সলিডারিটি সেন্টার এবং বিলস এর যৌথ উদ্যোগে শ্রম আইন সংশোধনী বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সলিডারিটি সেন্টার এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর যৌথ উদ্যোগে শ্রম আইন সংশোধনী ও শ্রমিক অধিকারের সুরক্ষা শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকারের জায়গাগুলো ক্রমশই সংকুচিত হয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি এগিয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। শ্রম আইনের সংশোধনী যথাযথ প্রত্যাশার জাযগায় পৌঁছাতে পারে নি, বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে জটিলতা দুর করা, শ্রম আইন লংঘনে মালিকের শাস্তি বৃদ্ধি করা, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি করা, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধ করা, শ্রম আদালতের বিলম্বিত বিচারিক প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা, ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথ লক্ষ্য অর্জিত হয় নি এবং দৃশ্যমান অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হয় নি । তারা বলেন, শ্রমিকের নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সমাজ এখনও পিছিয়ে আছে এবং বৈষম্যহীন শ্রম পরিবেশ নিশ্চিত হয় নি। একই দেশে শ্রম আইন এবং ইপিজেড শ্রম আইন থাকায় শ্রম ক্ষেত্রে অধিকারের তারতম্যও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরগুলো শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে রয়েছে এবং এই সুরক্ষার অভাবে শ্রমিকরা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
রাজধানীর একটি স্থানীয় হোটেলে আজ শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ আয়োজিত এই কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট এ কে এম নাসিম, বিলস এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ; ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চৌধুরী আশিকুল আলম, রাজেকুজ্জামান রতন, তপন দত্ত, এ এম নাজিমুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, সাকিল আখতার চৌধুরী, পুলক রঞ্জন ধর, শহীদুল্লাহ বাদল, এ এ এম ফয়েজ হোসেন, আবুল হোসেন, সালাউদ্দিন স্বপন, বাবুল আক্তার, রামভজন কৈরী, আজিজুর রহমান প্রমুখ। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চৌধুরী আলবাব কাদির, সিফাত ই নূর খানম, গোলাম মোহাম্মদ সোহাগ, শারমিন সুলতানা, ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম, মোঃ মহসিন মজুমদার, অ্যাডভোকেট তৈয়বুর রহমান প্রমুখ। কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সলিডারিটি সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আইন সংশোধনের বিষয়টি কেবল শ্রম আইনের কয়েকটি ধারায় সংযোজন-বিয়োজন কিংবা নতুন নতুন ধারা সন্নিবেশ করার চক্রে পড়ে গেলে কাঙ্খিত ফল আসবে না। এজন্য ঢেলে সাজাতে হবে সরকার, মালিক, শ্রমিক পক্ষ সমন্বিত ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাকে এবং এই তিন পক্ষের ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। তারা বলেন, আইন সংশোধনের আলোচনায় জাতীয় পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) এবং শ্রম আইন সংশোধন বিষয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি কেবল সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা রাখে এবং এটিই একটি বড় দুর্বলতা। তারা বলেন, টিসিসি-র মতোই আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড, যাদের রয়েছে শুধুমাত্র সুপারিশ করার ক্ষমতা।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারকে শ্রম আইনের যথাযথ সংশোধনীর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে, শ্রম আদালতের আইনজীবি, বিচারক সকলকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে, মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া এবং যৌথ দরকষাকষির বিষয়টির প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে, শ্রমিক সুরক্ষায় কাজ করার জন্য ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতে হবে, শিল্প সম্পর্ক ভারসাম্যপুর্ণ রাখতে মালিকপক্ষকে আরও উদার হতে হবে, শ্রম অধিকার সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট উন্নয়নে সরকারকে কাজ করতে হবে, শ্রম সংক্রান্ত সকল ফোরামে শ্রমিকদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে, শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোকে শ্রমিকদের নেতৃত্বের বিকাশে ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারিক কার্যক্রমে শ্রম সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, শ্রম অধিকার সুরক্ষায় সকল উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতা জোরদার রাখতে শ্রম মন্ত্রণালয়কে যুক্ত রাখতে হবে, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সকল শ্রমিকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে হবে, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, শ্রম অধিকার সংক্রান্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল পক্ষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনায় নতুন সৃষ্ট কর্মক্ষেত্রের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জিতে শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এর হালনাগাদকরণ করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক কাজে অপ্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্যোগ নিরসন করতে হবে, যৌথ দরকষাকষির সক্ষমতাকে জোরদার করতে হবে, গৃহশ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক সহ সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে শ্রম আইনের সুরক্ষায় আনতে হবে, এ ছাড়া আইটি সেক্টর ও প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতিতে আউটসোর্সের মাধ্যমে কর্মরত শ্রমিক এবং সংবাদ ও মিডিয়াকর্মীদের শ্রম আইনের সুরক্ষায় আনতে হবে, প্রবাসী শ্রমিক-যাদের আমার রেমিটেন্স যোদ্ধা বলে অভিহিত করে থাকি তাদের সুরক্ষার বিষয়টিও জোরালো বিবেচনায় আনতে হবে।