নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর! এই উপলক্ষে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের পক্ষ থেকে সকাল ৯.০০ টায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থান ও সাভারের অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় । জুরাইন ও সাভারে মানববন্ধন এবং জুরাইন কবরস্থান ও অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্র্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও মফিদুল ইসলাম মোহন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরূল আহসান, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা ও জিস্কপ এর যুগ্ন সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল ও খালেকুজ্জামান লিপন, সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলের স্কপের সমন্বয়কারী জনাব এ্যাডভোকেট আবদুল আওয়াল, জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রমিলা পোদ্দার, কর্মজীবি নারীর কাজী গুলশান আরা দীপা, নারী পক্ষের আফসানা সেহরী, বিলস এর নির্বাহী পরিচালক জনাব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, কোর্ডিনেটর একেএম মনিরুল কবীর, চৌধরী বোরহান উদ্দিন, জাকিয়া বেগম নীলিমা, মৌসুমী নিশাত শিমুল উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও ব্লাস্ট, কর্মজীবি নারী , অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটির প্রতিনিধিগণ এবং জাতীয় ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দগণ উপস্থিত ছিলেন ।
সাভারের অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মানববন্ধন শেষে সকাল ১১টায় সোশ্যাল আপলিফটমেন্ট সোসাইটি (সাস), মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন: কর্মজীবী নারী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিরীন আখতার, বিলস্-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, জি-স্কপ এর যুগ্ম সমন্বয়ক নইমুল আহসান জুয়েল, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি কামরূল আহসান, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রচারণা সম্পাদক মফিদুল ইসলাম মোহন, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের দফতর সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সদস্য-সচিব (ভারপ্রাপ্ত) সেকান্দার আলী মিনা, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান মো. আব্দুল আলীম প্রমুখসহ আরও উপস্থিত ছিল স্কপ ও জি- স্কপের নেতৃবৃন্দ, রানা প্লাজা ট্রাস্ট্রের প্রতিনিধি, মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, স্থানীয় সাভার আশুলিয়া অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ, দুর্ঘটনাস্থলের উদ্ধারকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, আহত শ্রমিকেরা এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যগণ।
জাতীয় নেতা শিরীন আখতার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আজ রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর কিন্তু এখনও এই ঘটনার সাথে জড়িতদের কোন বিচার হয়নি। তিনি বলেন , আহত শ্রমিকদের দাবি পূরণে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, জাতীয় ফেডারেশন/ট্রেড ইউনিয়নসহ সকলকে সমন্বিতভাবে করে কাজ করতে হবে এবং এই উদ্যোগ এখন থেকে শুরু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রানাপ্লাজার এই ভুক্তভোগী শ্রমিকদের যে কোন সহায়তায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে উদ্যোগ গ্রহণের ব্যবস্থা করার জন্য শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম থেকে আহ্বান জানান। বিলস্-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্রাস্ট-এর ভূমিকাকে আরও জোরদার করতে হবে এবং ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে আহত শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ট্রাস্টের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
সভায় সাভার আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা জিন্নাহ-উল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজার জমি সরকার অধিগ্রহণ করে আয়ের উৎস তৈরি করতে এই জমিকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা পোষণ করেন যাতে দুর্ঘটনার শিকার আহত শ্রমিকসহ নিহত শ্রমিকদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা যায়।
এই অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় রানা প্লাজার ভুক্তভোগী আহত শ্রমিকেরা তাদের চলমান দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তারা রাষ্ট্রের কাছে তাদের আজীবন চিকিৎসা খরচসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থার দাবি করেন । আহত শ্রমিক শিলা’র করুণ আর্তনাদ, ‘‘আমি একজন সুস্থ মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি কিন্তু রানা প্লাজার দুর্ঘটনা আমাকে প্রতিবন্ধী বানিয়েছে। আজ আমি পরিবারের বোঝা। আমাকে মানুষের মুখাপেক্ষী হয়ে দিন কাটাতে হয়। এই দুঃখ কোথায় রাখি। আমি বেঁচেও মৃত। আমার মত আরও অনেকে এই করুণ জীবন-যাপন করছে’’।
আজকের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা থেকে উল্লেখযোগ্য দাবীগুলি হল:-রানা প্লাজা ও তাজরীনসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ভাই- বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে শ্রমিকদের সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি মনোসামাজিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
নির্মাণ, রাসায়নিক, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শনে দেশব্যাপি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ন্যয়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং সবার জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সকল শ্রমিককে বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
কর্মক্ষেত্রের সকল দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধে দুর্ঘটনার অবহেলাজনিত বা অন্যান্য সকল কারণ নির্ণয় করতে হবে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং সাভার ও জুরাইনে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে হবে।