রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : মানবজীবনের শেষ ও সর্বোচ্চ গন্তব্য জান্নাত। এই জান্নাতের শাশ্বত সুখ-শান্তি ও সৌন্দর্যের তুলনা পৃথিবীর কোনো বস্তু দিয়ে করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে মানুষ যত কষ্ট-তিতিক্ষা সহ্য করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে, তার পুরস্কার হবে এমন এক রাজ্য; যেখানে নেই রোগ, নেই দুঃখ, নেই মৃত্যুভয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সেই প্রথম দলের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য ও পরম শান্তির বর্ণনা দিয়েছেন, যা মুমিন হৃদয়কে প্রেরণা জোগায় এবং আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُوْرَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالَّذِيْنَ عَلَى إِثْرِهِمْ كَأَشَدِّ كَوْكَبٍ إِضَاءَةً قُلُوْبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ لَا اخْتِلَافَ بَيْنَهُمْ وَلَا تَبَاغُضَ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ لَحْمِهَا مِنْ الْحُسْنِ يُسَبِّحُوْنَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا لَا يَسْقَمُوْنَ وَلَا يَمْتَخِطُوْنَ وَلَا يَبْصُقُوْنَ آنِيَتُهُمْ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَأَمْشَاطُهُمْ الذَّهَبُ وَوَقُوْدُ مَجَامِرِهِمْ الأَلُوَّةُ
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে প্রবেশ করবে আর তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তারা অতি উজ্জ্বল তারার ন্যায় আকৃতি ধারণ করবে। তাদের অন্তরগুলো এক ব্যক্তির অন্তরের মত থাকবে। তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভেদ থাকবে না আর পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের দু’জন করে স্ত্রী থাকবে।
সৌন্দর্যের কারণে গোশ্ত ভেদ করে তাদের পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে। তারা রোগাক্রান্ত হবে না, নাক ঝাড়বে না, থুথু ফেলবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের আর চিরুনীসমূহ হবে স্বর্ণের।
তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ।’ (বুখারি, হাদিস: ৩২৪৬ )
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
এই হাদিসে জান্নাতের প্রথম দলের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার এক অপার্থিব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। সেখানে কোনো রোগ-ব্যাধি, বিবাদ বা ঈর্ষা থাকবে না—সবাই হবে এক অন্তরের, পরম শান্ত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। তাদের দেহ হবে এমন পবিত্র যে, সেখানে কোনো অপবিত্রতা বা ক্লান্তি স্পর্শ করবে না। এটি কেবল শারীরিক সৌন্দর্যের নয়, বরং আত্মিক পবিত্রতার প্রতীকও বটে।
জান্নাতের এ বর্ণনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার সামান্য ভোগ-বিলাসের চেয়ে পরকালীন চিরস্থায়ী সুখই প্রকৃত কাম্য, এবং সে সুখ অর্জনের একমাত্র উপায় হলো আল্লাহভীতি, সৎকর্ম ও তাওবা।
আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট ইবাদত—নামাজ, সৎকর্ম, মানুষে ন্যায়চর্চা, ঈর্ষা-হেয় প্রতিহত করা—এসবই ধীরে ধীরে সেই আলোকিত ব্যক্তিত্বকে গড়ে তোলে, যার প্রতিফলন পরকালে চাঁদের মতো উজ্জ্বল মুখে দেখা যাবে। তাই হাদিসটির সৌন্দর্যকে অনুধাবন করে জীবনকে সংশোধন করার আহ্বানই এই বর্ণনার মূল উদ্দেশ্য।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে নববী আদর্শের আলোকে জীবনাতিপাত করে জন্নাতের হকদার হিসেবে মাহন প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

