাকাস্থ বিএটিবি’র কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও সর্বস্তরের জনগণ। তামাকের কাঁচামাল ও সিগারেট পরিবহনের জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ মহাখালী এলাকার প্রধান সড়ক ও আবাসিক এলাকায় অবাধে চলছে বিএটিবি’র ভারী ভারী সব যানবহন। তামাক কোম্পানির এই বড় বড় যানবহন চলাচলের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এতে করে এলাকাবাসী সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
আজ ১৮ মে ২০২৫ সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এর ঊদ্যোগে “পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শহর থেকে সিগারেট কারখানা অপসারণ জরুরী” শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল টকশো আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দিন শেখ- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট এড.মাসুম বিল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন – ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষ্ণা বসু। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যখনই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় তখনই সারা এলাকায় তামাকের কটু গন্ধ ঝড়িয়ে পড়ে। আরো বেশি উদ্বেগের কারণ কারখানাটির অল্প দূরেই অবস্থান করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোন অজানা কারণে দীর্ঘদিন লাল ক্যাটাগরীর এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃষ্টিগোচর হয় নাই। এমনকি এক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা যায়নি। শুধুমাত্র এলাকাবাসীই নয় বরং কারখানা থেকে নির্গত ভারী রাসায়নিক ধোঁয়া সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে যা অধূমপায়ী জনগণকেও পরোক্ষভাবে গণ ধূমপায়ীতে পরিণত করছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নাম কয়েকবার শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার যেখানে ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে, সেখানে তামাক প্রস্তুতকারী কারখানার অবস্থান সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে বেলা ১২টায় রাজধানীর বাড্ডায় বিভিন্ন পবিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্লাটফর্ম “আবাসিক এলাকা থেকে তামাক কারখানা অপসারনের দাবীতে” একটি মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে। এসময় পরিবেশ বাাঁচাও আন্দোলনের হামিদুল
ইসলাম, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের শাগুফতা সুলতানা, পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্ক এর পক্ষে ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেলের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস এর ফারহানা জামান, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির ইব্রাহীম খলিল বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ আন্দোলনে শরীক হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, আমাদের সংবিধানেও স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা স্পষ্ঠভাবে বলা আছে। মহাখালীর জনবহুল এলাকায় সিগারেট কারখানা থেকে উদ্ভুত অসহনীয় ঝাঝালো গন্ধ ও তামাকের গুড়ার কারণে বায়ু ও পরিবেশ দূষণসহ চারপাশের লোকজনের স্বাস্থ্যহানীর ঘটে। একারণে ১৯৯০ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত “ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড” এর এক সভায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টরিটি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু তামাক কোম্পানিটি তাদের অদৃশ্য ক্ষমতা প্রয়োগ করে এখনও এই জনবহুশ এলাকায় ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। আইন ও জনস্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কারখানাটি এখনও অবস্থান করার বিষয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
বক্তারা বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তারপর থেকে দেশের নানা দুর্যোগ এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা প্রয়োজনে আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী বলিষ্ঠভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রেও সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যহানিকর সিগারেট কারখানাকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে দিবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
বক্তারা আরো বলেন, রষ্ট্রের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা । রাজধানীর ডিওএইচএস-এ ক্ষতিকারক তামাক কোম্পানির অবস্থান রাষ্ট্রের মাঝে থেকে রাষ্ট্রের সাথে বিরুদ্ধাচরণ। বাংলাদেশের কোন আইন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই তামাক কারখানার অবস্থানকে সমর্থন করে না। কাজেই তামাক কোম্পানির পরিবেশ ছাড়পত্র যেন আর নবায়ন করা না হয় এবং নতুন কোন সিগারেট কোম্পানিকে যেন অনুমোদন না দেয়া হয় সে বিষয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও যেন ভাবমূর্তি রক্ষায় এগিয়ে আসে। মহাখালী থেকে ক্ষতিকর এই পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা অপসারণ করে দৃষ্টান্ত রাখবে নতুন বাংলাদেশের। এছাড়া খুবই গোপন তৎপরতার মাধ্যমে ২০২৩ সালে কোন ধরণের জনমত যাচাই ছাড়াই লাল ক্যাটাগরী থেকে ক্ষতিকর এই পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কমলা ক্যাটাগরীর শিল্প প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। অবিলম্বে এই প্রতিষ্ঠানকে লাল ক্যাটাগরীতে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এবং সেই অনুসারে শহরের প্রাণ কেন্দ্র থেকে এই কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ অর্থাৎ অপসারণ করা হোক।