ইকবাল হোসেনঃ বৃহস্পতিবার ২২। আগস্ট বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর-এ অস্থায়ীভাবে কর্মরত ২৯ (উনত্রিশ) জন কর্মচারীকে চাকুরীতে স্থায়ীকরণের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তারা এই দাবি জানান।
,
শফিউল আলম বলেন, আমরা বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে নিম্নোল্লিখিত আমরা ২১/ উনত্রিশ) জন কর্মচারী দীর্ঘদিন যাবৎ অধিদপ্তরের অনুমোদিত জনবলের সেট-আপ (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী বিভিন্ন পদের বিপরীতে কন্টিনজেন্সী ভিত্তিতে/অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত হয়ে যথাযথ নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
তিনি বলেন,বাংলাদেশ গেজেট ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০০ তারিখে প্রকাশিত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১১ সেপ্টেম্বর ২০০০ তারিখের এক বিজলিউশনের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংযুক্ত অফিস হিসেবে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয় (সংযুক্তি-১)। বোর্ড গঠনের রিজলিউশনের প্যারা ১৩ এর ক নিম্নরূপ:
তিনি আরো বলেন,সরকারের অনুমোদনক্রমে বোর্ডের কার্যক্রম দক্ষতার সহিত সম্পাদনের নিমিত্তে বোর্ড প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে। এই সকল কর্মর্তা ও কর্মচারীগণ বোর্ডের কর্মচারী বলিয়া গণ্য হইবেন”। নতুন সৃজিত বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে প্রাথিত কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। প্রায় দীর্ঘ ২৪ (চব্বিশ) বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজে করে যাচ্ছি।গত ২৪ জুলাই ২০১৬ তারিখের ৪২.০৩১.০২২,০০,০০,০২৫,২০১৫-৫৯২ নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডকে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করা হয়। অধিদপ্তর গঠনের লক্ষ্যে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের প্যারা-০৪ এ উল্লেখ আছে “বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ এ প্রজ্ঞাপন জারির অব্যবহিত পূর্বে যে শর্তাধীনে চাকুরিতে নিয়োজিত ছিলেন, এ প্রজ্ঞাপনের বিধান অনুযায়ী পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, সেই একই শর্তে অধিদপ্তরের চাকুরিতে নিয়োজিত থাকবেন এবং পূর্বের নিয়মে বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্ত হবেন,এছাড়াও, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডকে অধিদপ্তর গঠন সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ০৫-০১-২০১৬ তারিখের স্মারক নং- ০৭.১৫৩.০২৯.০৬.০০.১.২০১৫-০৩ এর শর্ত (খ) এ উল্লেখ আছে “বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডে” এর বিদ্যমান জনবল দ্বারাম প্রস্তাবিত “হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের” কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।
তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন জয়িনপ্তার ১১৮টি অনুমোদিত পথ রয়েছে। “বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্ত কেমানতী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৯” চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে অদ্যাবধি কোন নিজস্ব জনবল নাই। দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ অস্থায়ীভাবে কর্মর কর্মচারীদের কার্যক্রমের দ্বারাই এই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে আছে। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান যে দাপ্তরিক অবকাঠামো তা’ এই সকল অস্থা কর্মচারীদের দ্বারাই সৃষ্ট। অধিদপ্তরের সকল কার্যক্রম অস্থায়ী কর্মচারীদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছে। অস্থায়ীভাবে কর্মরত এই সক কর্মচারী বীর্ঘদিন যাবৎ নিস্বার্থ ও নিরলসভাবে শ্রম, সময় ব্যয় করে ও কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে অস্তিত্ব টিকিয়ে দেখেছে। কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পায়। কিন্তু তারা পূনাঙ্গ বেতন পায়না।
তিনি বলেন,তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মচারী চাকরী ছেড়ে দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদেরকে নিরুৎসাহিত করে প্রতিশ্রুি প্রধান করেন খুব শীঘ্রই আপনাদের চাকরী আয়ীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং চাকরী স্থায়ীকরণের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ সকল প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত হয়ে কর্মচারীদের অনেকে সরকারী চাকুরীতে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মে প্রবেশের বয়সসীমা অতিক্রম করেছে। পরিবা পরিজন নিয়ে এই চাকুরীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মচারীরা তাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় ও শ্রম ব্যাল করে এ প্রতিষ্ঠানটিকে তৈরী হতে সাহায্য করেছে অথচ আজিআমরা অনিশ্চিত ও বিপদসংকুল ভবিষ্যতের সামনে দাড়িয়ে আছি। অধিদপ্তরে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হবে। অধিদপ্তরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায়, অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মচারীদের চাকুরীতে স্থায়ী করা না হলে আমাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে।এমতাবস্থায়, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কর্মচারীগণ ন্যায় বিচারের জন্য মহামান্য আদালতের দারস্থ হয়ে চাকরী স্থায়ীকরণের জন্য মামলা করতে বাধ্য হই। আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী কিছু সংখ্যক কর্মচারী ২৪/০৫/২০১৬ তারিখে চাকুরী নিয়মিতকরণের জন্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা রুজু করি। মামলার ফলশ্রুতিতে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতিগণ রীট মামলা নং ৬৩০১/২০১৬ এব রায়ে কর্মচারীগণের চাকুরী নিয়োগ/স্থায়ীকরণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাপূর্বক রাজস্ব খাতে নিয়মিতকরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন (সংযুক্তি-৪)। পরবর্তীতে আরো কিছু সংখ্যক কর্মচারী ১৬/০৭/২০১৮ তারিখে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা রুজু করেন। মায়লার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতিগণ রীট মামলা নং ৯২২২/২০১৮ এর রায়ে কর্মচারীগণের চাকুরী নিয়োগ/স্থায়ীকরণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাপূর্বক রাজস্ব খাতে নিয়মিতকরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন (সংযুক্তি-৫)। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য কর্মচারীদের পক্ষ হতে মহাপরিচালক, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করা হয় (সংযুক্তি-৬)। কিন্তু উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করে রায়ের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করেন। বর্তমান মহাপরিচালক মহোদয় গত ১২-০১-২০২৩ তারিখের ১০ নং স্মারক মূলে যেহেতু আপীলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের কোন স্বার্থ নাই, সেহেতু আপীল প্রত্যাহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মামলা মোকদ্দমা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে অধিদপ্তরকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান রূপে গঠনের জন্য কর্মরত কর্মচারীদের দ্রুত নিয়মিতকরণ প্রয়োজন মর্মে সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাছে দাবি জানাচ্ছি।
উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়ক শফিউল আলম, শহিদুল ইসলাম কাঞ্চন, মোঃ মামুন মিয়া মোঃ জসিম উদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।