নিজস্ব প্রতিনিধ
শুক্রবার (৮ নভেম্বর ২০২৪ইং)
বিগত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে যেন তেনভাবে নির্বাচন করার অপচেষ্টা করেছিল ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রেক্রুটিং এজেন্সি বায়রার দ্বি বার্ষিক নির্বাচনে স্বৈরশাসক আমলের গঠিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে যেনতেন ভাবে নির্বাচন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত চার দফা নির্বাচনের সিডিউল দেয়া হয়েছে। আদালতে পাঁচটি মামলা চলমান আছে। বায়রার বায়রার সভাপতি আবুল বাশার সরকারের অংশীদার হওয়ায় বর্তমানে পলাতক আছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহসভাপতি, যুগ্ন মহাসচিব সহ নয়জন কার্যনির্বাহী কমিটি হতে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
গত ৫ নভেম্বর মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে বায়রা নির্বাচন স্থগিত করা হয় কিন্তু বায়রা নির্বাচনী বোর্ড ৬ নভেম্বর তারিখে প্রায় ৮৭ টি নমিনেশন বিক্রি করে। যাহা স্পষ্ট আদালত অবমাননা শামিল। উক্ত নমিনেশন ফর্ম পর্যালোচনা করে দেখা যায় সকাল ১০.০২ মিনিট থেকে ১০.২২ মিনিটের মধ্যে এই ৮৭টি ফরম বিক্রি করা হয়।বায়রার নোমিনেশন বিক্রির খতিয়ান থেকে দেখা যায় ৬ নভেম্বর ১০.০২ মিনিটে ১৯ টি ফরম বিক্রি হয়েছে, ১০.২১ মিনিটে ১৫ টি ফরম বিক্রি হয়েছে। এবং ১০:১৮ মিনিটে ১৭ টি ফরম বিক্রি হয়েছে। যেখানে একটি ফরম বিক্রি করতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে, ১৯ টি ফরম এক মিনিটে কিভাবে বিক্রি হলো, ভোটারদের মধ্যে এটাই এখন কোন বড় প্রশ্ন।
গতকাল ৭ নভেম্বর মহামান্য চেম্বার জজ আদালতে বায়রা নির্বাচন দুই দিন বন্ধ থাকার পর হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করে। উক্ত আদেশের পর বায়রা নির্বাচনী বোর্ড প্রথমে দুইদিন নমিনেশন কেনার সময় বৃদ্ধি করে কিন্তু রাতে তথাকথিত বিএনপি নেতা ও বায়রা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানের ধমকে তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন রাত ৯ টায় পুনরায় চিঠি দিয়ে একদিন সময় কমিয়ে দেয়।
ইতিমধ্যে জানা যায় বায়রার নির্বাহী সদস্য তথাকথিত বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমানের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের এমপি বেনজির আহমেদ, ল্যাপটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ, নিজাম হাজারী, লোটাস কামাল ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি দশ সিন্ডিকেট সিন্ডিকেটের অন্যতম ব্যক্তি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ ও নিজাম হাজারীর সাথে তার বিভিন্ন রকম ছবি দেখা যায়।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে অধিকাংশ ফ্যাসিবাদের দোসর দ্বারা গঠিত কমিটি , বিশেষ উদ্দেশ্যে যেনতেন ভাবে নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য নিজেদের আজ্ঞাবহ লোকদেরকে নিয়ে বায়রা নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ড গঠন করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয় ۔ তফসিল অনুযায়ী ভোটার হওয়ার জন্য আপিল করার সময় ছিল ৩১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় ছিল ৫ আগস্ট ۔ ঐ সময়ে দেশে ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন চলছিল , দেশে অবরোধ ,কার্ফু এবং কি ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ۔ অনেকের পক্ষে ভোটার হওয়া সম্ভব হয়নি ۔ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে বায়রা নির্বাচন বোর্ডের প্রধান করা হয়েছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন মহিকে যিনি বর্তমানে পলাতক ও সমবায় ব্যাংকের ১২০০০ ভরি সোনা চুরিতে অভিযুক্ত۔ বায়রার নির্বাহী কমিটি দুই দফা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হতে সময় বৃদ্ধি করেও যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারেনি বরং মন্ত্রণালয়ের সময় বৃদ্ধির শর্তসমূহ লঙ্গন ۔মূলত বায়রা এখন একটি অকার্য্যকর ও দ্বিধাবিভক্ত সংঘঠন ۔ এই কমিটির পক্ষে সুন্দর , গ্রহণযোগ্য ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন করা সম্ভব নয় ۔
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্নারক নং ২৬۔০০۔০০০০১৫৭۔৩৩۔০০৯۔৮৯۔৬৬৭ তারিখ ১৫ /৮/২০২৪ এর মাধ্যমে বায়রা নির্বাচনের জন্য সময় বৃদ্ধির শর্ত সমূহ ছিল :
ক )বায়রা কার্য্যনিবাহী কমিটির সময় বৃদ্ধির শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় : বায়রার সংঘস্নারক ও সংঘবিধি ও বাণিজ্য সংঘঠন বিধিমালা অনুযায়ী ৯০ (নব্বই) দিন পূর্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ড ও ৩ সদস্য বিশিষ্ট আপিল গঠন করতে হয় ۔ নির্বাচন বোর্ডের ২ জন সদস্য থাকলেও ৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হবার পর প্রধান নির্বাচন কমিশন পলায়নের পর পুনরায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয় ২৩/১০/২০২৪ তারিখে অর্থাৎ ৪৭ দিন পূর্বে ۔এখানে শর্ত সুস্পষ্ট লঙ্গন হয়েছে ۔
খ ) বাণিজ্য সংঘঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এর ১৫ নং বিধি অনুযায়ী এবং সময় বৃদ্ধির শর্তানুযায়ী ৮০ দিন পূর্বে তফসিল ঘোষণা করতে হয় কিন্তু বায়রা নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয় ২৪/১০/২০২৪ ইং অর্থ্যাৎ ৪৬ দিন আগে – এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সময় বৃদ্ধির শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্গন এবং শর্ত ভঙ্গ হয়েছে ۔
বায়রা নির্বাচন সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা আগামী ১১ নভেম্বর সোমবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানি হবে। আদালতের সিদ্ধান্তেই নির্ধারণ হবে বায়রা নির্বাচন ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নাকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ হবে।