রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন ভবনে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানির সময় হাতাহাতির মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা।
তিনি বলেছেন, “১৫ বছরে যেটা হয়নি, আজ সেটাই হলো; অলমোস্ট আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়েছি, তারাই আমাকে ধাক্কা দিল।”
রেিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে শুনানিতে নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন অপেক্ষ ব্যক্ত করেন রুমিন ফারহানা।
তিনি বলেন, “কমিশনে আমি ভদ্রলোক নিয়ে এসেছি, গুন্ডা নয়। কিন্তু তারা আবোল–তাবোল বলে যাচ্ছিল। শেষ দিকে আমি বক্তব্য দিতে দাঁড়ালে আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়। আমার লোকজনকে মারধর করা হলে তারাও প্রতিউত্তর দিয়েছে।”
রুমিন ফারহানার বলেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সব সময় বলেছেন, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সীমানা ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের সুবিধায় নির্ধারণ করেছে।”
“আমরা চাই, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া হোক। বর্তমান সীমানায় ভোটার সংখ্যায় ভারসাম্য নেই। আমাদের আসনে ভোটার প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, বিজয়নগরে ৬ লাখ ১০ হাজার আর সদরে ৬ লাখ। সরাইলের সঙ্গে যদি বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর ইউনিয়ন যুক্ত হয়, তবে ভোটার সংখ্যায় ভারসাম্য তৈরি হবে,” যোগ করেন তিনি।
ইসিতে রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে এনসিপির অভিযোগ
শুনানির সময় হাতাহাতির ঘটনায় রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ দায়ের করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রবিবার বিকালে ইসি সচিব বরাবর এই অভিযোগ করেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ।
অভিযোগপত্রে আতাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমার নির্বাচনি এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেখানে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংযুক্ত করলে এলাকাবাসী সংক্ষুব্ধ হয়। তাদের অনুরোধে এবং তাদের পক্ষে আমি নির্বাচন কমিশনে সীমানা নির্ধারণের বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করি। এরপর থেকেই বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার ক্যাডাররা আমাকে আপত্তি-সংক্রান্ত শুনানিতে অংশ না নেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়।”
তিনি বলেন, “আমি ও আমার এলাকার প্রতিনিধিরা আজ নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে এলে আপনার (ইসি সচিব) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আমাকে শুনানিস্থলে প্রবেশে বাধা দেন। পরে আমি শুনানি শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রবেশ করতে সক্ষম হই।”
ঘটনার ধারাবাহিক বর্ণনায় আতাউল্লাহ বলেন, “এমতাবস্থায় আপনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতে রুমিন ফারহানার সন্ত্রাসী বাহিনী আমিসহ আমার নির্বাচনী এলাকার নেতাদের মারধর করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকল।”
“স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলেও নির্বাচন কমিশনে কমিশনারদের সামনে কেউ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে এমন নজির নেই। এর মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতাও প্রমাণিত হলো এবং একটি জাতীয় নির্বাচনে আপনারা কী ভূমিকা পালন করতে পারবেন তার একটি পরীক্ষা হয়ে গেলো,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, “উল্লেখ্য, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রুমিন ফারহানার সন্ত্রাসী ক্যাডাররা যখন আমিসহ এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা চালাচ্ছিল, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিবৃত্তচিত্তে গালে হাত দিয়ে মঞ্চে বসা ছিলেন।”
“প্রায় দুই হাজার শহীদ ও ৩০ হাজার আহত যোদ্ধার অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি, যে বাংলাদেশ হবে ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে আপনি সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং কমিশনাররা তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ আজ বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার কর্মকাণ্ড এবং আপনাদের অবস্থান হাসিনার শাসনামলকেও হার মানিয়েছে। এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা,” বলেন আতাউল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, “ফ্যাসিবাদী কালো আইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আহ্বান- রুমিন ফারহানাসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য যথাযথ ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকারের জনগণের একটি কমিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আপনারা যদি নিরপেক্ষ থাকতে না পারেন তাহলে প্রয়োজনে পদত্যাগ করে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবেন।”
রুপসীবাংলা৭১/এআর