রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : লালচে আভায় ঢাকা মঙ্গল গ্রহ বহুদিন ধরেই মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। খালি চোখেই দেখা যায় এর লাল রঙ। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মঙ্গলের এই রঙ এসেছে হেমাটাইট নামের এক ধরনের শুকনো লৌহ অক্সাইড খনিজ থেকে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা সেই পুরোনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মঙ্গলের লাল রঙের মূল কারণ হতে পারে ফেরিহাইড্রাইট নামের আরেকটি খনিজ। এটি একটি পানিযুক্ত লৌহ যৌগ (পানি ও লোহার সংমিশ্রণে তৈরি খনিজ)। এই খনিজ মঙ্গলের ধুলিকণায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে এবং মাটির নিচের পাথুরে স্তরেও থাকতে পারে।
গবেষণায় নাসার মার্স রিকনিসেন্স অরবিটার, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মার্স এক্সপ্রেস ও এক্সোমার্স মিশন এবং নাসার বিভিন্ন মার্স রোভারের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব তথ্য থেকে দেখা যায়, ফেরিহাইড্রাইটের উপস্থিতি আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে শুরু হওয়া মঙ্গলের আমাজোনিয়ান যুগে (মঙ্গলের দীর্ঘ এক সময়কাল) খুব কম পানি থাকা অবস্থায় পাথরের ক্ষয় ও জং ধরার প্রক্রিয়ায় হেমাটাইট তৈরি হয়। সেই হেমাটাইটই মঙ্গলকে লাল করেছে। পৃথিবীতে মরিচার লাল রঙও একইভাবে লৌহ যৌগ থেকে আসে।
তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষাগারে তৈরি কৃত্রিম মঙ্গল মাটি—যেখানে ব্যাসল্ট পাথরের সঙ্গে ফেরিহাইড্রাইট মেশানো হয়েছিল—তা মঙ্গলের বাস্তব তথ্যের সঙ্গে বেশি মিল দেখিয়েছে। হেমাটাইটের চেয়ে এই মিল অনেক স্পষ্ট।
ফেরিহাইড্রাইট তৈরি হতে অক্সিজেন ও পানি দুটিই প্রয়োজন। আজকের মঙ্গল গ্রহ শীতল ও শুষ্ক হলেও প্রাচীন মঙ্গলে পানি ও অক্সিজেন থাকার প্রমাণ আছে। পৃথিবীতে এই খনিজ দ্রুত অন্য লৌহ অক্সাইডে রূপ নেয়। কিন্তু মঙ্গলে একবার তৈরি হলে এটি দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই গবেষণা মঙ্গলের অতীত পরিবেশ ও সেখানে কখনো পানি ছিল কি না—সে বিষয়ে নতুন ধারণা দিচ্ছে।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

