নিজস্ব প্রতিনিধি :রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম–খতীবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে ইমাম ও খতীবদের ভূমিকা শীর্ষক জাতীয় সেমিনার ২০২৫ ইং।
ইমাম–খতীবদের দ্বীনি দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সামগ্রিকভাবে খতীব সমাজের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় ইমাম ও খতীব সংস্থা বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে ইমাম ও খতীবদের ভূমিকা শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে সংগঠনের পক্ষ হতে এ দাবি উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ইমাম ও খতীব সংস্থা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান, মাওলানা মুফতি আবু তাহের আল মাদানি।
সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মুফতি আতাউর রহমান আলমপুরীর সঞ্চালনায় ইমাম ও খতীবদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব, মাওলানা মীর ইদরিস, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশের বোড অব গভর্নরস সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ্ নেছারুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব, আলহাজ্ব আতিকুর রহমান নান্নুমুন্সী, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব, হাফেজ মাহমুদুল হক হাফেজ্জী, জাতীয় ইমাম পরিষদের সভাপতি, মাওলানা মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া প্রমুখ।
ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে ইমাম ও খতীবদের ভূমিকা শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে দেশের বরেণ্য ইমাম-খতীব ও ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুফতি আবু তাহের আল মাদানি জাতীয় ইমাম ও খতীব সংস্থা বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

১।
জাতীয় মানসম্মত বেতন কাঠামো ও সমতা নিশ্চিতকরণ।
প্রতিটি ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিনের জন্য জাতীয়ভাবে একীভূত বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে, এবং এটিকে নূন্যতম জাতীয় বেতন স্কেলের সাথে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
২।
সুদমুক্ত আবাসন ঋণ (হাউজিং সাপোর্ট)।
ইমাম–খতিবদের আবাসন সংকট সমাধানে ওয়াকফ ফান্ড বা সরকারি সহযোগিতায় সুদমুক্ত গৃহঋণ চালু করতে হবে।
৩।
মসজিদের ইউটিলিটি বিল হ্রাস।
বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাসকে “ধর্মীয় স্থাপনা” ক্যাটাগরি ঘোষণা করে বিশেষ ছাড় ও বিল কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪।
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্ড প্রদান।
ইমাম–খতিব এবং তাদের পরিবারের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কার্ড প্রবর্তন করতে হবে।
৫।
সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার নিশ্চিত।
শিক্ষা,স্বাস্থ্য,সামাজিক নিরাপত্তাসহ সকল রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ইমাম-খতিব ও শিক্ষক সমাজকে জাতীয়ভাবে “প্রথম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি” হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
৬।
জাতীয় ইমাম ডাটাবেস তৈরি
ইমাম–খতিবদের যোগ্যতা, অবস্থান ও চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে একটি একীভূত ডিজিটাল জাতীয় ডাটাবেস তৈরি করতে হবে।
৭।
ইমাম সুরক্ষা ও মর্যাদা আইন প্রণয়ন।
ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সময় ইমাম ও খতিবদের ওপর হুমকি, লাঞ্ছনা ও সহিংসতা রোধে তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পৃথক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৮।
জাতীয় শুরা বোর্ড গঠন
ইসলামিক গবেষণা, ফতোয়া প্রণয়ন, সামাজিক পুনর্বাসন, দাম্পত্য বিরোধ সমাধান ও সমাজে শান্তি রক্ষার জন্য একটি কেন্দ্রীয় জাতীয় শুরা বোর্ড গঠন করতে হবে।
৯।
দরিদ্র ও প্রবীণ ইমামদের জন্য বিনামূল্যে হজ সুবিধা।
প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক দরিদ্র, প্রবীণ ও অসচ্ছল ইমাম–খতিবদের সরকারি তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে হজ পালনের সুযোগ করে দিতে হবে।
১০।
মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে ইমামদের আইনি সুরক্ষা।
ধর্মীয় বক্তব্য বা সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমের কারণে ইমাম–খতিবদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানিমূলক আচরণ রোধে বিশেষ আইনি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

