স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসা পেশা বাদ দিয়ে ভূমি আত্মসাতের কাজে নিজেকে বেশি ব্যস্ত রাখার অভিযোগ উঠেছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার কানারচর গ্রামের মো. নোয়াব আলীর পূত্র দন্ত চিকিৎসক মো. ফখরুল হাসান স্বপনের বিরুদ্ধে।
হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড, সিংগাইর রোড ‘ফিরোজা ডেন্টাল কেয়ার নামে ক্লিনিক রয়েছে ফখরুল হাসানের। প্রতিষ্ঠানটি ফখরুল হাসান ও তার স্ত্রী আকতার পরিচালনা করে আসছেন। ক্লিনিকে তারা উভয়েই বিডিএ (ডিইউ), ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন পদবী দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। সেখানে ফখরুল হাসানের বিএমডিসি রেজি: নং ৯৫২৯ ও স্ত্রী ফারজানা আকতারের বিএমডিসি রেজি: নং ৯৫২৮ দেওয়া আছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডা. ফখরুল হাসান স্বপনের শ্যালক হুমায়ুন কবির নিজে এমবিবিএস ডাক্তার না হয়েও এলাকায় নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতেন। স্থানীয় লোকজনদের চাকরীর লোভ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এখন আমেরিকার নেভাদায় বসবাস করছেন। হুমায়ুন কবির ও ফখরুল ইসলাম ভূমি আত্মসাৎ চক্রের ও মূল হোতা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, হুমায়ুন কবির তা বোন জামাই দাঁতের ডাক্তার ফখরুল হাসানকে দিয়ে এলাকার আরও কয়েকজন টাউট বাটপারদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। স্থানীয়রা কোন জমিজমা বিক্রি করতে গেলে তাদের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। তা না হলে এই চক্র জাল জালিয়াতি করে মামলা মোকদ্দমায় জড়াইয়ে মানুষকে হয়রানী করে।
তারা বলেন, হুমায়ুন কবির ও ফখরুল হাসান আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। এখনও হুমায়ুন কবির এর সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক আইডি থেকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন আমেরিকা বসে। বিগত সরকারের আমলে প্রভাব বিস্তার করে এলাকার অনেক মানুষের সঙ্গে প্রতারনা করেছেন। চরিত্রহীন হুমায়ুন কবির প্রতারনার মাধ্যমে তিনটি বিয়েও করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরই তিনি আমেরিকা চলে যান।
ভূমির দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্রের সূত্রে জানা যায়, ভূমি মালিক- সালাউদ্দিন কাদের, আলাউদ্দিন রাজীব ও মামতাজ আরা পান্না, সর্বমাতা- বিলকিস আক্তার। সালাউদ্দিনের পিতা মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নাবালক রেখে যান। সালাউদ্দিনের চাচার সঙ্গে তাদের মা বিলকিস আক্তারের লিগ্যাল গার্ডিয়ানশীপ মামলা হয়, মামলায় বিলকিস আক্তার রায় পান। সংসার চালাতে ও নিজরে অন্যান্য প্রয়োজনে তার সম্পত্তি থেকে কিছু সম্পদ বিক্রি করেন। সন্তানরা নাবালক থাকা অবস্তায় তার মা বিলকিস আকতার যে সম্পদ বিক্রি করেছেন তার মধ্যে কিছু সম্পদ স্থানীয় মো. বাদশা মিয়া বিলকিস বেগমের অনুমতি পাওয়ার বলে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে নাবালক সালাউদ্দিন সাবালক হয়ে বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে বিক্রিত জমি বাতিলের জন্য মামলা করেন। মামলা নং ৫৯৯/২০১২। আদালত বাদশা মিয়ার পক্ষে ২০১৮ সালে রায় দেয়।
