নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জাপানে ফেলোশিপ ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাবেন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাথে জাপান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিএমএ) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে প্রতিবছর বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা জাপানে ফেলোশিপ ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাবেন। আর এই ট্রেনিংয়ের সকল ব্যয়ভার বহন করবে জাপান বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার ৮ জুন ২০২৪ইং তারিখে সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইউয়ামা কিমিনোরি। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক (Prof. Dr. Deen Mohd. Noorul Huq) । এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ডিপাটেমেন্টের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসকরা জাপানের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন থেকে ছয় মাসের উচ্চতর ফেলোশীপ ট্রেনিং এর সুযোগ পাবেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (Prof. Dr. Mohammed Atiqur Rahman), উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, ডিন অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, জাপান বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শেখ আলীমুজ্জামান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের খুবই ভালো সম্পর্ক। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালনা করছে। সাসাকা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশি চিকিৎসকদের স্কলারশিপও দিয়ে থাকে। আমরা চাই চিকিৎসা খাতে জাপানের সঙ্গে আমাদের এই সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জাপান বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাষ্ট্র। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা অনেক বেশি এগিয়ে। তবে জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, সেসময় এই হাসপাতালের এতো সংখ্যক রোগী দেখে তিনি যথারীতি অবাক হয়েছেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে জানতে চেয়েছেন অল্প সক্ষমতা ও এই জনবল দিয়েও আমরা কীভাবে এতো সুন্দর চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করছি। এসময় তিনি আমাদের চিকিৎসকদেরও প্রশংসা করেছেন। আমরা তাকে জানিয়েছি যে, আমাদের অসংখ্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক আছে, যাদের অনেকেই ঢাকার বাইরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আমাদের এই চিকিৎসকরা জাপান সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও অনেক এগিয়ে যাবে।
জাপানি রাষ্ট্রদূত ইউয়ামা কিমিনোরি (Mr. IWAMA Kiminori) তার বক্তব্যে বাংলাদেশে স্বল্প জনবল ও সক্ষমতায় সুন্দর চিকিৎসা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সাথে আমাদের কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। তারা এখনও দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে জড়িত। সবমিলিয়ে জাপানের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, দেশের অসংখ্য চিকিৎসক জাপানে স্কলারশিপে প্রশিক্ষণে যায়। আমরাও বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে জাপানের এসব প্রশিক্ষণ ও স্কলারশিপে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই তাদের সাথে আমাদের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। আমরা আশা করছি, চিকিৎসা সেবা ও প্রশিক্ষণে সবসময় জাপান আমাদের পাশে থাকবে। এমনকি বিএসএমএমইউ বাংলাদেশে স্মার্ট হেলথ সিস্টেমের জন্য কাজ করছে, আমরা চাই আমাদের এই কর্মযজ্ঞেও জাপান আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করুক।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৯ মে ২০১৯ টোকিওতে বাংলাদেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন জাপান বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (জেবিএমএ) এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. হিরোয়ুকি সাকুরাই। জেবিএমএ ২০১৩ সাল থেকে বর্তমানে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এর উদ্যোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সাজর্নদের জাপানের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ফেলোশীপ ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করে আসছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এখন থেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জনদের পাশাপাশি অন্যান্য ক্লিনিক্যাল বিষয়ের বিশেষজ্ঞরাও উচ্চতর ফেলোশীপ এর সুযোগ পাবেন। নিউজ: প্রশান্ত মজুমদার। ছবি: সোহেল গাজী।