রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ভূগোল বলছে পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু বিজ্ঞানের সূক্ষ্ম গবেষণা বলছে, এই চিরচেনা হিসাব চিরস্থায়ী নয়। মহাকাশে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ক্রমশ মন্থর হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে ঘড়ির কাঁটা আর ২৪ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ থাকতে নাও পারে। বরং দিন হতে পারে ২৫ ঘণ্টা।
দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর আবর্তন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর এই গতি কমে যাওয়ার নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করছে চাঁদ। চাঁদের মহাকর্ষীয় শক্তির টানে পৃথিবীতে যে জোয়ার-ভাটা হয়, তা কেবল সমুদ্রের জলরাশিকেই প্রভাবিত করে না বরং পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ওপর অনেকটা ‘ব্রেক’-এর মতো কাজ করে।
চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি যখন ফুলে ওঠে এবং পরে আবার আছড়ে পড়ে, তখন সমুদ্রের তলদেশে এক ধরণের প্রচণ্ড ঘর্ষণ তৈরি হয়। এই ঘর্ষণই পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরার গতিকে অতি সামান্য পরিমাণে হলেও কমিয়ে দিচ্ছে প্রতি বছর। এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে শক্তির এক ধরণের আদান-প্রদান চলে, যার ফলে চাঁদ নিজেও ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
যদিও এই মন্থর হওয়ার প্রক্রিয়াটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ধরা পড়ে না। তবে মহাকাশ গবেষকদের কাছে এর সূক্ষ্ম হিসাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সূর্যের সাপেক্ষে এবং অন্যান্য দূরবর্তী নক্ষত্রের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির যে তারতম্য হয়, তা বিজ্ঞানীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। আধুনিক সময় গণনা পদ্ধতিতে এই সামান্য চ্যুতি মেলাতে গবেষকরা মাঝেমধ্যেই ‘লিপ সেকেন্ড’ ব্যবহার করেন। আমেরিকার নৌ পর্যবেক্ষণ ঘাঁটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত এই সময়ের হিসাব পর্যালোচনা করে থাকে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ছিল বর্তমানের চেয়ে অনেক কম। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি এভাবে কমতে থাকলে সুদূর ভবিষ্যতে সময়ের হিসাবে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। তখন দিন আর ২৪ ঘণ্টায় শেষ হবে না। মানবসভ্যতাকে হয়তো একদিন নতুন এক সময়ের কাঠামোর সাথে মানিয়ে নিতে হবে, যেখানে একটি দিন হবে ২৫ ঘণ্টার। পৃথিবীর এই মন্থর হয়ে যাওয়া কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং মহাজাগতিক এক দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনেরই অংশ।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

