আরিফ বিল্লাহ।নেছারাবাদ(পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ নারী পুনর্জাগরনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৫ তম জন্ম এবং ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরুপকাঠী) পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পাঁচজন সফল নারীকে জয়িতা সন্মাননা (ক্রেষ্ট ও সনদ) প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে ওই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা আক্তার জানান, এ বছরও উপজেলা থেকে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না, গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী মোসাঃ নিলুফা ইয়াসমিনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। নিলুফার পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও ১২ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়া এবং সেই বয়সে বিয়ে হওয়া ও নানা টানপোড়নের মধ্য তার স্বামী ঢাকার চাকরী ছেড়ে চলে আসেন যেহেতু তার স্বামীর বিভিন্ন খেলার সামগ্রী তৈরী করার ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, সেহেতু বাড়িতে বসেই খেলার সামগ্রী তৈরী শুরু করে। এভাবে কিছুদিনের মধ্যে ক্রিকেট ব্যাট তৈরীর বিভিন্ন কলাকৌশল, বিশেষ করে এর কাঁচামাল এবং গুনাগুন সম্পর্কে পূর্ন অবগত হন তারা। পরবর্তিতে বাজারেও তার তৈরী ব্যাটের চাহিদা বাড়তে লাগলো সে বিদেশেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন। এভাবে সে স্বাবলম্বি হয় বর্তমানে সে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি।
শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আশুতোষ হালদারের নেয় প্রিয়ংকা হালদারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। প্রিয়ংকার পিতার ছোট একটা লোহার দোকান ছিল সেটা দিয়ে তাদের সংসার চলত। তার মধ্যেও সে পড়াশেনার হাল ছাড়েনি নিজের মনোবল ও চেষ্টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে অর্নাস ও মাস্টাস সম্পূর্ন করে। তারপরে চাকরীর জন্য পড়াখোলা শুরু করে এর পাশাপাশি টিউশনি করে। পরবর্তিতে তার ৪০ তম বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার) এ চাকরি হয় এরপর সে ৪১ তম বিসিএস (বন ক্যাডার) চাকরি হয় এবং বর্তমানে সাতক্ষিরায় বন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বরুপকাঠী পৌরসভার মোঃ শাহনাজ আকনের স্ত্রী মোছাঃ রিনা বেগমকে সফল জননীর সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ম্যাধমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা কালীন তার মা-বাবা বিয়ে দিয়ে দেয় এবং মাত্র অল্প বয়সে ৩ সন্তান জন্ম হয়। তার স্বামীর একটি চায়ের দোকানের আয় থেকে তিন সন্তানের পড়াশুনা যখন চলছিল না তখন সে বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ীতে ছোট একটি মুরগীর খামার দেয় সেই আয়ের সকল টাকা সে তার সন্তানদের লেখাপড়া পিছনে ব্যয় করত। আয়ের কিছু টাকা জমিয়ে নেছারাবাদ উপজেলার সামনে স্বামীকে একটি ভাতের হোটেল দিয়ে দেয়। তার বড় ছেলে মোঃ রাসেল আকন বর্তমানে গাওখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক। ২য় ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান বর্তমানে ডাচ বাংলা ব্যাংকে কর্মরত আছে। আর ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপর অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে সে এখন চাকুরি প্রত্যাশী।
সারেংকাঠী ইউনিয়নের মধ্য- করফা গ্রামের দিলিক কুমার হালদারের স্ত্রী শিবানী হালদারকে নির্যাতনের দুঃস্বপ্ন মুছে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তার বিবাহের ৬ মাসের মাথায় তার স্বামী স্টোক করে মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার ২ বছরের মধ্যে শ্বশুর বাড়ীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শ্বশুর বাড়ী ত্যাগ করে বাবার বাড়ী মায়ের কাছে চলে যায় এবং সে একটি চায়ের দোকান দেয় পরবর্তীতে চায়ের দোকানের পাশাপাশি কাপড়ের দোকান দিয়ে মেয়েকে অনেক কষ্ট করে মানুষের মত মানুষ করে বিবাহ দিয়েছে। বর্তমানে সে পূর্বের দুঃস্বপ্ন মুছে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী হিসেবে নতুন উদ্যোমে জীবন অতিবাহীত করতে পেরেছে।
গুয়ারেখা ইউনিয়নের রোংগাকাঠী গ্রামের গৌতম বড়ালের স্ত্রী মিলি রানী সুতার সমাজে উন্নয়নে অবদান রাখায় সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। বাবা পুলিশে চাকরী করত। বাবা মারা যাওয়ার কারনে তার পড়াশুনা চালানো অসম্ভব ছিল, পরিবার সামলানোর পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজে বাল্য বিবাহ রোধ, প্রতিবন্ধিদের বিভিন্ন সেবা, মাদক বিরোধী উঠান বৈঠক, স্কুল ঝড়েপড়া রোধ, দরিদ্র ও অসহায়দের ভাতা প্রদানে সাহায্যসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত হয় সে এবং বাল্য বিবাহ রোধে এলাকায় একটি কমিটি গঠন করে। মহিলা পরিষদের কাজেও নিজিকে সম্পৃত্ত করেন। তিনি বর্তমানে গুয়ারেখা ইউনিয়নের ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দত্তের সভাপতিত্বে অনুস্ঠানে উপস্হিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) রায়হান মাহমুদ,আরডিএ
অফিসার মাহবুবুল হাসান শিবলী,কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ছাত্র প্রতিনিধি গনমাধ্যমকর্মী এবং গনমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্হিত ছিলেন।

