রুপসীবাংলা ৭১ অন্যান্য ডেস্ক : বয়স মাত্র ৩৮, কিন্তু এই বয়সেই থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক নারী। অল্প বয়সেই সব ছেড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তেই ভাইরাল হয়েছেন তিনি। তার নাম মিস ইয়াং।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তরুণী, তা জানতে আগ্রহী সবাই। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তরুণী জানিয়েছেন, প্রেমের টানে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পরেই সম্পর্ক ভেঙে দেন প্রেমিক। বের করে দেন বাড়ি থেকে।
এ পরিস্থিতিতে ভাড়াবাসায় থাকতে শুরু করেন তিনি।
একদিকে সম্পর্ক ভাঙার বেদনা, অন্যদিকে টানা দুই মাস ভাড়া বাসায় থাকার অর্থনৈতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন ইয়াং। এই অবস্থায় স্থায়ী সমাধানের জন্য ফুফুর কাছে পরামর্শ চাইতে যান তিনি। ঘটনাক্রমে তার ফুফু থাকেন একটি রিটায়ারমেন্ট হোম বা বৃদ্ধাশ্রমে।
তখন ফুফুই তাকে পরামর্শ দেন, যাতে তিনি সেই বৃদ্ধাশ্রমে থেকে যান। ইয়াং প্রথমে দ্বিধায় পড়েন। একে তো বয়সের সীমা, অন্যদিকে এমন বৃদ্ধ মানুষদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে কি না, তাই নিয়ে তার উদ্বেগ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ফুফুর পাশের ঘরটিতে থাকতে চেয়ে আবেদন করেন ইয়াং।
ইয়াং ভেবেছিলেন তার আবেদন হয়তো গ্রহণ করা হবে না।
কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ছয় সপ্তাহ পর তার আবেদন মঞ্জুর করে কর্তৃপক্ষ। তিনিও দ্বিধা সরিয়ে রেখে সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সঙ্গীদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও, ইয়াং জানান, এই সিদ্ধান্ত তাকে শান্তি এনে দিয়েছে। পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রম অনেক সাশ্রয়ী। ব্যস্ত শহুরে জীবনের ইঁদুরদৌড়ের মাঝে এই আশ্রয় যেন এক ধীর গতির নীড়। আর এমন তাড়াহুড়োহীন জীবনই চেয়েছিলেন তিনি।
জীবনের এক অস্থির অধ্যায়ের মাঝে এমন সাদামাটা গতিহীন জীবনই তার মনকে শান্ত করেছে। ইয়াং-এর দাবি, এই বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর তিনি যেন একটি বড় পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছেন। যেদিন প্রথম আসেন সেদিনই বৃদ্ধ প্রতিবেশীরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এমনকি দুই বয়স্ক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে তার বিছানা ও টিভি স্ট্যান্ড জোড়া লাগিয়ে দেন বলেও জানিয়েছেন ইয়াং।
প্রবীণদের মাঝে বাস করা যেন শাপে বর হয়েছে ইয়াং-এর জন্য। শান্ত পরিবেশ তার মনকে শান্তি দিয়েছে, আবার শহরের দৌড়ঝাঁপ কিংবা সর্বক্ষণ প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত নেই সেখানে। এই ধীর গতির জীবন তার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাকে আরো শান্ত ও মনোযোগী করেছে।
প্রাথমিকভাবে যেটাকে অস্থায়ী বাসা ভেবেছিলেন, সেটাই এখন হয়ে উঠেছে তার সত্যিকারের প্রিয় বাসস্থান। আর এখানের সবকিছুই তিনি পাচ্ছেন অত্যন্ত কম খরচে। যেখানে শহরে বাড়িভাড়া করে থাকতে তার মাসে ২০০০ ডলার খরচ করতে হতো, সেখানে মাত্র ৩০০ ডলারে বৃদ্ধাশ্রমে থাকছেন তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইয়াং জানিয়েছেন, এখন তার সকাল শুরু হয় রেকর্ড প্লেয়ার থেকে ভেসে আসা পুরনো দিনের গান শুনে। তারপর কফি খান, যোগব্যায়াম করেন কিংবা সাইকেল চালান। আবার কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় বৃদ্ধাশ্রমের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা, ছোটখাটো খেলাধুলা কিংবা গান গেয়ে সময় কাটান।
রিটায়ারমেন্ট হোমে থাকার পর থেকে বার্ধক্য নিয়েও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে ইয়াং-এর। প্রাণবন্ত ও সুখী প্রবীণদের মাঝে থেকে তিনি আর বয়স বেড়ে যাওয়ার ভয় পান না। বরং, এখন তিনি বার্ধক্যকে জীবনের এক আনন্দময় ও অর্থবহ অধ্যায় বলে মনে করেন। তার কথায়, এটি এক ধরনের আশ্রয়স্থল, একটি জায়গা, যা নতুন করে শান্তি ও আত্মীয়তার অনুভূতি দেয়।
সূত্র : আজকাল
রুপসীবাংলা ৭১/এআর