রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : দেশের অর্থনীতিতে ঐতিহ্যবাহী ফসল ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। মানিকগঞ্জের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চলতি মৌসুমে আশানুরূপ উৎপাদন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর মানিকগঞ্জে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন আশানুরূপ হলেও বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো পাটের হাট ভোর থেকেই জমে ওঠে। কৃষকরা নৌকা, রিকশা, ভ্যান ও ছোট ছোট যানবাহনে করে হাটে আনেন পাট। তাদের আনা সোনালি আঁশে ভরে ওঠে পুরো বাজার। বর্তমানে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। দাম মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও কৃষকের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ তেমন থাকছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। ঘিওরের কৃষক রায়হান বলেন, “পাট রোপণ, পরিচর্যা, কাটা, ধোয়া, শুকানো সব কাজেই প্রচুর শ্রম দিতে হয়। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, অথচ পাটের দাম বাড়েনি। ফলে লাভের অংশ প্রায় থাকেই না।”
অপর কৃষক নুর ইসলাম বলেন, “সারা বছর পরিশ্রম করেও ন্যায্য দাম পাই না। দেশে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করলেই কৃষক উপকৃত হবে।”
এদিকে পাটের হাট নিয়ে হাটের ব্যবসায়ী ও পাইকাররা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, দেশের অভ্যন্তরে পাটকলগুলোতে চাহিদা থাকায় আশপাশের জেলা থেকেও ঘিওর হাটে পাট নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এই হাট থেকে পাটের যোগান পায় নারায়াণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার পাটকলগুলো। অথচ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নেই কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। হাটের রাস্তা-ঘাটও খুবই খারাপ।
হাটের ইজারাদার মো. কাউসার বলেন, “টিউবওয়েল বা টয়লেট না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ভোগান্তিতে পড়েন। রাস্তাও খারাপ। এগুলো ঠিক করা হবে শিগগিরই।”
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, “সোনালি আঁশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে শুধু উৎপাদন নয়, ন্যায্য দাম ও বাজার নিশ্চিত করাও জরুরি। সরকার প্রণোদনা, রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করলে আবারও পাট হতে পারে কৃষকের সুখ-সমৃদ্ধির প্রতীক।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, “পাট রপ্তানি বাড়াতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। কৃষকদের জন্য প্রণোদনার বিষয়টিও সরকারকে জানানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা বাড়াতে হবে।”
রুপসীবাংলা৭১/এআর