হুমায়ুন কবির সালাউদ্দিনের চাচাতো বোন জামাই। সালাউদ্দিন প্রতারনা করে তার শাশুড়ী নিকট থেকে সম্পদ লিখে নিয়ে এক পর্যায়ে স্ত্রীকে (সালাউদ্দিনের চাচাতো বোনকে)তালাক দেন বলে জানান স্থানীয়রা। হুমায়ুন কবির বিভিন্ন চাপের মাধ্যমে সালাউদ্দিন ও তার ভাই বোনের নিকট থেকে ফখরুলের নামে পাওয়ার নিয়েছেন যা ত্রটিপূর্ণ। পাওয়ারটি নেওয়া হয়েছে মূলত: বাদশা মিয়ার মাধ্যমে বিলকিস আক্তারের বিক্রিত সম্পদ ক্রেতাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য। কিন্তু সালাউদ্দিনের মা বিলকিস আক্তার ফখরুলের নামে পাওয়ার দেন নাই।
উল্লেখ এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা নং ৫৯৯/২০১২ হলে তার রায় বাদশাহ মিয়া পান। ফখরুল হাসান উপকমিশনার ভুমির নিকট বাদশা মিয়া ও জমি ক্রেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালতের রায় বাদশা মিয়ার নামে থাকার পরেও এ মামলা উপকমিশনার ভূমি নেওয়ার নিয়ম নেই। নিয়ম অনুযায়ী আপিল করলে উচ্চ আদালতে করতে হয়। উপকমিশনার ভুমিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘুষ দিয়ে মিসক্যাসের রায় নেন ১৯/০২/২০২৫ তারিখে বলে জানান ক্রেতাগণ। জমির খাজনা পরিশোধ করে কিছু জমি হুমায়ুন কবিরের নামে বিক্রি করেন ফখরুল। বিষয়টি জানতে পেরে বিবাদীগণ এডিসি রেভিনিউতে রায়ের পূনর্বহাল বিবেচনার জন্য আবেদন করলে উপকমিশনার ভুমির রায় স্থগিত করে এডিসি রেভিনিউ মামলার শুনানীর জন্য গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় উক্ত জমি ফখরুল হাসান দখলের চেষ্টা করেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে উপকমিশনার ভূমি রায় হবার আগেই ফখরুল হাসান জমি ক্রেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিবাদীদের সঙ্গে কোনপ্রকার কথা না বলে ফখরুর হাসানের পক্ষে একতরফা প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলায় যে তিনটি তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে ১২ জুন ২০২৪ইং বিবাদীদের অনেকেই তাদের কর্মস্থল অফিসে ছিলেন। ১৩ জুলাই ২০২৪ইং তারিখ শনিবার বিবাদীগণের তালিকা অনুযায়ী ৪-১২ বিবাদীগণ অফিসিয়াল আদেশে ব্যাংকার্সদের নিয়ে আয়োজিত ফুটবল খেলা দেখতে আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভূমি গ্রহীতাগণ বলেন, আমরা ব্যাংকে চাকরি করি। আমরা কাগজপত্র দেখে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ২৮/০৭/২০১৯ তারিখে রাশিদা আক্তার ও ফেরদৌসী আক্তার থেকে জমি কিনেছি। উক্ত জমি তারা ০৫/০৪/১৯৯৮ সালে বাদশা মিয়ার নিকট থেকে জমি কিনেছে। পরে শুনতে পাই হুমায়ন কবির ও ফখরুল হাসান নামের এক দন্ত চিকিৎসক এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তারা আমাদের জমিতে তাদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা হামলার ভয় দেখায়। আমরা এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তারা জমির প্রতারক চক্র এবং তারা স্থানীয় গুন্ডা-পান্ডা ভাড়া করে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এভাবেই জমি আত্মসাত করে থাকে। আমাদের বিরুদ্ধে তারা একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। মামলায় উল্লেখ করেছেন; আমরা নাকি তাদের মারধর করেছি। পুলিশের তদন্তকারী মোটা অংকের ঘুষ খেয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ না করে সে মামলার একতরফা প্রতিবেদন আমাদের বিরুদ্ধে দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে তার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে দেখা যায় তার চেম্বার বন্ধ এবং প্রায় তার চেম্বার বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে দন্ত চিকিৎসক ফখরুল হাসানের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। জমি আমার নানার জমি, জমির ব্যাপারটা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলতে পারবো না।