নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিগত সরকারের ২০১০-১১ সময়ে চুক্তিভিত্তক (অস্থায়ী) ও বিভিন্ন সময়ে চুক্তিভিত্তিক (প্রকল্প) নিয়োগ প্রাপ্ত ২৩৪৬ জন কে পিএসসি এবং মন্ত্রণালয় সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার চাকরিবিধি ভঙ্গ করে অবৈধভাবে এনক্যাডারমেন্ট করণ ও বিধিবহির্ভূত পদোন্নতির সুপারিশ করে ৩৫০০০ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সাথে হওয়া সকল প্রকার অন্যায়,অবিচার,দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিসিএস হেলথ ক্যাডার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
৭সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল ২.০০টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি সাগর-রুনী হলে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমন্বয়ক ডাঃ আসিম মাহমুদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সকল নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
লিখিত বক্তব্যে জানান বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৩৫০০০ কর্মকর্তা দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ডাক্তারগণ হাসিমুখে সকল মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।বিগত কিছু বছর যাবত আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষা করছেন যে সরকারি চাকরীবিধিঃ গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়ে ক্যাডার পদসমূহে ভিন্ন নিয়োগবিধির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত এডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কিছু দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা। চাকরীবিধির গুরুতর লঙ্ঘন হওয়ায় তারা লিখিতভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের আপত্তি জানিয়ে আসছে কিন্তু উক্ত শাখাসমূহের কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নিতি থামাতে পারেনি, এ অন্যায়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে বলে জানান। অদ্যবধি প্রায় সহস্রাধিক ভুয়া পদোন্নতি জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় ৫ শতাধিক ভুয়া পদায়ন, ক্যাডার কর্মকর্তাকে এডহকদের অধীনস্ত করা ইত্যাদি চরম আকার ধারন করে। এ বিষয়ে মহামানা সুপ্রিম কোর্টে ২০২২ সালে মামলা দাখিল করতেও বাধ্য হয়। মামলায় রুল জারি করা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের উক্ত চিহ্নিত অনিয়মকারী শাখার কর্মকর্তাগন এডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পক্ষে অবৈধ ও বিধিবহিভূত পদোয়াতি আদেশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ন শাখা পুনরায় অবৈধ পদায়ন আদেশ জারি করে।
এসব অনিয়মের মাঝেই বিগত ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে পরপর পাঠানো মোট ৩ টি পত্রে দেওয়ায় তারা হতবাক ও বাকরুদ্ধ। অসংখা ভূয়া তথা, মিথ্যা তথা, তথ্য গোপন ও ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পার-২ শাখার তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এডহক ও প্রকল্প তথা ২০২২ সালে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে চাকরীতে পদোন্নতির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষা ও প্রশিক্ষন মাফ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়কে পত্র পাঠায় এবং উক্ত পত্রসমূহেই তাদের ইতোপূর্বে দেয়া বিতর্কিত পদোন্নতিসমূষকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নেয়। মন্ত্রনালয়ের নিজস্ব পত্রে তাদেরই করা অনিয়মসমূহ স্বীকার করে নেয়া নাজীরবিহীন। সেখানে বলা হয়, যদি এডহক এনক্যাডার কর্মকর্তাদের চাকরীতে স্থায়ীকরণের জন্য ক্যাডারের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ বিভাগীয় পরীক্ষা ইত্যাদি প্রমার্জনা না দেওয়া হয়, উক্ত প্রমার্জনার পরে পুনরায় তাদের পদোন্নতিতে পদোন্নতি পরীক্ষা হতে প্রমার্জনা না দেয়া হয় তাহলে ইতোপুর্বে প্রদেয় সকল পদোন্নতি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
