রিপোর্টঃ- শাহজালাল (রাসেল):১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাগর-রুনী মিলনায়তনে, বৈষম্য বিরোধী হজ্জ এজেন্সীর মালিকদের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আখতার উজ্জামান, আহবায়ক, বৈষম্য বিরোধী হজ্জ এজেন্সীর মালিকবৃন্দ ও চেয়ারম্যান ইস্ট বাংলা হজ্জ সার্ভিস লিমিটেড, এইচ এল নং ৭৪৬
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সারাজিবনের লালিত স্বপ্ন।
জীবনে একবারের জন্য হলেও আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে পবিত্র কা’বার জিয়ারত ও সোনার মদীনায় হাজিরা দিয়ে সালাতু সালাম পেশ করা। এ মহান কাজটি সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পাদন করতে এজেন্সী মালিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের আন্তরিক সহযোগীতা একান্ত জরুরী। আর এজন্সীর মালিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে হজ্জ এজেন্সীস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। অথচ হজ এজেন্সীস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সদস্যরা সুদীর্ঘ ০৮ বছর আমাদের এই সংগঠনের কার্যকরী কমিটির স্বৈরতান্ত্রিক সভাপতি এম. শাহাদাত হোসেন তসলিম, বর্তমান যুব লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য। বর্তমানে পলাতক সভাপতি তার প্রধান মদদদাতা ও ব্যবসায়িক অংশদিার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ক্ষমতাকে পূজী করে “হজ এজেন্সীস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ” হাবকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আওয়ামী সন্ত্রাস, প্রশাসন ও দূর্নীতির মাধ্যমে তার পেটুয়া বাহিনীকে সাথে নিয়ে দেশের অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে বিপুল অংকের অর্থ পাচার করেছে। যেসব অনিয়ম ও দূর্নিতীর কারনে এ কমিটির বিলুপ্তি দাবী করছি তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
০১। হাব এর বর্তমান বিতর্কিত (পলাতক) সভাপতি ও তার দোসররা বিগত ৪ বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করে আমাদের সংঘ স্মারক ও বানিজ্য সংগঠন বিধিমালার লঙ্গন করেছে। ৪ বছরের এজিএম করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোন বাজেট পাস না করেই অননুমোদিতভাবে হাবের অর্থ ব্যায় করেই চলেছে। যদ্ধরুণ ইতিমধ্যে এ কার্যনির্বাহী কমিটি বৈধতা হারিয়েছে।
০২। সে হাব থেকে ২০১৭ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হজের জন্য ১% বাড়ী ভাড়া, হজ ব্যবস্থাপনা, আপদকালীন ফান্ড, প্রশিক্ষণ, বারকোড ভিসা ও বিমান টিকেট সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
০৩। সে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যবহার করে কৌশলে শত শত ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে জাল ভোট ও পাতানো প্রহসনের নির্বাচন করে অবৈধ ভাবে (২০১৭-২০২৫) পর পর ৪ টার্মে মোট ৮ (আট) বছরের জন্য হাবের সভাপতি হিসেবে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে। দেশের সকল এসোসিয়েশনে পর পর ৩ বারের বেশী কেউ নির্বাচন করেন না। অথচ এ কমিটির অধিকাংশ সদস্যই নিয়ম বহির্ভূত পন্থায় ৪র্থ বারের মত প্রহসনের নির্বচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে।
০৪। সে সিন্ডিকেট করে মাত্র ৫৬ টি লাইসেন্স এর মাধ্যমে হজ পরিচালনার চক্রান্তের মূল হোতা ও ২০০০ হাজীর কোটার প্রবর্তক ও ২০২৪ সালে ২৫০ জন হাজী প্রতি লাইসেন্সে বাধ্যতামূলক প্রেরনের মাস্টারমাইন্ড এবং লীড এজেন্সীর প্রবক্তা। সে প্রতি লাইসেন্সে ন্যূনতম ১০০ জন হাজী প্রেরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হজ লাইসেন্সধারীদেরকে ২৫০ জনের কোটা চাপিয়ে দিয়ে পথে বসিয়েছে।
