নিজস্ব প্রতিনিধিঃন্যায্য নগর কেবল অবকাঠামোগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার প্রতিফলন। একটি ন্যায্য নগরে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে হাঁটতে বা সাইকেল চালাতে পারে এবং গণপরিসরগুলো ব্যবহার করতে পারে কোনো বৈষম্য ছাড়াই। হাঁটা ও সাইকেলে যাতায়াত শুধু পরিবেশবান্ধব নয়—এটি স্বাস্থ্যকর, সাশ্রয়ী এবং সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় এবং জনসাধারণের মতামতের প্রতিফলনের ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে একটি ন্যায্য নগর।
আজ ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, দুপুর ১২:০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “ন্যায্য নগর: হাঁটা ও সাইকেলবান্ধব পরিবেশের ভূমিকা” শীর্ষক অনলাইন টকশো’তে বক্তারা এ কথা বলেন্। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহা এর সঞ্চালনা এবং সংস্থার পরিচালক গাউস পিয়ারী এর সভাপতিত্বে আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর নগর পরিকল্পনাবিদ মো: মঈনুল ইসলাম, লেডিস অর্গানাইজেশন ফর স্যোশাল ওয়েলফেয়ার (লফস), রাজশাহী এর নির্বাহী পরিচালক শাহনাজ পারভীন, ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা), চট্টগ্রাম এর পরিচালক নাছিমা বানু, সোশ্যাল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইনক্রিজিং এনালাইসিস মুভমেন্ট (সিয়াম), খুলনা এর নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট মো: মাছুম বিল্লাহ এবং ব্র্যাক আইইডি’র আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের সিনিয়র ম্যানেজার এমারেল্ড উপমা বৈদ্য।
নাছিমা বানু বলেন, চট্টগ্রাম শহরটি ১৬০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বসবাস করে। শহরের মোট ১৫০০ কিলোমিটারের মত সড়ক রয়েছে, কিন্তু ফুটপাত রয়েছে ২৮১ কিলোমিটার। ভাঙ্গাচোড়া, পরিচ্ছন্নতার অভাব, অবৈধ স্থাপনা ইত্যাদির কারণে ফুটপাতে হাঁটার পরিবেশ নেই। মুরাদনগর ও নিউমার্কেটের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ফুটপাতেও একই দৃশ্য। তরুণদের মধ্যে সাইকেল চালানোর আগ্রহ থাকা সত্বেও নিরাপদ পরিবেশের অভাবে তা ব্যহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই।
মো: মাছুম বিল্লাহ বলেন, আমরা খুলনাকে স্বাস্থ্যকর নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হয়েছি। সম্প্রতি হেলদি সিটিস ফোরামের আওতায় খুলনার জলাধারসমূহ রক্ষা এবং পৃথক সাইকেল লেন তৈরির জন্য স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে ইতোমধ্যে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে একটি সড়কে সাইকেল লেন তৈরি করা হবে মডেল হিসেবে পরবর্তীতে অন্যান্য সড়কে তা বিস্তৃত হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা রেখে সড়ক উন্নয়ন, লাইট, সিসি ক্যামেরা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে।
শাহনাজ পারভীন বলেন, রাজশাহী বর্তমানে পরিবেশগত দিক থেকে অনেক সুন্দর, কিন্তু হাঁটা ও সাইকেলে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ বর্তমানে রাজশাহী শহরে নেই। ফলে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা যেকোন সামর্থ্যরে পথচারীরা সহজে হাঁটতে বা চলাচল করতে পারছে না। হাঁটা ও সাইকেলবান্ধব রাজশাহী শহর তৈরির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকারি, বেসরকারি সংস্থা সকলকেই একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মো: মঈনুল ইসলাম বলেন, আমাদের শহরগুলো আয়তনে বড় হচ্ছে, মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু যাতায়াতের জন্য যারা হাঁটা এবং সাইকেলকে বেছে নিচ্ছেন তাদের জন্য কোন সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না। নগরের সড়কগুলো কেমন হবে সেই বিষয়ে পরিপূর্ণ গাইডলাইন থাকা দরকার, যেখানে ফুটপাত ও সাইকেল লেনের প্রবিধান থাকবে এবং অন্তর্ভুক্তিতা নিশ্চিত হবে। বর্তমানে আমরা গণপরিসরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন একসঙ্গে কাজ করছি। নারায়ণগঞ্জে এখন পার্কে পার্কে হাঁটার জন্য ও সাইকেল রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। নগর পরিকল্পনার আওতায় নগরের সেই সকল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন যারা এই সব সুবিধা ব্যবহার করেন, তাহলে নগরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
এমারেল্ড উপমা বৈদ্য বলেন, আমাদের নগর পরিকল্পনায় শিশুদের প্রাধান্য দেয়া হয় না, কিন্তু তাদের হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ প্রয়োজন। আমাদের হাঁটা ও সাইকেল চালানোর উপযোগী শহরের পরিকল্পনা ও নকশা করতে হবে যেখানে প্রতিবন্ধকতাহীন হাঁটার পথ এবং সাইকেল চালানোর সুব্যবস্থা থাকবে। শহর ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নয়, সকল মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করে তাদের জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এর জন্য তাদের মতামত গ্রহণ, সে অনুযায়ী নকশা করা ও বাস্তবায়নে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই একটি সুন্দর, বাসযোগ্য ও ন্যায্য শহর গঠন সম্ভব।
গাউস পিয়ারী বলেন, খুলনা শহরে বর্তমানে আমাদের একটি কার্যক্রম চলমান আছে, যেখানে নগরে ন্যায্যতা নিশ্চিতে কি ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন তা এলাকাবাসী নিজেরাই চিহ্নিত করেছেন এবং তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে তুলে ধরেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি নাগরিকরা যেন তাদের প্রয়োজনীয়তাগুলো সমন্বিতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার সুযোগটি পায়। এ ধরণের ব্যবস্থা যদি প্রতিটি নগরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকে তাহলে ন্যায্য নগর নিশ্চিত হবে।

