ইকবাল হোসেনঃ বুধবার ১৪ আগষ্ট আফতাব নগর পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি হেড অফিসের সামনে ডিপ্লোমা এসোসিয়েশন ও পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিবাদ ও মানবন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা আওয়ামী দুঃশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরেন।
মোঃ এম সেলিম বলেন,পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি (পাওয়ার গ্রিড) বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর অধীন একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা হিসাবে সফলভাবে গত প্রায় তিন দশক যাবৎ বাংলাদেশের বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড এর বিনির্মাণ এবং সংরক্ষণের কাজ সফলভাবে করে আসছে। এখানকার কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা এবং কর্মতৎপরতার দৃষ্টান্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে যাহা সুধী মহলে খুবই প্রসংসিত।তথাপিও সারা দেশের ন্যায় গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী সরকারের কালো থাবা হতে সংস্থাটি রেহাই পায়নি। বিগত স্বৈরশাসনের আমলে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত Power Grid এর বোর্ডের অবৈধ পরিচালকগন নানা রকম অপকর্ম, আর্থিক লুটপাট, অবৈধ নিয়োগ এবং প্রমোশন বাস্তবায়ন করে গেছেন। যাহা দেশের বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের পরিচালন সংস্থা এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি সংস্থা হিসেবে মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। তাই ছাত্র জনতার বিজয়ের এই দিনে সংঘঠিত এসকল অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অবৈধ নিয়োগ-প্রমোশন, চাকুরিচুত্যির মতা জগন্য কাজকে এখনই প্রতিহত করে দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতার জন্য সুন্দর, সাবলীল, পরিচ্ছন্ন Power Grid বিনির্মাণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে Power Grid এর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া কিছু জুলুম-অত্যাচারের সারসংক্ষেপ এবং প্রস্তাব উপস্থাপিত হল।
বক্তারা পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ এর সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
১. স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর Power Grid এর বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ (সাবেক অবৈধ এমপি, জামালপুর- ৫ ও তৎকালীন মুখ্য সচিব) এর একতড়ফা নেতৃত্বে কোনো রকম কারিগরি গবেষণা ব্যতিরেকে বোর্ড সভায় বিবিধ আলোচনায় উত্থাপন করে Power Grid এর সকল সঞ্চালন লাইনে কনভেনশনাল কন্ডাক্টর ব্যবহারের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যের Aluminum Conductor Composite Core (ACCC) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে বিগত ০৮ বছরে উক্ত কন্ডাক্টর ব্যবহার করার মাধ্যমে দেশের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। আর উক্ত অর্থ স্বৈরাচারী হাসিনার চিহ্নিত দালালরা পাচার করে নিয়ে গেছে। আজকের এই দিনে আমরা এই দালালদেরকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
২. Power Grid কর্তৃক Optical Fiber Commercial Leasing সৃষ্টি এবং লোকবল নিয়োগ করে উক্ত দপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি প্রস্তুতকরা করা সত্ত্বেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসররা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইনার অ্যাট হোম নামক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক সুবিধা প্রদানের জন্য শেষ মুহূর্তে খুনি হাসিনার মুখ্য সচিব জনাব কায়কাউস আহমেদ এবং সামিট গ্রুপের এডভাইজার সেই কুখ্যাত আবুল কালাম আজাদ (সাবেক অবৈধ এমপি, জামালপুর-৫) পিজিসিবির ব্যান্ডউইথ লিজিং এর ভাড়া প্রদাণের কার্যক্রমটি বোর্ড সভার মাধ্যমে স্থগিত করে দেয়। ছাত্র জনতার বিজয়ের এই দিনে আজকে আমরা সেই স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর যথাযথ বিচার এবং সরকারি উক্ত প্রকল্পের আউটপুট হতে জনগণকে কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
৩. Power Grid এর তৎকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব আবুল কালাম আজাদ (মুখ্য সচিব) এবং তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক (এইচআরএম) জনাব মোহাম্মদ শফিকুল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব) এর সময়কালে সার্ভিস রুলকে চরমভাবে অমান্য করে ছাত্রলীগের কর্মীদের ভুয়া অভজ্ঞিতার সার্টিফিকেট তৈরী করে তাদের চাটুকার কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া এবং দলীয় কর্মী ববিচেনায় পদোন্নতি প্রদাণ করা হয়ছে। এসকল বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বশষে আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মী বিবেচেনায় নিয়োগের পথ সুগম করা এবং নিয়োগ বানিজ্য করার জন্য Power Grid কর্তৃক সম্প্রতি গঠিত নিয়োগসেলের মাধ্যমে নিয়োগ কার্য সম্পাদন না করে; পূর্বের ন্যায় বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ কাজউ সম্পন্ন করা।