০৫। সে তার মদদদাতা, রাজনৈতিক গুরু ও সকল অপকর্মের হোতা প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সহযোগিতায় ও অংশিদারীত্বে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের জিএসএ প্রাপ্ত হয়। সে তার রাজনৈতিক গুরু আ হ ম মোস্তফা কামালের ছত্রছায়ায় ও সহযোগিতায় হজ যাত্রী পরিবহনে জাতীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়রলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এর পাশাপাশি ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সকে সংযুক্ত করে হাজীদেরকে নিম্ন মানের সেবা ও নিম্ন মানের আসন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় দ্বিগুন ভাড়ায় শত শত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সে ২০২৩ সালে তার ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান “ডাইনেস্টি ট্রাভেলস” এর নামে হাজীদের অর্থ পে-অর্ডরের মাধ্যমে গ্রহন করলে মন্ত্রনালয় এর দায় দায়িত্ব নিবেনা বলে পত্র ইস্যু করেছিল।
অথচ হাজীদের পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করার দাবী বহু দিনের, কিন্তু সকল দাবী উপেক্ষা করে থার্ড ক্যারিয়ার এর পরিবর্তে প্রতারণা করে তসলিম গংদের মাধ্যমে ফ্লাইনাসের উচ্ছ মূল্যের টিকেটের মাধ্যমে হাজীদের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যাওয়ায় একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার ফলে গত ২ বছর থেকে হজে গমনেচ্ছুক হাজীদের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে এবং এই উচ্চ মূল্যের হজ প্যাকেজ অব্যাহত থাকলে হজে গমনেচ্ছুকের সংখ্যা দিন দিন কমে গিয়ে হজ এজেন্সী সমূহের অস্তিত্ব বিনষ্ট সহ ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র হজ পালন হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এটি মুসলমানদের মৌলিক অধিকারে বাধা দেয়ার সামিল।
০৬। ২০১৯/২০২২/২০২৩ বারকোড স্টিকার ভিসা হাজিদের সেবা প্রদানের জন্য হাব সদস্যদেরকে ওজরাতুল হজ ফ্রি সরবরাহ করেছেন। কিন্তু, সে এসব ভিসা এজেন্সী সমূহকে সরবরাহ না করে অবৈধ ভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
০৭। হাব পল্লী নামে একটি হাবের প্রকল্প যা হাব সদস্যদের গৃহায়নের জন্য ঢাকার আমিন বাজারে DHAKA DEVELOPMENT PLAN, DETAILED PLAN AREA (DAP) এর বাইরে অবস্হিত এ রকম একটি জলাভূমি পূর্ববর্তী কার্যকরী কমিটি দূর্নীতির মাধ্যমে হাব সদস্যদের অর্থ লুণ্ঠন করে। সে কৌশলে তাদের সাথে আতাত করে তাদের ভোট নিজের প্যানেলে আহরন করে প্রহসনের নির্বাচন (২০১৯-২০২১) এর সভাপতি বনে গিয়ে দীর্ঘ্য আট বছরের মধ্যে এ হাব পল্লী নিয়ে কোন কথা না বলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে ও নিজে অন্যায়ভাবে পূর্ববর্তী কমিটির টাকার ভাগ নিয়েছে।
০৮। ২০২১-২০২৩ হাব নির্বাচনে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় কতৃক নির্বাচন স্থগিতের আদেশকে প্রতিহত করতে তৎকালীন অর্থ মন্ত্রীর মাধ্যমে চেম্বার জজের বাসায় রাতের বেলায় সেই আদেশকে বাতিল করে সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারপিট করে প্রতিপক্ষকে নির্বাচন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করায় ও একতরফা জাল ভোট প্রয়োগ করে এক নজীরবিহীন কলংক স্হাপন করে।
০৯। শাহাদাত হোসেন তসলিম হাব অফিসকে ব্যাক্তিগত অফিসে রুপান্তর করে সে যুব লীগের সভা সহ সভায় আসা বহিরাগত মানুষের আপ্যায়ন হাবের টাকায় সম্পাদন করে।
