নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
আজ রাজধানীর মতিঝিলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং দপ্তর-সংস্থার পক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ এপিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সকলের জীবনে শুদ্ধাচার গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৈতিকতা বাদ দিয়ে শুদ্ধাচার সম্ভব নয়। শুদ্ধাচার চলমান থাকলে জীবনে পথচলা অনেক সহজ হয়। অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, বিবেককে জাগ্রত রাখে। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রবর্তিত এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গাইডলাইন স্বরূপ। এর মাধ্যমে তারা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে মন্ত্রণালয় তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রবর্তনের ফলে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। যারা আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনা ও সেবায় নিযুক্ত হবেন তারা এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবেন। মন্ত্রী এসময় এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সততা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমি যখন এ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করি, তখন সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে এপিএ’তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ছিলো একেবারে নিচের দিকে। সকলের সহযোগিতায় গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯৭.৮৫ নম্বর নিয়ে এটিকে ১৩তম অবস্থানে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, এ বছর এপিএ’তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অবস্থান আরো উন্নীত করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, পুরস্কার বড় কথা নয়, মূল্যায়ন বা স্বীকৃতিই হলো আসল। আর কাজ করলেই কেবল মূল্যায়ন বা স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে এবং এটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এপিএ স্বাক্ষরকারী ১৩টি দপ্তর-সংস্থা হচ্ছে যথাক্রমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ), ন্যাশনাল প্রোডাক্টটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও), বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম), বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমসিআইএফ), বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এবং প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এপিএ’তে শিল্প মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ স্থান অর্জনকারী ৩টি প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে বিএসটিআই, প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় ও বিসিক।
মন্ত্রী এরপর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য পাঁচ জন ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য চার জন সহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের মোট নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে শুদ্ধাচার পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসাবে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্ধারিত ফরম্যাটে একটি সার্টিফিকেট ও একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থার প্রধানদের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন, ০২-০৯ গ্রেডের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন, ১০-১৬ গ্রেডের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন এবং ১৭-২০ গ্রেডের মধ্য থেকে যৌথভাবে ০২ (দুই) জনসহ মোট ০৫ (পাঁচ) জনকে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হচ্ছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এর সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম এবং অফিস সহায়ক উত্তম কুমার চক্রবর্তী ও মুকুল ইসলাম।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থার প্রধানদের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন, ০২-০৯ গ্রেডের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন, ১০-১৬ গ্রেডের মধ্য থেকে ০১ (এক) জন এবং ১৭-২০ গ্রেডের মধ্য থেকে ০১ (এক) জনসহ মোট ০৪ (চার) জনকে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হচ্ছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আফরোজা বেগম পারুল, কম্পিউটার অপারেটর প্রানেশ দাশ জয় ও অফিস সহায়ক লিটন মিয়া।
উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভিশন, মিশন, কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ এবং কার্যাবলীর আলোকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৩টি দপ্তর-সংস্থা তাদের নিজস্ব ভিশন, মিশন কৌশলগত উদ্দেশ্য, কার্যাবলী, বাজেট বরাদ্দ ইত্যাদি বিবেচনা করে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন করেছে। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি, ফলাফলধর্মী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদান এবং কর্মকৃতি বা Performance মূল্যায়নের লক্ষ্যে সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছর হতে সরকারি অফিসসমূহে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ বা Annual Performance Agreement (APA) প্রবর্তন করে।