নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অদ্য ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে টেলিটকের প্রযুক্তিগত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মানববন্ধনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনে সিদ্ধান্তের পরিপন্থি। একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে নতুন সররকারের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকও বিলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৭০০ ব্রান্ডের তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হোক।
বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসির বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের বিপক্ষে আমরা নই। ৭০০ ব্র্যান্ড তরঙ্গের ব্যবহারের বিপক্ষেও আমরা নই। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক কে বাইরে রেখে তরঙ্গ বরাদ্দের সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান একাই নব্বই শতাংশ লাভ করছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ৮ শতাংশ লাভে আছে। বাকি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ টেলিটক লোকসান গুনছে। এর মধ্যে যদি টেলিটক কে পিছিয়ে রাখা হয় তাহলে বাজারে প্রতিযোগীতা ধ্বংস হবে।

সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭০০ ব্র্যান্ডের তরঙ্গ টেলিটক কে বরাদ্দ দিতে হবে। যুক্ত হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (ইঞজঈ) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যান্ডা আন্তর্জাতিকভাবে মোবাইল কভারেজ ও ৫এ বিস্তারের জন্য ‘গোল্ডেন ব্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। এই ব্যান্ডের মোট ৪৫ মেগাহার্টজের মধ্যে প্রথম ধাপে ২৫ মেগাহার্টজ নিলামের ঘোষণা এবং বাকি ২০ মেগাহার্টজ ভবিষ্যতে চাহিদা ভিত্তিক বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি বিটিআরসি ও সকল অপারেটরের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয় যে আগামী ১৪ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। অভিযোগ উঠেছে, সভায় এক বেসরকারি অপারেটর প্রকাশ্যে টেলিটকের জন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের নিজস্ব অপারেটরকে বাদ দিয়ে বিদেশি মালিকানাধীন অপারেটরদের সুবিধা দেওয়ার এই প্রস্তাব বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদেশি মোবাইল অপারেটররা মুক্ত বাজারে সেবা দিলেও তখন কলচার্জ, ইনকামিং চার্জ, অব্যবহৃত ব্যালেন্স কেটে নেওয়া। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল। এমন বাস্তবতায় স্বল্প খরচে জনবান্ধব মোবাইল সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে টেলিটক প্রতিষ্ঠিত হয়। টেলিটক শুরুতেই কলচার্জ কমিয়ে আনায় বাধ্য হয় বিদেশি কোম্পানিগুলো। এটাই ছিল টেলিটকের প্রথম বড় অবদান।দেশে প্রথম অনলাইন ভর্তি আবেদন, চাকরির আবেদন, অনলাইন বিল পরিশোধের মতো জনবান্ধব সেবা চালু করে টেলিটক। বিদেশি অপারেটরদের যেখানে বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, সেখানে টেলিটক মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ সুবিধায় দেশের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম টেলিটকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের সবচেয়ে শক্তিশালী কভারেজ ব্যান্ড, যা কম টাওয়ারে বিস্তৃত এলাকা কভার করতে পারে এবং দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে স্থিতিশীল সিগন্যাল নিশ্চিত করে ৫এ বিস্তারের ভিত্তি তৈরি করে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় টেলিটক ইতোমধ্যে দুর্গম এলাকায় সেবা দিচ্ছে, কিন্তু সীমিত বিনিয়োগ ও কম সংখ্যক ইঞঝ নিয়ে দেশব্যাপী মানসম্মত নেটওয়ার্ক বজায় রাখা কঠিন। এই ব্যান্ড না পেলে গ্রামীণ জনগণ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে, সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে, দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিদেশি অপারেটররা অতিরিক্ত বাজার সুবিধা পাবে, সরকারি জরুরি সেবা বিঘ্নিত হতে পারে এবং বেশি টাওয়ার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তায় টেলিটকের অপারেটিং খরচ বাড়বে। যার প্রভাব গ্রাহক সেবার মান ও খরচ উভয় ক্ষেত্রেই পড়তে পারে। দেশের শীর্ষ টেলিকম বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্তকে “টেলিটকের জন্য মারাত্মক আঘাত” “জাতীয় অপারেটরকে বাজার থেকে সরানোর কৌশল” এবং “রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের ভাষায় “৭০০গঐু ছাড়া টেলিটকের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে বিপন্ন হবে। এটি কার্যত টেলিটকের মৃত্যুপরোয়ানার সমতুল্য।” টেলিটক শুধু একটি অপারেটর নয়; এটি দেশের প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীক। বাজারে ন্যায্যতা বজায় রাখা, গ্রামীণ মানুষকে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট দেওয়া এবং রাষ্ট্রের জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখতে টেলিটককে ৭০০ গঐু ব্যান্ড বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হচ্ছে তার প্রভাব পড়বে লাখো গ্রাহকের জীবনে, সরকারের ইসেবা বিস্তারে এবং দেশের টেলিকম নিরাপত্তায়।
উক্ত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, মানবাধিকার কর্মী সাধনা মহল, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ মোবাইলফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গ্রীন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু খানসহ প্রমূখ।