১০। সে তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে হাবের এজিএমে বাৎসরিক হিসাবে লুটপাট থাকায় প্রতিবাদী হাব সদস্যদেরকে মারধর করে মনগড়া হিসাবের ফিরিস্তি পাস করিয়ে নেয়।
১১। সে তার ভাই-বোন, ভগ্নীপতির নামে ব্যাংক একাউন্ট করে নামে বেনামে জমি ও অর্থ সম্পদ করেছে। যার জন্য অনতি বিলম্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন সহ তার ব্যাংক একাউন্টস সমূহ জব্দের জন্য আকুল আবেদন করছি। সে ২০১৯-২০২২-২০২৩ সালে শতশত এজেন্সীকে বার কোড ভিসা বিতরণ না করে তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লার সহায়তায় তার চাটুকার, দলীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে উক্ত বারকোড ভিসা বিক্রি করেছে। ২০১৯ সালে বারকোড ভিসা স্টিকার ভিসাধারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ৩০০ শ’ এর অধিক হজযাত্রী সৌদি বিমান বন্দর জেদ্দায় অবতরণ করলে তাদেরকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে। সে তার অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামালকে দিয়ে মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বার কোড ভিসায় যাওয়া হাজীদেরকে ছাড়িয়ে নেয়।
১২। থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী বহন করলে হাজীদের ব্যয় ৭০/৮০ হাজার কমার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে সে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সকে হাজী পরিবহনে যুক্ত করে হজের ব্যয় বাড়িয়ে গেলে ২০২৪ সালে ৪৫,০০০ নিবন্ধিত হাজী হজ পালন থেকে বঞ্চিত হয়।
১৩। হজ এজেন্সী মালিকরা হজ মৌসুমে বাৎসরিক মাল্টিপল ভিসায় হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সৌদি আরব গমনাগমণ করতেন, সে সময় আমাদের উচ্চ মূল্যের হজ টিকিট, মোয়ল্লেম ফি, বাড়ি ভাড়া, তাবু ভাড়া ইত্যাদি লাগত না। এখন এই উচ্চ মূলের ৬-৭ লক্ষ টাকার প্যাকেজে হজ এজেন্সী মালিকদেরকে হাজীদের খেদমত করতে যাবার পিছনে তার প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে।
১৪। সে একাধারে “বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সীস” এর সদস্য। সে মালয়েশিয়ার ১০০ সিন্ডিকেটে সদস্যদের একজন এবং সে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, যা কিছুদিন আগে মিডিয়া ও পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত একটি মামলার এজাহার ও ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী।
অতএব, অর্থ লুন্ঠনকারী, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, যুব লীগের সন্ত্রাস, আওয়ামী লীগের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের ব্যবসায়িক অংশীদার ও দোসর, সে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, যার জন্য তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে তার সকল ব্যাংকের একাউন্টস ফ্রিজ করে সুষ্ঠু সুবিচার সহ হাবের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য আপনাদের মাধ্যমে সরকার বাহাদুরের নিকট আকুল আবেদন করছি এবং হাব সদস্যদের প্রাণের দাবী পূর্বের মত সর্বনিম্ন কোটা ১০০ জন করা, হাজীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের লক্ষ্যে সকল থার্ড ক্যারিয়ারকে উন্মুক্ত প্রতিযোগীতার সুযোগ করা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজারের উপরে এজেন্সীর স্থলে ৫৬ এজেন্সীর মাধ্যমে হাজী পাঠানোর চক্রান্তকে রুখে দিয়ে হজ্জ ব্যবস্থাপনাকে সহজীকরণ করতে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ সকলের সর্বাঙ্গীন সহযোগীতা কামনা করছি।