৪,পাওয়ার গ্রিড এর বোর্ডের এসকল অবৈধ বোর্ডে চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন ক আই কিছু চাটুকার কর্ম কর্তা (যারা আজও স্বৈরাচার হাসিনার গোলাম পড়িচয়ে কর্মরত রয়েছে) এর যেশ বিরোধী এসকল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় ইতোপূর্বে অনৈতিক এবং আইন বহির্ভুত ভাবে দিমতের রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়ে রাজাকারের সন্তান ট্যাগ লাগিয়ে কোম্পানির চাকুরি হতে ছাটাই করা হয়। এমন কি সেসময় এ সকল কর্মকর্তারা আনালতের দ্বারস্থ হলে সেখানেও তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ সরকারের এএএসআই সহ অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে দেশ প্রেমিক এসকল অফিসারদেরকে দেশদ্রোহী, জঙ্গী-গোষ্ঠী বানিয়ে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সংগীত আইনজীবী এটর্নি জেনারেল কে ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে স্থায়ীভাবে চাকুরীচুত্য করে। আজকে দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতার বিজয়ের এই দিনে আমরা দেশের জন্য ত্যাগী এসকল অফিসারদের চাকুরীতে ফিরে পেতে চাই।
৫. অবৈধ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কেরাণীগঞ্জের হাউজিং এর উপর হতে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন অপসারন করে আন্ডারগ্রাউন্ড করার লক্ষ্যে Power Grid এর সংশ্লিষ্ট কারিগরী টিমের বাধাকে উপেক্ষা করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে গ্রাম ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশন হতে প্রকল্পের পিডিপিপি অনুমোদন করিয়ে নেয়। সরকারের আর্থিক অপচম রোখে দ্রুত এই প্রকল্পকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন।
,৬. Power Grid এর নিয়োগ কার্যক্রমের Interview Board এ পরিচালক পর্ষদের সদস্যগণের অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকতে হবে। দলীয় লেন্দুরভিত্তিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্ত করে সময়োপযোগী সুশিক্ষিত নির্দলীয় বোর্ড গঠন করতে হবে।
৭. Power Grid এর প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় Conflict of Interest পরিহার করার লক্ষ্যে কোম্পানির পরিচালক পর্ষদে মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি (সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব অংশগ্রহণ রহিত করতে হবে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনা করতে হবে। কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। Power Grid এর Operational Activities এ পরিচালক পর্ষদের সদস্যগণের জড়িত হওয়া থেকে দিরন্ত থাকতে হবে।
৮,Optical Fiber Commercial Network দপ্তরে লোকবল নিয়োগ এবং উক্ত দপ্তরের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক দরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে Optical Fiber Commercial Network দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ আছে। উক্ত দপ্তর সমূহে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সুশাসন আনয়ন করা জরুরী।
. ৯,Operational Activities এর Management Level এ অথাৎ Executive Director, HRM এবং Executive Director, Finance পদে এ মন্ত্রণালয় হতে লোকবল পদস্থ করা বন্ধ করতে হবে।
১০. জনস্বার্থে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ সুরক্ষার লক্ষ্যে Power Grid এর সর্বক্ষেত্রে Corporate Governance নিশ্চিত করতে হবে।
১১. সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার, দেশের যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তখন বিদ্যুৎ বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভারতে অবস্থান করতেছিলো। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ের জন্য তারা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতের কাতিহার-বরনগর ৭৬৫কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করতেছিলো। উক্ত লাইনটি করলে বাংলাদেশের কোনো লাভ হতো না বরং লাইন করার কারণে ভারতকে প্রায় ১৩০ কিমি দৈর্ঘ্যের করিডোর দিয়ে দিতে হতো। উক্ত করিডোরের প্রস্থ হতো প্রায় ১০০ মিটার। এর ফলে দেশের অনেক মানুষের বাড়ি ঘর এবং জমির ক্ষয়ক্ষতি হতো। প্রধানমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ, পাওয়ার সেলের মহা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জড়িত। এখানে উল্লেখ্য যে, এইসব কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে ছিলো, তাদের পরিকল্পনা ছিলো সরকারের এই দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্রে তারা সহায়তা করে চাকরি আবসর পরবর্তী চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্তি। অথচ Power Grid বাংলাদেশ এর জুনিয়র লেভেলের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা বিগত ১৫ বছর যাবত বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ভারতের এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বুঝিয়ে বাধা প্রদাণ করে যাচ্ছে।
উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মোঃ এম সেলিম, ইন্জিনিয়ার আলমগীর কবির, মোর্শেদ আহমেদ, বাবার আলী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।