নিজস্ব প্রতিনিধি :খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন এক নাম, যিনি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছেন। বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন। যাকে বাংলাদেশের মানুষ ‘আপোষহিন নেত্রী’র খেতাবে ভুষিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষের সেই প্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশের রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল বিভেদ ভুলে মতপার্থক্য থাকার পরও দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রার্থনা করেছেন তার সুস্থতার জন্য। এ এক বিরল ঘটনা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধীক্ষনে দাঁড়িয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে আজ যে অভূতপূর্ব ঐক্য ও উদ্বেগ দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গভীরতা, জনগণের আবেগ এবং রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে তাঁর অবস্থান আবারও উজ্জল হয়ে উঠেছে
ধ্রুবতারা হলো রাতের আকাশে একটি উজ্জ্বল ও স্থির তারা যা উত্তর মেরুর উপরে অবস্থান করে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির আকাশেই তেমনই একজন ধ্রুবতারা হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের মে মাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবকাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন শাহাদাত বরন করতে হয় তখখন খালেদা জিয়া নিতান্তই একজন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোন অনুষ্ঠানেও তাকে খুব বেশী দেখা যেতো না। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে বিচারপতি সাত্তারকে অপসারণ করে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। একদিকে দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতার এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগদান – এই দুই পরিস্থিতিতে বিএনপি তখন অনেকটা ছত্রভঙ্গ, বিপর্যস্ত এবং দিশেহারা। ঠিক তেমনই এক মুহুর্তে দল ও জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রয়োজনে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।
৪৪ বছর আগে কঠিন ও দুর্যোগময় সময়ে বেগম খালেদা জিয়া দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল— বিএনপির। সেই থেকে বারবার মুখোমুখি হয়েছেন নানা উত্থান-পতন, চড়াই – উৎড়াই ও ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে। সবকিছু মোকাবেলা করেন তিনি, কোনোকিছুই টলাতে পারেনি তাকে। পাঁচবার হয়েছেন কারাবন্দী। সহ্য করেছেন নির্যাতন ও লাঞ্চনা। তবুও দলের নেতৃত্ব দিতে কখনোই পিছুপা হননি বেগম জিয়া। অটল ও অবিচল থেকেছেন সকল সময়। দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে একবারে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও শক্তহাতে এগিয়ে নিয়েছেন নি দলকে। ওয়ান ইলেভেনের বিরাজনীতিকরণের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখেও দেশত্যাগ করতে বাধ্য করতে পারেন নাই তাকে তৎকালিন সরকার।
১৯৮১ সালের ৩০মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয় তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তখন ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছিলেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তখন দিশেহারা ও বিপর্যস্ত। জিয়াউর রহমান পরবর্তী দলের হাল কে ধরবেন—এ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। নেতাদের মধ্যে শুরু হয় কোন্দল। তখন ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। তার বয়স তখন আনুমানিক ৭৮ বছর। তখনকার রাজনীতিতে সাত্তারকে একজন বৃদ্ধ এবং দুর্বল চিত্তের ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো।
তাই দলের একটি অংশ চেয়েছিল কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বের কাঠামো ঠিক করা হোক। কিন্তু অপর আরেকটি অংশ, যারা রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের সরকারে ছিলেন, তারা এর বিরোধিতা করেন। এ বিষয়ে প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তার চলমান ইতিহাস : জীবনের কিছু সময় কিছু কথা বইতে লিখেছেন, “সামরিক ও শাসকচক্রের জন্য সবচেয়ে বড় ভয় ছিল খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারণ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য খালেদা জিয়াই সে সময় সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হতে পারতেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আব্দুস সাত্তারের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। ” তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদ চেয়েছিলেন, সাত্তার প্রেসিডেন্ট হোক। বিষয়টি নিয়ে তখনকার বিএনপিতে মতভেদ দেখা দেয়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেনা প্রধানের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আরো লিখেছেন, “বেগম জিয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইতেন, তাহলে অন্য কারো প্রার্থী হওয়ার তখন আর প্রশ্ন উঠতো না।” জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তখন খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যেত না। খালেদা জিয়া যখন রাজনীতিতে আসেন সেটা অনেককে চমকে দিয়েছিল। ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পর্বতসম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এর পর ক্ষমতা দখল করেন আরেক সেনা প্রধান, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদের শাসন আমলে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সে সময়ে আওয়ামী লীগ ছিলো সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। ৮৬ সালে এরশাদ এক নির্বাচন আয়োজন করলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এরশাদের আয়োজিত ৮৬’র নির্বাচনে অংশ নেয়। আর সে সময় অনেকেই আওয়ামী লীগকে জাতীয় বেইমান বলেও আক্ষ্যায়িত করেন। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ বা জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলো না। করলে হয়ত শেখ হাসিনার মতো বেগম জিয়াও বিতর্কিত হতেন। সেই সময়ই দেশবাসী তাঁকে ‘আপোষহীন নেত্রী’ বলে অবিহিত করতে থাকেন। ৮৬’র নির্বাচনে অংশ না নিলেও খালেদা জিয়া তথা বিএনপির জনপ্রিয়তা উঠে গেল তুঙ্গে। ৯১ সালে এরশাদের পতন হলো। তত্ত্বাবধয়ক সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল’, এমন বিশ্বাস থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে থেকেই মন্ত্রিসভা ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু জিতে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি। অনেক বিশ্লেষকের মতে ৮৬’র নির্বাচনে এরশাদের সাথে আপোষ না করার কারণেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো বিএনপি। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে পূর্ণ মেয়াদ শাসন করলেন বেগম খালেদা জিয়া। মেয়াদ শেষে তিনি দলীয় সরকারের অধীনেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন দিলেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে এটি ছিলো একটি রাজনৈতিক ভুল। একই ভুল ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাও করেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া যখন দেখলেন এই নির্বাচনের পক্ষে জনগণের সমর্থন নেই, তখন তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলেন না, কোন আন্দোলনকারীর উপর গুলিও চালালেন না। তিনি তার ভুল সুধরে নিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচন দিলেন।
তার নেতৃত্বগুণে ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে বিএনপি। খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী। এই মেয়াদ শেষে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরই ২০০৭ সালে, দেশের রাজনৈতিক আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ফখরুদ্দীন ও মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে বিরাজনীতিকরণের নীলনকশা প্রস্তুত করা হয়।আর এরই অংশ হিসেবে বেগম জিয়াকে বিদেশের পাঠানো চক্রান্ত প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু বরাবরের মতো সেবারও অদম্য থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন। মাথা নত না করে অটল থাকেন তিনি। অবেশেষে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ওয়ান ইলেভেনের সময় নানাভাবে চাপে পড়ে যায় বিএনপি। তবে কারামুক্ত হয়েই বিএনপিকে গোছানোর কাজে নেমে পড়েন খালেদা জিয়া। নবম সংসদ নির্বাচনের সময়, সারাদেশ ঘুরে ঘুরে জনসভা ও পথসভা করেন তিনি। সেই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের রাজনীতি তখন প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে। ঢাকা সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার ২৮ বছরের আবাসস্থল কেড়ে নেয়া হয়।
২০০৯ সালের বিডিয়ার হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনা, এসব নিয়ে ১৪’র নির্বাচনের আগে অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেন না, এমনকি এই প্রথাই বাতিল করে দিলেন। বেশ কিছু সূত্র থেকে জানা যায় সে সময়ে শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে ২০১৪ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিনিময়ে বেশ কিছু মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এই বারও আপোষ করলেন না খালেদা জিয়া। ‘তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন’ এই দাবিতে অনড় ছিলেন তিনি। ফলাফল বিএনপি ২০১৪ নির্বাচনও বর্জন করলো। ১৪’র একতরফা নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জিতলো। সে সময়ে বেগম জিয়া বলেছিলেন, “আওয়ামীলীগকে আমাদের কিছু করতে হবে না। ওরা নিজেরাই একদিন পচবে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে।”