২০২৩ সালে প্রথম দুইবার জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় অসম্মতি জানিয়ে প্রতিউত্তর দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তৃতীয়বারের অনুরোধে তারা বিসিএস নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রভাবটি সচিব কমিটিতে প্রেরন কে বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুরোধে প্রস্তুতকৃত উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে (১) বাধ্যতামূলক বিভাগীয় পরীক্ষা (২) বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (৩) ক্যাডারে বাধ্যতামূলক ২ বছর শিক্ষানবীসকাল হতে প্রমার্জনা (৪) ক্যাডারের ২ বছরের সন্তোষজনক চাকরীকাল, এসব প্রমার্জনার পরে পুনরায় তাদের পদোন্নতিতে (৫) সিনিয়র স্কেল হতে প্রমার্জনার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর পত্র প্রেরিত
এসব কারনে ৩৫ হাজার ক্যাডার কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ। মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সকল অনিয়মসূহ লিপিবদ্ধ করে জমা দিয়েছি যার প্রাপ্তিস্বীকার পত্র আমাদের নিকট রয়েছে। সকল প্রমান থাকার পরও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি উক্ত প্রমার্জনার ফাইলে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। উক্ত ফাইলটি জনপ্রশাসন হয়ে কর্মকমিশনে গিয়ে পুনরায় ০৩-০৯-২৪ এ কর্মকমিশনের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে জনপ্রশাসন এ গেজেট এর অপেক্ষারত সরকারী চাকুরী বিধি লংঘনের আরও একটি ইতিহাস সৃষ্টির পথে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাডারের সাথে চরমতম অন্যায়। আমরা সকল ক্যাডারকে আমাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ক্যাডারকে এডহক (নব এনক্যাডার) কর্মকর্তাদের অধীনস্ত করার রেওয়াজ কোনো আইন ও বিধিতেই সমর্থন করে না, শতভাগ অবৈধ বলে জানান।
প্রেসব্রিফিং এ দাবী সমূহ-
১-সকল প্রকার অবৈধভাবে স্হায়ীকরন বাতিল করতে হবে।
২- সকল ধরনের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল করতে হবে,
৩-সকল ধরনের অবৈধ পদায়ন বাতিল করতে হবে
৪. চলমান প্রমার্জনার সকল প্রক্রিয়া স্থায়ী আদেশ ভাবে বাতিল ঘোষণা করতে হবে
৫-এসব অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে বিধিমোতাবেক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
চাকরীতে অনিয়মকারীকে শাস্তি দেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উক্ত কর্মকর্তা নিজেই দোষ স্বীকার করে উল্টো অতীতের অনিয়মের প্রমার্জনা চাচ্ছেন এটা কেমন আব্দার?যেকোনো ধরনের সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য এভাবে এতোগুলো প্রমার্জনার ফাইল সৃষ্টি হওয়া নজীরবিহীন এবং এধরনের ন্যাক্কারজনক অনিয়মের ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসন জগতের ইতিহাসে এই প্রথম বলে জানান।
একদল চাকরীজীবী যারা তাদেরই নিয়োগবিধির শর্ত পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহন না করেই স্থায়ী হয়েছিলো, যারা তাদের সমগ্র চাকরীজীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেয়নি, যারা বিসিএস এ অকৃতকার্য হয়েও এনক্যাডার হয়েছে, এনক্যাডারের পরে পুনরায় বিসিএস ক্যাডারের ৫ টি শর্ত হতে কেনো মাফ পাবে এবং বিসিএস পাশকৃতদের চেয়ে উপরে স্থান পাবে তা তাদের বোধগম্য হয়না। ইতিপূর্বে ও আমরা সংবাদ সম্মেলনের করে গত ০৯ জুলাই ২৪ আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আমাদের সাথে হওয়া সকল প্রকার অন্যায় কথা জানায়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার কথা জানান।
গত ০৩.০৯.২০২৪ এ প্রকাশিত PSC কর্তৃক খসড়া প্রজ্ঞাপনে পরিলক্ষিত যে, BCS recruitment rule 1981 এর rule ৪ এর sub rule 1 এ তারা clause k এবং clause। সংযোজন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কি কারনে তারা এত নতুন করে clause সংযুক্ত করে সরকারী চাকুরির বিধি নতুন করে তৈরী করে তাদেরকে আরও অবৈধ সুবিধা দিতে চাচ্ছে-তা আমাদের বোধগম্য নয়।
অনতি বিলম্বে এ অবস্থা থেকে মুক্তি না পেলে ৩৫০০০ বিসিএস হেলথ ক্যাডার কলম বিরতির মতো কর্মসূচি গ্রহন করার কথাও জানান।