রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা ও উৎসাহ। নির্বাচনী মাঠে এখন জমজমাট প্রচার, সরব আলোচনা-সমালোচনা এবং তর্ক-বিতর্কে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন, জানাচ্ছেন একের পর এক প্রতিশ্রুতি। আবাসন সংকট নিরসন, গণরুম ও গেস্টরুম কালচারের অবসান, ফ্রি ইন্টারনেট, চিকিৎসা ও পরিবহন সুবিধা, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি রোধসহ নানা দাবি তুলে ধরা হচ্ছে নির্বাচনী এজেন্ডায়।
যদিও একই সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন পক্ষ।
প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ
গত ২৬ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে নির্বাচনী উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে প্রার্থীদের নিয়মিত প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, মুখোমুখি আলোচনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচার এবং পোস্টারিং ক্যাম্পাসে অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপগুলোতেও চলছে উত্তপ্ত আলোচনা, কখনো কখনো তা বিতর্কে রূপ নিচ্ছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘ডাকসু: দ্য স্টুডেন্ট ভয়েস’ শীর্ষক টকশোও যুক্ত হয়েছে প্রচারের অংশ হিসেবে, যেখানে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছেন, তর্ক করছেন, নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে ঝলমল প্রচারণা
প্রার্থীরা বলছেন, তারা নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও শিক্ষার্থীবান্ধব, নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে গড়ে তুলবেন। ভিপি প্রার্থী খালেদ আহমেদ বলেন, আমরা কোনো নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রতি পক্ষপাত করবো না। যোগ্যতা, দক্ষতা আর প্রস্তাবিত পরিকল্পনাই হবে আমাদের বিবেচ্য বিষয়।
২০১৯ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে পেছনে রেখে এবার ভোটাররা যেন আরও বেশি সচেতন এবং সক্রিয়। কেউ কেউ বলছেন, আগের নির্বাচনে যেমন সহাবস্থানের অভাব ছিল, এবার তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
আচরণবিধি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো প্রার্থী রঙিন পোস্টার লাগাতে পারবেন না, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ, এমনকি ব্যানারও নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা গেছে, কিছু প্রার্থী শুরুর আগেই দেয়ালে রঙিন পোস্টার লাগিয়েছেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।
ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং ছবি বিকৃতির ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। এমনকি এক প্রার্থীকে নির্ধারিত দোকানে রাতের খাবার বিতরণের অভিযোগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগেও ফেলা হয়।
ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৯ সালে নিজের ভোটটাও দিতে পারিনি। এবার আশাবাদী যে একটি সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হবে।
অন্য দিকে সাদিক কায়েম মন্তব্য করেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক রঙের বাইরে এনে জ্ঞানচর্চার জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে।
টাস্কফোর্স গঠিত, তবুও কার্যকর পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ডাকসু নির্বাচন কমিশন অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে। যদিও এ পর্যন্ত খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
শুধুমাত্র একজন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়াই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা অভিযোগগুলো যাচাই করছি। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা: সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন
সাধারণ শিক্ষার্থীরা চান, একটি অংশগ্রহণমূলক, সহনশীল ও স্বচ্ছ নির্বাচন। তারা বলছেন, প্রতিশ্রুতি নয়—প্রার্থী নির্বাচিত হলে বাস্তবায়ন দেখাতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন, প্রশাসন যদি সত্যিকারের নিরপেক্ষতা দেখায়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচন শুধু একটি ছাত্র সংসদের নির্বাচন নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চা, সহাবস্থান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বড় মঞ্চ। এখন দেখার বিষয়—প্রতিশ্রুতি ও তর্কের এই উৎসব শেষে সত্যিকার প্রতিনিধিত্বে কারা আসীন হন, এবং কতটা রক্ষা পায় নির্বাচনের আদর্শ ও নীতিমালা।
রুপসীবাংলা৭১/এআর