কোনভাবেই যখন বেগম জিয়া শেখ হাসিনার সাথে আপোষ করলেন না। তখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁকে সাজা দেয়া হলো। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও ২০১৬ সালের ২৯শে জুলাই পুরোনো কারাগারটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় এবং সব কয়েদীদের নবনির্মিত ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ, ২০১৮ তে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম জিয়া ছাড়া আর কোন কয়েদী ছিলেন না। ৩৮ একর জায়গার উপর অবস্থিত এই কারাগারে একমাত্র বন্দী ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার সাথে সমঝোতায় আসলে হয়ত তাঁকে এমন কারাবাস করতে হতো না, মন্ত্রিত্ব ও সংসদে আসন পেয়ে আরামেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তবুও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন।
এরপর দেশে শুরু হয় একের পর এক পাতানো নির্বাচন। সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শেখ হাসিনার একের পর এক আয়োজন করেন পাতানো নির্বাচন। ওইসব নির্বাচনের লক্ষ্যই ছিলো, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ভোটের বাইরে রাখা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তবে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে দিয়ে তাকে কারাবন্দী করা হয়। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হলেও, উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়নি বিদেশে। অবশেষে পাঁচ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার। দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিকতার অবসান হয়। দীর্ঘদিনের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হন বেগম খালেদা জিয়া। সফল হয় তার আন্দোলন-সংগ্রাম। দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় খালেদা জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে এক চুলও ছাড় দেননি। কোনো ভয় বা লোভের কাছে করেননি মাথা নিচু। শত অত্যাচারেও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। গণতন্ত্র ও ইসালামী মূল্যবোধের প্রশ্নেও বারবার তিনি নিজেকে দৃঢ় প্রমাণ করেছেন।
তাঁর রাজনৈতিক পথপরিক্রমা কখনোই সহজ ছিল না। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, প্রতিহিংসা, দীর্ঘ কারাবাস, গৃহবন্দি জীবন, অপপ্রচার, সবকিছুর মাঝেও তাঁর নীরব সংযম, রাজনৈতিক শিষ্টাচার এবং সহনশীল আচরণ তাঁকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক ব্যতিক্রমী মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। এমনকি মতাদর্শগতভাবে বিপরীতমুখী রাজনীতিকরাও অনেক সময় তাঁর ধৈর্য ও অভিজ্ঞতাকে স্বীকার করেছেন বার বার। এত নিপীড়নের পরও বেগম খালেদা জিয়া এই বয়সে এখনো অনড় সুদৃঢ় এবং অটল রয়েছেন। যদি তিনি আপোষ করতেন তাহলে কী হতো? তিনি এপর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন তার কিছুই হয়তো হারাতে হতো না। তবুও তিনি আপোষহীন, বাংলার প্রাণ। আপোষহীন হিসেবেই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চির অম্লান। এই মুহুর্তে যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ক্রান্তিকাল চলছে, দীর্ঘ দুঃশাসনের অবসানের পর নতুন পথচলা শুরু হচ্ছে তখন জনগণ এমন একজন অভিভাবকের প্রত্যাশা করছে যিনি অভিজ্ঞ, পরিণত, বিভক্ত রাজনীতিকে সংকুচিত করে ঐক্যের রেখা তৈরি করতে পারবেন। এই জায়গায় এসে বেগম জিয়ার অসুস্থতা একটি বৃহৎ শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। যা দেশবাসীর অনুভূতিকে তীব্র থেকে তব্রিতর করে তুলছে। তাঁর নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সংযম সবই আজকের অস্থির রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য মূল্যবান সম্পদ।
বাংলাদেশের ভগ্নদশার রাজনীতিতে বহু ঝড়ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করেই টিকে আছেন খালেদা জিয়া। তাইতো বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির এই ধ্রুবতারা এই রাজনীতিকের সুস্থতা এবং তাদের স্বপ্নের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অভিভাবকত্ব। খালেদা জিয়া শুধু কেবল একটি নাম নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনিবার্য অধ্যায়, যা নতুন প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই কখনো থেমে থাকে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে সুস্থতা দান করুন।

