নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ২৬ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১১:০০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে “বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র-২০২৪ – সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন’’ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যালএইড সম্পাদক রেখা সাহা এবং লিগ্যাল এডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদার।
সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন কালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান বলেন, বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র-২০২৪ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃতি, বর্তমান অবস্থা ও প্রভাবসমূহের একটি সুস্পষ্ট চিত্র উপস্থাপন করেছে। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, গৃহকর্মী নির্যাতন ও সাইবার অপরাধ এই আট ধরণের নির্যাতনের মাত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত সহিংসতার খবরে বেশি পরিলক্ষিত হওয়ার কারনে এগুলো নিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর কন্যারা বেশি ধর্ষণের ঘটনার মত যৌন সহিংসতার শিকার। অপরাধী ও ভুক্তভোগী উভয়ই তরুণ বয়সের। এই বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে অল্প বয়সী তরুণরা যৌন সহিংসতার মত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। তিনি এসময় সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ শেষে ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন ধর্ষণের ঘটনার পর ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা , মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করা এবং সালিশের মাধ্যমে অভিযুক্তের শাস্তি নিশ্চিতের পরিবর্তে আপোষের চেষ্টা করা হলেও ভুক্তভোগীর মামলা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সামাজিকভাবে প্রতিবাদের তৎপরতা ও উদ্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমীক্ষা তথ্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যালএইড সম্পাদক রেখা সাহা এবং লিগ্যাল এডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদার বলেন, সহিংসতার ঘটনায় নানা ভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা রোধে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর জোর দিতে হবে। শিশুরা যে ঘরে বাইরে অনিরাপদ তা সমীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিভাবে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সেবিষয়ে আমাদের এখন মনোযোগী হতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রবণতা কোন ধরনের তা ছিলো সমীক্ষার উদ্দেশ্য। ধারাবাহিক ভাবে সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তৃণমূলে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা গণমাধ্যমে বেশি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে সামাজিক ব্যবস্থা উন্মুক্ত হওয়ার কারণে ঘটনা গোপন রাখা সম্ভব হয় না। সংগঠনের উদ্যোগে সহিংসতার ঘটনায় মামলা পরিচালনায় দেখা গেছে ৯৮% মামলায় সফলতা এসেছে, তবে এখানে দীর্ঘসূত্রিতা আছে। একেকটি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হতে ২৫-২৬ বছর সময় লেগেছে।
মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যায় নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলনের ব্যাপ্তি বেড়েছে, এখানে সকলকে সাথে নিয়ে নারী নির্যাতনকে প্রতিরোধ করতে হবে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হলে উপজেলা, তৃণমূলে তার প্রভাব বেশি পড়ে, ফলে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটে। সমীক্ষায় অপরাধী ও ভিকটিমকে অল্প বয়সের দেখা গেছে, এটা ভালো সমাজ গড়ে তোলার পথে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। যে যুবক ধর্ষণের ঘটনায় একবার জড়িয়ে যায় সে বার বার একই ঘটনায় লিপ্ত হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা অপরাধের সাথে জড়িত। ক্ষমতাসীন ও অপরাধীর টুইনিং ভাঙা জরুরি। নারী বিদ্বেষী যে আবহ বর্তমানে তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে তা নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, সমাজের অপরাধপ্রবণতায় নারী ও শিশু হয়ে উঠছে প্রান্তিক গোষ্ঠী, ফলে সমাজে অস্থির অবস্থা তৈরি হলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেশি ঘটছে। পরিস্থিতির উত্তরণে নারী বিদ্বেষী সংস্কৃতির পরিবর্তে নারীবান্ধব সংস্কৃতি গড়তে গণমাধ্যমকে জোরদার ভূমিকা পালনসহ এই সম্পর্কে আলোচনা বহাল রাখার কথা বলেন। পাশাপাশি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণমাধ্যম ও নারীআন্দোলনকে একত্রে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
উক্ত তথ্য উপস্থাপন কর্মসূচীতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, বাংলাদেশ পরিষদের নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী এবং কর্মকর্তগণ উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও গবেষণা পরিচালক শাহজাদী শামীমা আফজালী